কোরবানীর শিক্ষায় আলোকিত হোক আমাদের সবার জীবন

ইসলামিক ডেস্ক:ঈদুল আযহা কেবল পশু কোরবানি করা এবং আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আনন্দ ও গোশত খাওয়াকে বুঝায় না বরং ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আত্মোৎসর্গ, নিজের ভেতরে থাকা পশুত্বের মূলতপাটন এবং একমাত্র রবের সন্তুষ্টি। প্রতি বছর ঈদুল আজহা ও কোরবানি এসে আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে যায়, আমরা তা সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে পারলে সারাটি বছর ইসলামের ওপর অটল-অবিচল থাকা সহজ হবে।

ইসলামের  প্রতিটি আদেশ নিষেধের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিমদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং প্রশান্ত করা । ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি একথাটি যেমর সত্য তেমনি  ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা শিক্ষা এবং এর মহত্ত্বের প্রতি আমরা কজনই বা গুরুত্ব দিচ্ছি !

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয়তম বস্তুকে আল্লাহর পথে সমর্পণ করা। হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর এই কোরবানিতে আল্লাহ তায়ালা এতই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, তিনি পরবর্তী সব উম্মতের মধ্যে তা অবিস্মরণীয় হিসেবে বিরাজমান রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। সে জন্য ইসলামে এক মহান ইবাদত ও প্রতীক হিসেবে তা আজও পালিত হয়ে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত পালিত হতে থাকবে। তাই মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ভবিষ্যতের উম্মতের মধ্যে ইবরাহিমের এ আদর্শ স্মরণীয় করে রাখলাম।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৮)

আল্লাহ তায়ালার যে কোনো হুকুম যে কোনো সময় মাথা পেতে নেওয়া হচ্ছে কোরবানির শিক্ষা। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তাই আল্লাহ তায়ালার যে কোনো আদেশ-নিষেধ আমাদের খুশি মনে মেনে নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরকম আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। তাই ইসলামের কোনো বিধান আমাদের অবনতচিত্তে মেনে নিতে হবে। পবিত্র কুরআনে রয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত কিংবা রক্ত পৌঁছায় না; বরং তাঁর কাছে কেবল তোমাদের তাকওয়া পৌঁছায়।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

মহান আল্লাহ কোরবানি ও জীবনদানের প্রেরণা ও চেতনা সারাটি জীবনে জাগ্রত রাখার জন্য রাসুল (সা.)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘বলুন হে মুহাম্মদ! আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমাকে তাঁরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আমি সবার আগে তাঁর অনুগত ও নির্দেশ পালনকারী। (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)

ঈদ যেমনি আনন্দের বার্তা দিচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষা দিচ্ছে মহান আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করার। বার্তা দিচ্ছে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। সুপথ দেখাচ্ছে ন্যায় নীতি আর নিষ্ঠার পথে চলার। শিক্ষা দিচ্ছে সুন্দর ও পবিত্র মনের অধিকারী হওয়ার। তাই আসুন ঈদুল আযহার প্রকৃত মহত্ত্ব ও তাৎপর্য নিজে লালন করতে শিখি।

আসুন আমরা কোরবানীর প্রকৃত শিক্ষায় আলোকিত হই। বিশেষ করে করোনার এই দুর্যোগ ও মহামারীতে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। অন্য সময় দান সদাকাহ এবং সহযোগিতার পরিমাণ যেটুকু ছিল এখন সেটা আরো বাড়াতে চেষ্টা করি। মহান রাব্বুল আরামিন সকলের কোরবানী কবুল করিন এবং রবের নির্দেশিত পথে চলার তাওফিক দিন।-আমিন।