এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লাগে, ৩-৫ হাজার লিটার নয়

গবেষণা ডেস্ক:বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানির (বিশেষত ভূগর্ভস্থ পানি) টেকসই স্তর নির্ধারণ এবং পানির ব্যবহারের পরিবর্তনের উপর নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাবের মূল্যায়নের জন্য গবেষণাটি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সিএসআইআরও এর সাথে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানান হয়, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কতোটুকু পানি লাগে তা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে এটি একটি ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৫-১৬ সালে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লেগেছে আর ২০১৬-১৭ সালে লেগেছে ৫৮৪ লিটার।

আরও দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বোরো ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বেশি দূষ্পাপ্র্য এলাকায় তুলনামূলকভাবে সেচ খরচ বেশি হয়, অন্যদিকে উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকের লাভ কম হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো চাষ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বত্র নিচে নেমে যায়নি। শুধু নওগাঁ, নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী- এই তিনটি জেলায় পানির স্তর নিচে নেমেছে। এছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। উজানে নদীর নিয়ন্ত্রণ, শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পানির স্তর নিচে নামছে।

গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত এক দশকে বোরো ধানের সম্প্রসারণ কমে এসেছে বা কোথাও সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে গেছে। বোরো ধানের স্থানে এসেছে আউশ ধান। বিশেষত বরেন্দ্র এলাকায় বিগত ১০ বছরে বোরো ধান সম্প্রসারণের কোন নতুন এলাকা পাওয়া যায়নি।

গবেষণায় আরও বলা হয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন পানির ভারসাম্য ও ভূগর্ভস্থ পানির সহজলভ্যতার উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে দেখা গিয়েছে সেচের পানি ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রায় উন্নতি আনতে সাহায্য করেছে।