ঢাবিতে প্রতীকী ফাঁসিতে ঝুলছে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা

আবুল বাশার মিরাজ, ঢাবি থেকে ফিরে:বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যা সংক্ষেপে ঢাবি বা ডিইউ নামেই বেশি পরিচিত। মফস্বল থেকে কেউ ঢাকা আসলে কিংবা ফ্রি সময় পেলে এ ক্যাম্পাসে কটা মিনিটের জন্য হলেও একবারের মত ঢু দেন না, এমন মানুষ হয়ত খুব কমই পাওয়া যাবে। আমি বরাবরই এ ক্যাম্পাসের মায়ায় আটকে গেছি। সৌন্দর্যে ভরা এ ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে গেছি অনেক আগে থেকেই। এবারও ঢাকা এসে ভুল হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখে সৌন্দর্য অবলোকন করার।

প্রতিবারের মত ঘুরতে ঘুরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সামনে চলে আসি। এবার দূর থেকে হঠাৎ চোখটা সবুজ মাঠের এ কোণে আটকে গেল। দেখতে পেলাম ৩ জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তবে তাদের কেউই কোন নড়াচড়াও করছে না। একটু কাছে গিয়ে সাদা কাপড় পড়া এ লোকগুলোর কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা। গলায় ঝুলছে মোটা সাদা দড়ি। আর দড়িঁগুলো একটি বাঁশের সাথে বাঁধা রয়েছে। এবার বুঝতে বাকি রইলো না যে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে ওদের। অনুসন্ধিচ্ছু মন জানতে চাইলো, কাজটি কারা করেছে, কেন করেছে, আবার উদ্দেশ্যই টা বা কি?

পাশেই হেঁটে যাওয়া এক ছোট্ট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার ভাইয়া, এদের ঝুঁলিয়ে রাখার কারণ কি? ছেলেটাকে দেখে মনে হলো, ছেলেটা খুব সম্ভবত এ হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন অথবা আশেপাশের কোথাও কাজ করে। প্রতিত্তুরে ছেলেটা বললো, 'এগুলো আমাকরে হলের ভাইরা করছে, গতকাল অনুষ্ঠান হইছে, সেসময় তারা এর রুপক ফাঁস দিছে।' তারপর তাকে বললাম ফাঁস দিছে কেন এদের? এবার সে বললো 'বঙ্গবন্ধুর খুনি এরা, তাই এদের ফাঁস দিছে।'

ছেলেটা চলে যাওয়ার পর ফাঁসির মঞ্চের আরো কাছে গেলাম। প্লাস্টিকের ব্যানারে লেখা পড়ে বুঝতে দেরি রইলো না, ছেলেটের কথা ঠিক আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক শাখা ছাত্রলীগের আয়োজনে ফাঁসির মঞ্চটি করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার লক্ষ্যে এ 'প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ' আয়োজন করে ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে ১২ খুনির মধ্যে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এখনো বাকিরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।