বাকৃবির আম বাগানের টানে

ইসরাত জাহান, বাকৃবি থেকে:"ও  মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে"- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  রচিত বাংলার জাতীয় সংগীতের এই লাইনটিই খুব বেশি মনে পড়ে প্রথন যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাবৃবি) আমাবাগানে যাই। মনে হয় যেন ঠিক এখানেই গাছের সাড়িতে বসেই কবিগুরু এই গাছেদের উদ্দেশ্যেই লিখেছেন গানটি। শাখায় শাখায় নতুন মুকুলের ঘ্রাণ কবিকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে নিয়েছিলো এমনভাবে যে লাইনটি লিখতে বাধ্যই হয়ে গেলেন কবি।

বাংলার রূপ মাধুর্য্যের কথা বলে শেষ করার না। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা  আমাদের এই দেশ। সবুজে ভরপুর এই দেশের সৌন্দর্য্যের পূর্ণ নমুনা পাওয়া যাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আমবাগানের অপরূপ দৃশ্য চোখে ধারন করলে। সরু রাস্তার দুইপাশে সারি সারি গাছ যেন সবাইকে সাদরে আপ্যায়নের জন্যই প্রবেশদ্বার তৈরি করে রেখেছে। শাখা প্রশাখায় নিজেদের বিস্তৃত করে রেখেছে তারা। নতুন পুরোনো পাতা, শাখায় ভরিয়ে তুলেছে তারা নিজেদেরকে। একের পর এক তারা বেড়ে উঠছে যেন সৌন্দর্য্যের কি এক প্রতযোগিতা চলে।

সবুজ সবুজ চিরল পাতা আর শাখার প্রান্তে নতুন মুকুল।আমবাগান যেন মৌ মৌ করছে সেই মুকুলের ঘ্রানে। হঠাৎ হেটে যাওয়ার কালে যেন পা আর নড়তে চায় না। মনমাতানো সেই ঘ্রানের আদলেই থেকে যেতে চায়। তাই তো সারাদিনের সকল ক্লান্তি শেষে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা মনকে সতেজ করার জন্য চলে আসে আমবাগানে। গাছের সাড়ির মাঝে পা রাখতেই যেন সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সবুজের মাঝে একদম হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।

শুধু শিক্ষার্থীরাই এর সৌন্দর্য্যে মোহিত এ কথা বলা মোটেও সমীচীন হবে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকৃতি পিপাসু মানুষগুলো আসেন এখানে। গাছের  ছায়ায় বসে তারা শুধু দেখতেই থাকেন গাছগুলোকে। এরকম সবুজের মেলা তারা আর হয়ত কোথাও দেখেন নি। ব্যাস্ত হয়ে পড়েন তারা ছবি তোলার জন্য। সকলেই চান এই মনোহর পরিবেশের ছবি তাদের ক্যামেরায় ধারন করে নিয়ে যেতে। আমি নিজেও এ সুযোগ ছাড়ি না কখনই। যখনই আমবাগানে যাই প্রতিবার যেন নতুন লাগে। তাই প্রতিবারের ভিন্ন রকমের সৌন্দর্য্য ক্যামেরায় রাখতে ভুল হয় না কখনও। যখনই মন খারাপ থাকে বা নিজেকে অনেক অগোছালো লাগে তখন আমবাগানের শীতল ছায়াটাই যেন একমাত্র অবলম্বন থাকে মন ভালো করার।

কিছুদিন আগেই ক্লাসের সবাই মিলে ক্যাম্পাসে একটু হাটার কথা বলতেই প্রথমেই সবাই বলে উঠল আমবাগানের কথা। কেমন একটা অদ্ভুত মায়া সবার এটার প্রতি,ভালো লাগার জায়গা প্রত্যেকের। ১২০০ একর আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তুলনামূলক খুবই ক্ষুদ্র এই এক টুকরো আমবাগান যেন সকলের শান্তির নীড়।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে পাশ করে বের হওয়া কৃষি অনুষদের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোছা. রোকসানা আক্তার বলেন- "যখন আমরা ছিলাম তখন আমবাগান ছিলো আমাদের প্রাণের সজীবতার একটি জায়গা। এখনও কিছুদিন পরে পরেই মায়ার টানে চলে আসি এবং এসে সেই চিরচেনা জায়গাকে আজও এত সবুজ সতেজ প্রাণময়ী দেখে মনে হয় ক্যাম্পাস যেন আমারই আছে।"

আমবাগানের স্নিগ্ধতাই এরকম যে সেখানে গেলে আসতে ইচ্ছে করে না আর কোনো কোলাহলে। চোখ বন্ধ করে, একগাছের কোনে নীরবে বসে, বাতাসের দোলায় দুলতে থাকা পাতার আওয়াজ আর পাখিদের মিষ্টি কন্ঠ শুনতে শুনতেই কাটিয়ে দিয়ে ইচ্ছে করে চিরকাল।