সফট ড্রিংকস নয় দুধ পান করতে বললেন গবেষকরা

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:বর্তমানে আমাদের দেশের অনেকেই দুধ না খেয়ে বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিংকসের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। যেখানে ৩০-৪০ টাকা খরচ করলে আধা লিটার দুধ পাওয়া যায় সেটা না কিনে ঐ টাকায় এক বোতল সফট ড্রিংকস কিনছেন। বাজারের প্রচলিত এ সকল সফট ড্রিংকসের অনেক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। অপরদিকে একই দাম দিয়ে সফট ড্রিংকস না খেয়ে দুধ কিনে খেলে, সেটি শরীরের জন্য অনেক উপকারি। দুধ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ খাবার। খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান দুধে সুষমভাবে বিরাজমান থাকায় এটিকে  সুষম খাদ্যও বলা হয়। দুধে বিদ্যমান ল্যাকটোজ মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকোষ বর্ধনে সহায়তা করে।

রবিবার (০৫ জুন) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব দুধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘দুগ্ধ খাতে স্থায়িত্ব: পুষ্টি, পরিবেশগত এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন আকিজ ডেইরি লিমিটেডের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে এবং আকিজ ডেয়রি লিমিটেড ও মিল্ক ভিটার যৌথ উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। এসময় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেয়রি বিজ্ঞানী ও ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ।

ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সোহেল রানা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. এম. রফিকুল ইসলাম, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. খান মোঃ সাইফুল ইসলাম, আকিজ ডেয়রি লিমিটেড পরিচালক (অপারেশন) মো. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন ও টেকনিক্যাল) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া পশুপালন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা- কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাকৃবি উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান বলেন, আজকে ডেয়রিতে বাংলাদেশের যে অর্জন তাতে পশুপালন গ্র্যাজুয়েটদের অবদান অনস্বীকার্য। এখন আমাদের দুগ্ধজাত নিরাপদ খাদ্যপণ্য উৎপাদনে গবেষণা করতে হবে। এতে একদিকে দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে প্রত্যেকের দুধের মতো সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত হবে। এজন্য কার্বন কণা পরিবেশে নির্গমনের বিষয়টি খেয়াল রেখে গরু, মহিষ ও ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আধুনিকায়ন খুবই দরকার বিশেষ করে ডেয়রি সেক্টরগুলোতে। শুধু বিদেশী জাত নয় দেশি জাত গুলোকে নিয়ে কাজ করতে হবে।  

মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন ও টেকনিক্যাল) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রাহকের দুধ পান করার আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিল্ক ভিটা ৭ হাজার লিটার দুধ থেকে শুরু করেছিল যা আজ ২ লক্ষ লিটারে উন্নীত হয়েছে। দুধ  একটি জাতির মেধা বিকাশে কাজ করে। বাইরের দেশগুলোতে মিল কো-অপারেটিভ থাকলেও আমাদের দেশে মিল্ক কো-অপারেটিভ টিকে নেই। এছাড়া আমাদের মার্কেটগুলোতে গুঁড়ো দুধের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্প ট্যাক্স দিয়ে গুঁড়ো দুধ আমদানি করা যায়। যে কারণে গুঁড়ো দুধ আমদানি বন্ধ করা যাচ্ছে না।  আমদানি না কমলে কৃষক দুধের প্রকৃত মূল্য পাবে না ফলে সেক্টরটির প্রতি তাদের অনীহা চলে আসবে।

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত প্রাইমারি স্কুল ও মাদ্রাসার প্রায় ২০০ শিশুদের আকিজ ডেয়রি লিমিটেড এবং মিল্ক ভিটার সৌজন্যে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য পান করানো হয়। দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (৫ জুন) সকাল ৯ টায় বিশ^বিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের সম্মেলন কক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মো. সোহেল রানা সিদ্দিকী বলেন, এ দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জীবনে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং দুধ উৎপাদনের ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই শিল্পের প্রসার ঘটানো। প্রতি বছর বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার গুড়োদুধ আমদানি করে। গুড়োদুধের মান নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মেলামিন ও পারক্লোরেটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ক্ষতিকারক দ্রব্য গুড়ো দুধে যোগ করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। এতে স্বাস্থ্যের অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলে দুধের ব্যবহার ও দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মাঝে দুধের উপকারিতার কথা প্রচার করে জন সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি সময়ে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে খামারীরা হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যবান এই দুধ উৎপাদনের জন্য গো-খাদ্যের দাম কমানো একান্ত জরুরী।