COVID-19 SITUATION IN BANGLADESH: HOW TO ADDRESS?’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

ক্যাম্পাস ডেস্ক:অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মাস্টার অব পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম কর্তৃক ’বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি: প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনার ১লা মে ২০২১ ভার্চুয়ালপ্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।  

ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম শাহীন খানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব লিয়াকত আলী সিকদার। মূখ্য আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর ডা. কাজী তরিকুল ইসলাম। আলোচক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি থেকে অংশগ্রহণ করেন মনমাউত ইউনিভার্সিটি’র স্কুল অব সোশ্যাল ওর্য়াক এর অধ্যাপক ড. গোলাম মোঃ মাদবর এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, ইউকে-তে ইমার্জেন্সী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ডা. গোলাম রাহাত খান। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল এপিডেমিওলোজী ডিরেক্টর, আস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালস, সুইডেনে কর্মরত ডা. ফরহাদ আলী খান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ডা. ফরহাদ আলী খান তার বক্তব্যে সামগ্রিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ভৌগলিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে, বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। সংক্রমণ কমানোর লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে লকডাউনের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে চলাচল করতে নাগরিকদের প্রতি আহবান জানান। পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের নেয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু করার প্রশংসা করে, সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সকল নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ প্রদান করেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপকের বক্তব্যের সূত্রধরে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস এর ইমার্জেন্সী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাহাত খান ইউকে এর কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশের করনীয় নিয়ে আলোচনা করেন। জনগণকে আতংকিত না হয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যকর প্রয়োগের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং যত্রতত্র ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি এমন কাজের নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুকির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ট্রায়াজ পদ্ধতি অনুসরণ করে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে, জনপ্রতিনিধিগণদের আরো জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান। টিকা সংগ্রহ এবং টিকার কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া সকল পদক্ষেপের প্রতি ইতিবাচক ধারনা পোষণের পাশাপাশি, টিকা সংগ্রহ কার্যক্রম আরো জোরদার করার ব্যাপারে মতামত প্রদান করেন।

আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে আলোচনায় যুক্ত হয়ে প্রফেসর ড. গোলাম মোঃ মাদবর কোভিড-১৯ এর সামাজিক প্রভাবের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেন। দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জনমনে যে ভয় ও আতংক বিরাজ করছে, সে অবস্থায় সামাজিক দূরত্বের বিরূপ প্রভাব ও তার থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য সকল দিক তুলে ধরেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ও কম সুরক্ষিত জনগোষ্ঠীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার পাশাপাশি, শারিরিক দূরত্বের মাঝেও মানসিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করতে আহবান জানান। এছাড়াও সাইকো সোশ্যাল ইস্যুর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দিক আলোচনা এবং সংকট উত্তরণে সকলকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে, আলোচিত বিষয়সমূহে আমরিকান সরকারের বর্তমান পদক্ষেপসমূহের প্রশ্ংসা  করে বাংলাদেশের পরিস্থিতির আরো দ্রুত উন্নতির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক বাংলাদেশের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর ডা. কাজী তরিকুল ইসলাম দেশের করোনা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রমরোধে কমিটির বিভিন্ন সফল পদক্ষেপ এবং এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। পাশাপাশি ব্যক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় গাইডলাইন মেনে চলতে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। ট্রায়াজ পদ্ধতির প্রয়োগের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমান স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য কর্মীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে দেশে চলমান টিকা কার্যক্রম সুচারুরূপে চলমান রাখা এবং মজুদ বৃদ্ধির সাথে সাথেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পুনুরায় প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। টিকা সংগ্রহ এবং তার ব্যবস্থাপনার সকল কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করার পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে সরকারের সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন তিনি। করোনার এই চলমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখসারীর সকল করোনা যোদ্ধার আত্ন্যত্যগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন যে, চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানো চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই প্রতিশ্রুত প্রণোদনা এখনো পাননি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই সকল সমস্যা থেকে দ্রুততম সময়ে সকলের সামাজিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে। তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে তার বক্তব্য শেষ  করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি  ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ঠ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব জনাব মোঃ লিয়াকত আলী সিকদার সভাপতির বক্তব্যে ওয়েবিনারে সংযুক্ত সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন । ব্যক্তি সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রতি আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে লক-ডাউন পরিস্থিতির ইতি টেনে, জীবন-জীবিকার গতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে সরকারের সকল পদক্ষেপের প্রশংসা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দ্রুতই এই জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে জাতিগত ভাবে একত্রিত হয়ে কাজ করবে। অন্যান্য আলোচকদের সাথে সহমত জ্ঞাপন করে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দ্রুততম সময়ের মাঝে দেশের করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও সুষ্ঠ বন্টনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং এটি নিশ্চিত করণে প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। টিকার সংকট কালে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ ও দেশে তা উৎপাদনের সুফল শীঘ্রই সমগ্র বাংলাদেশের সকল স্তরের নাগরিকগণ পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ টিকার গ্রহন করে জাতিগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে- এই ভাবনার কথা জানিয়ে সভাপতি মহোদয় তার  বক্তব্য শেষ করেন।

সকল আলোচকদের, বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সকলকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ড. শাহীন খান অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।