প্লাস্টিক রিসাইক্লিং: শক্তির সঞ্চয় নাকি পরিবেশের ক্ষয়!?

সাইদা ইসলাম সেঁজুতি:দুই দশক ধরে বাংলাদেশের শিল্প খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ। বাসা বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন ঘর সাজানোর ফানির্চার এমনকি আমাদের ব্যবহৃত দামি পোশাক ও তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক থেকে। প্লাস্টিক হচ্ছে জৈব পলিমার থেকে তৈরি এমন একটি সিন্থেটিক অথবা সেমি সিন্থেটিক বস্তু-যাকে গলিত অবস্থায় যে আকার দেয়া হয় নিজস্ব ইলাস্টিক ধর্ম বজায় রেখে সে আকারের কঠিন বস্তুতে পরিণত হয়। জৈব পলিমারের রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে উৎপত্তি হওয়ায় এসকল প্লাস্টিক সহজে পরিবেশ বিশ্লেষিত হয় না বা পঁচেনা যা অবশ্যই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হুমকির সমতুল্য।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও নিত্যদিনের ছোটখাটো কাজেও প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়নি বরং বিশ্ববাজারে প্লাস্টিকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কঠিন চ্যালেঞ্জ। মানুষের ফেলে দেয়া এক একটি প্লাস্টিক বর্জ্য বা অব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী দশ দশক বা তার বেশি সময় ধরেও পরিবেশে অপচনশীল ভাবেই টিকে থাকে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত না হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এই প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের বহুমুখী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সুস্পষ্ট ও দৃশ্যমান। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর একটি রিপোর্ট মতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম। ইতোমধ্যেই রাসায়নিক শিল্প খাতে প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে; যার বর্তমান বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৮০.৫৪ বিলিয়ন। এখন পর্যন্ত এই খাতের ৩০০০ টি ম্যানুফেকচারিং ইউনিটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এবং স্থানীয় বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের বার্ষিক বিক্রয় দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫০ বিলিয়ন। বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশন এর তথ্য মতে, বর্তমানে দেশীয় ৩০০ টি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি টাকায় বার্ষিক প্রায় ৩০ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এবং প্লাস্টিক পণ্যের দেশীয় বাজার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২০০ বিলিয়ন।

প্লাস্টিক যেহেতু এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পলিমারজাত; তাই এটি পরিবেশের সাথে মিশে যেতে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয় যা কিনা বর্তমানে পরিবেশের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ। অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে পরিবেশের উদ্ভিদকুল, প্রাণীকুল এমনকি জলজ প্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। মাটিতে মিশে থাকা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) জমির উর্বরতা তথা ফলসের উৎপাদন হ্রাস করে দিচ্ছে। তেমনি বাতাসে মিশে যাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রাণীকুলের, বিশেষত মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করে শ্বাসক্রিয়ার অবনতি ঘটাচ্ছে এবং হাঁপানি রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানির সাথে মিশে যাওয়া প্লাস্টিক কণা ক্যান্সার, হরমোন জনিত সমস্যা এমনকি বন্ধ্যাত্ব রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়াও খাদ্য শৃংখল এর মাধ্যমে এই ক্ষতিকর বর্জ্য মানবদেহে প্রবেশ করে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়ে থাকে গর্ভবতী নারী ও ছোট ছোট শিশুরা। এবং আরো উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে-প্লাস্টিক দূষণ। উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে তাই প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি এই বর্জ্যরে যথাযথ ব্যবস্থাপনা বিকল্পনাতিক।

