কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রয়োজন মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা-ড. এফ এইচ আনসারি

বিজনেস প্রতিবেদক:বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত এই সম্পৃক্ততায় জড়িত হয়ে অনেক উদ্যোক্তা ভাল করছেন আবার অনেকে ভালো করতে পারছেন না। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় আমাদের কৃষি উৎপাদন বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এর পাশাপাশি এখানে ভালো বিনিয়োগ আসছে ফলে উৎপাদন আরো বাড়বে। এভাবে উৎপাদন বাড়তে থাকলে তখন আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে কৃষিপণ্য উদ্বৃত্ত থাকবে। এর মধ্যে ফসল কৃষি এবং এনিমেল কৃষি উভয় সেক্টরেই উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য রপ্তানীর যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান।

আমাদের দেশ ছোট হলেও আমাদের কৃষি কিন্তু অনেক বড় এবং কৃষির সাথে সম্পৃক্ততাও ব্যাপক। ফল-সবজি-আলু কিভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য কৃষি পণ্যগুলি রপ্তানি করতে গেলে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানীর সুযোগগুলিকেও কাজে লাগাতে হলে কি করনীয় সে সম্পর্কে জানালেন এসিআই এগ্রিবিজনেস-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ড.এফ এইচ আনসারি।

ড. আনসারি বলেন,যেকোনো কাজ করতে গেলেই সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। সমস্যাগুলিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে এগিয়ে যাওয়াই হবে মূল কাজ।  আমাদের কৃষিজ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে তিনি কিছু মতামত ব্যক্ত করে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় কৃষিজ পণ্য রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কৃষিপণ্য আরো ব্যাপক পরিসরে রপ্তানি বাড়াতে হলে স্বল্পমেয়াদী,মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনার প্রয়োজন।

তিনি বলেন,স্বল্পমেয়াদী ক্ষেত্রে কিছু কিছু সরকারী পলিসিগত সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। রপ্তানীযোগ্য কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর ব্যাপার রয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে বিমানবন্দর সুবিধা,প্রসেসিং সুবিধা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্যাকেজিং সুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে আইনগত যে সমস্যাগুলি রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, সার্টিফিকেশন এর জন্য স্বল্পমেয়াদী যে সমস্যা গুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব।

সম্প্রতি ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি-এর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে শাকসবজি,আলু,ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপের উপর মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় নিয়ে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন,"দেশের শাকসবজি, আলু ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। বিভিন্ন ফসল ও খাদ্যে আমরা এখন উদ্বৃত্ত। এ উদ্বৃত্ত ফসল সারা পৃথিবীতে আমরা রপ্তানি করতে চাই।" সেজন্য,রপ্তানির বাধাসমূহ দূর করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।

ড. আনসারি বলেন,স্বল্পমেয়াদী কৃষিপণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি সমাধান হয়তো দ্রুত করা সম্ভব কিন্তু মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি যে সুযোগগুলি বিদ্যমান সে সুযোগগুলো নিতে হলে যে ধরনের সহায়তা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন সরকার সেগুলো কত গুরুত্ব সহকারে দেখছে তার ওপর নির্ভর করছে কৃষিজ পণ্যের রপ্তানির গতি-প্রকৃতি। এই গতি পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ যেমন ভারত,পাকিস্তান,ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যখন নিজ নিজ কৃষি পণ্য রপ্তানিতে যথেষ্ট ভাল করছে। আমাদেরকেও তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কৃষি পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন কৃষিতে আমাদের দেশের যে উন্নয়ন তাতে সরকারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সরকার টেকনোলজি দিয়েছে,সরকার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করেছে,সম্প্রসারণের মাধ্যমে সরকার টেকনোলজি প্রমোট করেছে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণেও সহায়তা করেছে। শস্য চাষাবাদের ক্ষেত্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন,শুরুর দিকে সরকার এখানে ভর্তুকি দিয়ে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করেছে। অনুরূপ ক্ষেত্রে ইরিগেশন এর ক্ষেত্রেও সরকার সহায়তা দিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে। আমাদের দেশে কৃষি সম্প্রসারণ, গবেষণা এবং বিদেশ থেকে নিয়ে আসা গবেষণা উপকরণগুলি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃত করা হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরও এক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

গবেষণার বিষয়গুলিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন,প্রাইভেট কোম্পানিগুলো গবেষণায় যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে। সরকারেরও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখন সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের গবেষণাগুলিকে একসাথে সমন্বয় করে কাজ করলে গবেষণার প্রাপ্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রসারণ সিস্টেমকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনগুলো মাঠ পর্যায়ে কৃষককে হাতে কলমে শেখাতে পারে। এর ফলে সার্বিকভাবে আমাদের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে কৃষিপণ্যের গুণগত মান বাড়বে এবং আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে মানসম্পন্ন কৃষিপণ্যগুলো বহির্বিশ্বের ভোক্তাদের মাঝে সন্তুষ্টি সহকারে রপ্তানি করতে পারবো। তাহলে আমাদের কৃষি পণ্য নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।