বাকৃবি ক্যাম্পাসের আনন্দ উচ্ছ্বাসের মজার দিনগুলি

সাকিবা আক্তার লাবন্য: সাধারণত শিক্ষাজীবনের গোল্ডেন এইজ বা সোনালী সময় বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এ সময়ে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত শিক্ষনীয় এবং স্মরণীয়। শিক্ষার্থীরা গুটি গুটি পায়ে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা রাখে হাজারো স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। অজানা জায়গা অচেনা মানুষগুলোর সাথে তৈরি হয় এক আত্মার সম্পর্ক। স্মৃতির পাতায় যে দিনগুলোকে সবচেয়ে বেশি আওড়াতে মন চায় সেটা হলো কাটানো সেই হল জীবন। আর সেই হল জীবনেরই সবচেয়ে আবেগমাখা জায়গাটির নাম গণরুম।

বলছি আমাদের গণরুমের কথা। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি শিক্ষার অনন্য বিদ্যাপীঠ প্রকৃতিকন্যা খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই আমাদের ঠাই হয় বেগম রোকেয়া হলে গণরুমে। তারপর শুরু হয় জীবনের অন্যতম স্মৃতিময় অধ্যায় যার প্রতিটি পৃষ্ঠাই অমূল্য। ওই গণরুমে আমরা সর্বসাকুল্যে ছিলাম ১০ জন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুত্ব এত গাঢ় হয়ে গেলো যে একা কোথাও গেলে মনে হতো কিছু একটা রেখে এসেছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অপরিচিত এই মানুষগুলোর সাথে এতটা গভীরভাবে জড়িয়ে গিয়েছি যে কখন সেটা বুঝতেই পারিনি।

জায়গার সংকুলান না হওয়ায় প্রথমে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিল। জিনিসপত্রের মিশ্রণ, এলোমেলো হয়ে থাকা, পড়াশোনা করতে না পারাসহ আরো নানা সমস্যা হতো। কিন্তু কিছুদিন পর আবিষ্কার করলাম এই পরিবেশটাই আমাদের ভালো লাগছে। প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দেওয়া, গানের আসর বসানো, ছুটির দিনগুলোতে ঘুরতে যাওয়া, ক্লাস-ল্যাব শেষে সবাই একসাথে হলে প্রবেশ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কে-আর মার্কেটে দলবেঁধে চা খাওয়াসহ আরো বিভিন্ন কারণে সময়টা রঙিনভাবেই কেটেছে। কখনো কখনো মুড়িপার্টি, মধ্যরাতে ছাদে বসে জোসনা দেখা, ট্যুরের আয়োজন করা, কারো বাড়ি থেকে খাবার আসলে কাড়াকাড়ি করে খাওয়া আনন্দটাকে করেছিল অনন্য।



আনন্দের পাশাপাশি গণরুম থেকে শিখেছিও অনেক। টাইম ম্যানেজমেন্ট, প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশোনা করা, খুবই অল্প সময়ে অনেক কাজ করাসহ অনেককিছু যা গণরুম ছাড়া হয়ত কল্পনাও করা যেতো না। এক সময়ের অলস ছাত্রীটাও হয়ে উঠলো খুবই পরিশ্রমী। ছোটবেলায় শিখেছিলাম একতাই বল যার প্রতিফলন দেখলাম এই গণরুমে এসেই। এই রুমের কোনো এক সদস্য অসুস্থ হলেই সবাই যার যার কাজ ফেলে তার সেবায় মনোস্থ হয়ে যেতো। কেউ বিপদে পড়লে প্রায় সবাই তার পাশে দাড়ায়। মানবতার এমন অনন্য উদাহরণ আছে গণরুম নামক এই অধ্যায়ে। আবার এই গণরুম হলো এক সম্ভাবনার আধার। এখান থেকেই উঠে আসে সুউচ্চ নেতৃত্ব, রাজনীতিবিদ, ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কন্ঠস্বরসহ আরো কতো কি!

দিন শেষে যে যার মতো চলে যায় কিন্তু স্মৃতির পাতায় জমা হয়ে থাকে গণরুম এ কাটানো হাজারো মুহূর্ত গুলো,ভেসে উঠে একসাথে থাকা মানুষগুলোর মুখ।

অতিথি লেখক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