বাংলাদেশের অর্থনীতি সঞ্চালনকারী প্রযুক্তি ও পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ-প্যাকেজিং, টেক্সটাইল, চিকিৎসা সামগ্রী, স্থাপনা, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, শক্তি উপাদনে ও গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভ‚মিকা রাখে। প্রতিবছর গড়ে শতকরা ২০% হারে প্লাস্টিকের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। তাছাড়া প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২৫৩০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দেশে ব্যবহৃত প্যাকেজিং এবং নিত্য ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ও প্রস্তুতকৃত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সকল প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের জন্য আমাদের আজও আমাদানি নির্ভর হয়েই চলতে হচ্ছে। যদিও উচ্চ তামায় উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল যোগান দিতে আমাদের দেশ এখানো স্বনির্ভর নয় কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিতে কিছুটা হলেও আমরা আমাদের এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। আর এই বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং। প্লস্টিক রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল কিছু অংশে হলেও পুনরুদ্ধার করা যায় এবং পুনরায় তা দ্বারা নতুনভাবে প্লাস্টিক দ্রব্যাদিও উৎপাদন করা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা কমবেশি সবাই 3R ধারণাটির সাথে পরিচিত- রিডিউস, রিফিউজ, রিসাইকেল। এদের মধ্যে বিশ্বের সকল উন্নত দেশগুলোতে রিসাইক্লিং এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এর কারণ হল এর মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি পণ্যের কাঁচামাল ও অনেকটা অংশেই ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়- যা অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও লাভজনক। কেবল 3R নয়, বর্তমানে প্রচলিত 4R, 5R ধারণা গুলোতেও রিসাইক্লিং কেই বিশেষ গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে আরও মজবুত ভাবে গড়ে তুলতে। এশিয়ার মাঝে আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীন এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বিভিন্ন দেশ থেকে শুধু রিসাইক্লিং যোগ্য প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করে এবং তা উন্নত প্রক্রিয়ায় রিসাইক্লিং করে তারা বার্ষিক অর্থনৈতিক আয়ের একটি বড় অংশ তৈরি করে নিচ্ছে। এমনটিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং হতে পুনরুদ্ধারকৃত কাঁচামাল থেকে পুনরায় নতুন প্লস্টিকজাত দ্রব্যাদি, ফানির্চার, টেক্সটাইল বস্ত্র, কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল, নূণ্যমানের জ্বালানি ও উৎপাদন করছে এবং তা দ্বারা রপ্তানিতেও এগিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য দুঃখের হলেও সত্য যে এদেশে গত দুই দশকে প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যপ্তি ঘটলেও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এ অত্যাধুনিক তেমন প্রসার ঘটেনি। এর পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও আমাদের উন্নত প্রকৌশলী ব্যবস্থাপনা মডেল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ঘাটতি রয়ে গেছে। ফলে প্লাস্টিক সামগ্রী ম্যানুফেকচার দ্বারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ আসলেও রিসাইক্লিং বাণির্জে তেমন সুফল আসেনি; যা বর্তমানে মূলত কেবল মেকানিক্যাল রিসাইক্লিং পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এর পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো হল: বর্জ্য সংগ্রহ-বাছাইকরণ-কেটে টুকরোকরন- ধৌতকরণ/বিশুদ্ধকরণ-শুকানো-ঠান্ডা পানিতে শীতলীকরণ-ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় কেটে ফেলা এবং সর্বশেষ উৎপাদন হচ্ছে প্লাস্টিক ফেøক্স যা পরবর্তীতে পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্লস্টিক পণ্য উৎপাদন কারখায় পাঠানো হয়।

পক্ষান্তরে, অপরদিকের চিত্র হল প্লাস্টিক রিসাইক্লিং বাণিজ্যে উন্নত দেশগুলো কিছু অর্থ বিনোয়োগের দ্বারা পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ফীডস্টক রিসাইক্লিং তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করছে এবং প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল পুনরুদ্ধার করে রপ্তানি বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। যার কারণ হল পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক বজ্য  থেকে ভালো পরিমাণ বায়ো-চার, বায়ো-ফুয়েল (ডিজেল) ও সিন-গ্যাস নামক জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব। এ দিক বিবেচনায় উন্নত প্লাস্টিক রিসাইক্লিং যেকোন দেশের জন্যই একটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির উৎস; বিশেষত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বা রিসাইক্লিং প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে যা চোখে পড়ে তা হল-এক শ্রেণীর ক্ষুদ্র দরিদ্র পেশাজীবী মানুষ বা পথশিশু যারা দৈনিক আয়ের জন্য রাস্তাঘাট বা বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকে এবং তা নামমাত্র মূল্যে মহাজনের কাছে বিক্রি করে। আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষুদ্র এ সকল দোকান “ভাঙ্গারি দোকান” নামেও পরিচিত। এসব দোকানে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করা হয়ে থাকে; যেমন প্লাস্টিক বোতল, প্যাকেজিং, প্লাস্টিকের তৈরি মেডিকেল বর্জ্য, প্লাস্টিক কন্টেইনার এবং তা মেকানিক্যাল রিসাইক্লিং এর পরবর্তী ধাপের জন্য করাখানায় পাঠানো হয়। রিসাইক্লিং কারখানায় প্লাস্টিক বর্জ্যকে বিভিন্ন ধাপে পরিস্কার করে প্লাস্টিক ফ্লেক্স এ রূপান্তরিত করা হয় এবং ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল পুনরুদ্ধার করা হয়। কিন্তু এই রিসাইক্লিং এর হার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে  খুবই কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেরই রিসাইক্লিং যোগ্য পণ্য বাইরের দেশগুলো কম মূল্যে প্যালেট আকারে কিনে নিয়ে যায়। বড় বড় রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে উন্নত রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উন্নত প্লাস্টিক কাঁচামাল ও জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে শক্তির সঞ্চয় করা হয়।

প্লাস্টিকজাত দ্রব্যেরও আবার বিভিন্ন শ্রেণিকরণ করা হয় এবং একেকরকম প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর হার একেক রকম। যেমন PET-বেভারেজ বোতল, কসমেটিক বোতল, টেক্সটাইল ফাইবার, কার্পেট ফাইবার; HDPE-ডিটারজেন্ট/ব্লিচ বোতল, দুধের বোতল, খেলনা, বাগানে ব্যবহৃত ফানির্চার; LDPE-প্যাকেজিং ফিল্মস, পলিব্যাগ, নমনীয় বোতল, ক্যাবল ইলাস্ট্রেটর; PP-বোতলের মুখ, প্লাস্টিক স্ট্র, খাবারের বক্স, ডাইপার; PS-প্লাস্টিক-ফোম কাপ, ডিমের বক্স, মাংসের প্যাকেজিং ট্রে, কোট হ্যাঙ্গারস; PVC-ক্রেডিট কার্ড, জানালা/দরজার ফ্রেম, পাইপ ও ফিল্টার্স, কেবল প্রোটেক্টর; এবং অন্যান্য- নাইলন ফেব্রিক্স, বাচ্চাদের ফিডার, মজবুত ডিস্কস, মেডিকেল দ্রব্যাদি, গাড়ির পার্টস ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে PET ও HDPE প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি রিসাইক্লিং যোগ্য।  LDPE ও PP ধরনের প্লাস্টিকের রিসাইক্লিংও সহজে করা যায় কিন্তু PS জাত প্লাস্টিককে রিসাইকেল করতে কিছুটা বেগ পেতে হয় এবং PVC ও অন্যান্য ধরনের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং অনেকাংশেই বেশ জটিল। ১৯৮০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে তখনকার সময়ে উৎপাদিত প্লাস্টিকের শতকরা ১৮% রিসাইকেল করা হতো। আর বর্তমানে যেহেতু এর উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তো নিঃসন্দেহে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং হারও দ্বিগুনের অধিক হারে বেড়ে গেছে বলে ধারনা করা যায়।

আমাদের দেশে যে প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় সেটি মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নং এবং এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও আছে। প্লাস্টিক বর্জ্যকে সঠিক অপসারন সম্পর্কে আমরা এখনো সচেতন নই। প্রতিনিয়তই অন্যান্য সকল বর্জ্যর সাথে প্লাস্টিক বর্জ্যকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা তথাপি যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে; যা পরিবেশের পাশাপাশি প্রাণীজগৎ কেও বিষময় করে তুলেছে। তাছাড়া ক্ষতিকর জানা স্বত্বেও এক বার ব্যবহার উপযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য যেমন-পিইটি বোতল, পলিব্যাগ এর ব্যবহার কমানো যায়নি বরং দিন দিন এর চাহিদা বেড়ে চলেছে যা উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যর আকারকে আরো ভয়াবহ রূপ দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- “বাংলাদেশে এমন সময় আসতে বেশি দেড়ি নেই যখন এদেশের নদীগুলোতে মাছের পরিবর্তে প্লাস্টিক বর্জ্যই বেশি পাওয়া যাবে।”

এখন থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্যকে স্থায়ী, উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা না করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সরকারের এখন থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনের মাধ্যমে কেবল চাহিদা পূরণ নয় রিসাইক্লিং বাণিজ্য দ্বারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আর্থিক সঞ্চয়ের দিকটি বিবেচনায় আনার সময় এসেছে। রিসাইক্লিং বাণিজ্য প্রসার ঘটলে দেশের বেকার জনগণের একটি বড় অংশের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। এর জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন-প্লাস্টিক রিসাইক্লিং সম্পর্কে সঠিক ও উন্নত প্রকৌশলী ধারণা, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও পর্যাপ্ত আর্থিক বিনিয়োগ। এবং সর্বোপরি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হুমকিকে আর্থিক সম্পদে রূপান্তরিত করার দৃঢ় মনোবল ও প্রচেষ্টা।
=================
লেখক:শিক্ষার্থী
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
ই-মেইল:This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.