উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে-ড. এফ এইচ আনসারি

এগ্রিলাইফ প্রতিবেদক:আমাদের দেশ থেকে আলু রপ্তানি হলেও তা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। এক সময়ে এক লক্ষ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হলেও বর্তমানে তা কমে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে আলু মূলত সবজি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। সামান্য আলু পটেটো চিপস ও ফ্লেক্স তৈরিতে ব্যবহার হলেও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পপণ্য হিসেবে আলুর তেমন ব্যবহার নেই। আমাদের দেশে উৎপাদিত আলুতে জলীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় এসব জাতের আলুর চাহিদা বিশ্ববাজারে কম। এজন্য আলু রফতানির পাশাপাশি যদি আলু থেকে উৎপাদিত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রপ্তানি করা যায় তাহলে value-added প্রোডাক্ট হিসেবে আলুর আরও উচ্চমূল্য পাওয়া সম্ভব।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এসব কথা তুলে ধরেন এসিআই এগ্রিবিজনেস-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ড.এফ এইচ আনসারি।

ড. আনসারি বলেন,বর্তমানে ২৮ থেকে ২৯ টাকা কেজি দরে আলু রপ্তানি করে ২০ শতাংশ হারে প্রনোদনা পান আলু রপ্তানীকারকরা। তবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ১.৫ থেকে ১.৭৫ ডলারে রপ্তানি করা সম্ভব। দুই কেজি আলু থেকে এক কেজি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরী করা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর ফলে আলু থেকে অনেক বেশি লাভ করা সম্ভব।

আলু রফতানির ক্ষেত্রে ভালো জাত একটি বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ করে ড. আনসারি বলেন, আমাদের দেশে কিন্তু পূর্বে ভালো ধরনের তেমন আলুর জাত ছিল না। সরকার একটি পলিসির মাধ্যমে আলুরজাত উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এখন চমৎকার চমৎকার জাত আমাদের দেশে এসেছে এবং নিবন্ধিত হয়েছে। এসিআই কোম্পানীও চার-পাঁচটি উচ্চমানের জাতের আলুর জাত নিয়ে এসেছে এবং নিবন্ধিত করেছে।

ড. আনসারি আরো বলেন, রপ্তানীযোগ্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উৎপাদন করার জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী আলুর যেসব বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তার সবকিছুই রয়েছে এসিআই-এর নিবন্ধিত আলুর এসব জাতগুলিতে। এসব জাতগুলি থেকে উৎপাদিত আলুর অয়েল এ্যাবজরপশন হার হলো ৩.০২% থেকে ৩.৩% (স্টাণ্ডার্ড: ৪% এর নিচে), ড্রাইম্যাটার কনটেন্ট হার হচ্ছে ২১.৮২% থেকে ২৩.২% (স্টাণ্ডার্ড: ২০% এর অধিক), রিডুইসিং সুগার হার হলো ০.২৩% থেকে ০.৩% (স্টাণ্ডার্ড: ০.৫% এর নিচে)। এসব ক্যাটাগরি থাকলেই রপ্তানিযোগ্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই উৎপাদন করা যাবে। সুতরাং এসব জাতগুলি থেকে উৎপাদিত আলু প্রসেস করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই করে করে রপ্তানি করলে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। এর ফলে আলু চাষ এবং অধিক উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ড. আনসারি।

আলুর উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপণন, ব্যবহার বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি দিলে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রীত থাকবে ও নষ্ট হবে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে এবং হচ্ছে কৃষক। কৃষি মন্ত্রণালয়কে তাই বিপণন, বিকল্প ব্যবহার, রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাত জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে।