উত্তম নীতিচর্চায় জীবন চর্চা করি। জন্মদিন হবে সার্থক ইনশাল্লাহ

ড. মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, নরসিংদী
১০ নভেম্বর ২০১৪ দক্ষিণ কোরিয়াতে তাসিন হোসেন লাবিদের জন্ম। দিনটিতে ওর কাছে না থাকলেও দোয়ার প্রার্থনায় যেন মনে হয় নিকটেই রয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তাসিনের জিম্মাদার হয়ে যাক। বাবা হিসেবে প্রিয় পাঠকদের কাছে দোয়ার দরখাস্ত রইল।

জন্মদিন শুরু হয় জন্মের দিন থেকে। এটি শুরু হয়েছে আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় রুহানি জগতে, পিতার ঔরস্যে মায়ের পেটের জগতে, আবার শুরু হবে পরকালের জগতে। জন্মদিন—শুধু একটি তারিখ নয়, এটি সম্পূর্ণ জীবন জগতের প্রতিটি স্থানের প্রারম্ভিকতা যাত্রাকাল। লওহে মাহফুজ থেকে ক্যালেন্ডারে এটি এক অনন্য স্মরণিকা । এই দিনেই আল্লাহ পাকের রহমতে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখি, প্রথমবার নিঃশ্বাসে নিই জীবনের সুরভি। আল্লাহপাক বলেন,
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ
''আল্লাযী খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়া-তা লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহছানু‘আমালাওঁ ''
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম?

তাই,প্রতিটি জন্মদিন মনে করিয়ে দেয়, কবর অতি সন্নিকটে। তাইতো প্রশ্ন তুলেন জ্ঞানীরা আমলের খবর কি?? । এই দিনে আমরা পাই মায়ের চোখের আশীর্বাদ, বাবার মিষ্টি হাসি, আর বন্ধুদের উচ্ছ্বসিত শুভেচ্ছা। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, জন্মদিন কেবল উৎসব নয়; এটি আত্মদর্শনের দিন। আমরা ফিরে দেখি পেরিয়ে আসা সময়কে ভুলগুলোকে, সাফল্যগুলোকে, আর নতুন করে শুরু করার ইচ্ছাটাকে। এই দিন আমাদের শেখায়, প্রতিটি প্রভাত নতুন একটি সম্ভাবনা, প্রতিটি বছর জীবনের আরেকটি অধ্যায়। মনে রাখতে হবে আল্লাহ পাকের সেই বানী আমলের দিকে কে শ্রেষ্ঠ?? আমরা মনে করি, কেউ কেক কাটে, কেউ ফুল ছুঁয়ে প্রার্থনা করে, কেউ নীরবে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ জানায় সৃষ্টিকর্তাকে “আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, ভালোবাসতে শেখানোর জন্য।”

জন্মদিন যেন জীবনের প্রতি এক অন্যনরম কৃতজ্ঞতা যেখানে হাসি, প্রার্থনা ও ভালোবাসা মিলেমিশে এক সুন্দর সুর তোলে, যার নাম জীবন। জীবনের স্বার্থকথা তখনই সুন্দরতর হবে- কবর, হাসর, পুলসিরাত, কান্তরা চেকপোস্ট এবং এই দুনিয়া যখন হাসানাত এবং উত্তম নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। সেটিই তো জন্মদিনের সার্থকতা।

জন্মদিন পালনের প্রথা প্রথম দেখা যায় প্রাচীন মিশরে (প্রায় ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বে)। তবে, তখন জন্মদিন মানে ছিল “ফারাওয়ের রাজ্যাভিষেকের দিন” অর্থাৎ যেদিন রাজাকে দেবতাস্বরূপ ঘোষণা করা হতো। সেটিকেই তার “দেবজন্ম” বলে ধরা হতো। পরে গ্রিস ও রোমে জনপ্রিয়, আর আধুনিকভাবে (কেক–মোমবাতিসহ) জার্মানিতে ১৮শ শতকে শুরু হয়। এরে ধারাবাহিকত শুরু হয়েছে জন্মদিন পালনের উৎসব। কিন্তু ইসলাম ধর্মে জন্মদিন পালন করা বৈধ নয় মর্মে স্পষ্ট ফতোয়া দিয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দ। অন্যান্য ধর্মে জন্মদিন পালনে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই।
তাই আসুন, আমল বাড়িয়ে, উত্তম নীতিচর্চার মাধ্যমে সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা এবং পরোপকারিতার মাধ্যমে জীবন চর্চা করি। জন্মদিন হবে সার্থক ইনশাল্লাহ।।