অতি দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানী বন্ধ করে দেশী শিল্পকে রক্ষার দাবী জানিয়েছে বিডিএফএ

রাজধানী প্রতিনিধি:অতি দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানী বন্ধ করে দেশী শিল্পকে রক্ষার দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস্ এসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। পাশাপাশি বিদেশ থেকে প্যাকেটজাত ফ্রোজেন মাংস আমদানী বন্ধ, খামারিদের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায়ভুক্ত, তরল দুধের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা। পশুখাদ্যের দাম কমানোর লক্ষ্যে টিসিবি-এর আওতায় সরবরাহ করারও দাবী জনিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোঃ আকরাম খা অডিটরিয়ামে দেশে দুধ ও মাংস শিল্পের উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষে সকাল ১০টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান নেতৃবৃন্দ।
 
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস্ এসোসিয়েশন সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি আলী আজম রহমান শিবলী, সাধারন সম্পাদক শাহ এমরান, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নাজিব উল্লাহ, গোলাম মোঃ টিটু, সভাপতি তেজগাও জোন, শাহ আলম, কোতোয়ালী জোন, এ.কে এম সালাউদ্দিন সরকার, সিনিয়র সহ সভাপতি- বাংলাদেশ ফিস ফার্মারস এসোসিয়েশন সহ দেশের খামার মালিক সমিতির অনেকে।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশ প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে, গরু ছাগল পালন করে যা দিয়ে উপর্জিত অর্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের অন্ন, লেখাপড়া,ছেলে মেয়ের বিয়ে সাদী ও জীবন জীবিকার পেছনে ব্যয় করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অর্থনীতির সাথে এখানেই আমাদের দেশের অর্থনীতির বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশে গ্রামীন অর্থনীতি একটি বড় প্রভাব বিস্তার করে মানূষের জীবন জীবিকায়। কৃষক যদি ভাল না থাকে তাহলে দেশের পুরো অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে যা অন্যান্য দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, পোল্ট্রি ও গবাদিপশু উৎপাদনে অন্যতম প্রধান খরচ হলো খাদ্য খরচ। গবাদিপশুর উৎপাদনে ৬৫-৭০ ভাগ খরচই হলো খাদ্য খরচ। ফিড তৈরীর অন্যতম প্রধান খাদ্য উপকরণ হচ্ছে সয়াবিন মিল। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদেশ থেকে প্রাণিজ খাদ্য উপকরণ মিট এন্ড বোন মিল বন্ধ থাকায় সয়াবিন মিলের গুরুত্ব এখন অনস্বীকার্য। তবে দু:খজনক হলেও সত্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সয়াবিন মিল রপ্তানি উন্মুক্ত করে দিয়ে কার্যত দেশীয় ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও ফিড উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ধ্বংসের মুখে। দেশের মানুষের স্বার্থে শূণ্য শুল্ক সুবিধায় আনা সয়াবিন সীড থেকে উৎপাদিত সয়াবিন মিলই এখন ৩ থেকে ৪টি সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত মুনাফার স্বার্থে রপ্তানি করছে। অতীতে কখনও ভারতে সয়াবিন সীড কিংবা সয়াবিন মিল রপ্তানি হয়নি বরং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমান সয়াবিন মিল আমদানি করা হয়ে থাকে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে চাহিদার ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান হতে এবং অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড কেনা বাবদ। তাই ফিডের দাম বাড়লে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে খামারিদের।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোভিডের-১৯ এর বিপর্যয় পৃথিবীর সকল দেশে অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু দেখা গেছে বাংলাদেশে একটি শক্ত মজবুত গ্রামীন অর্থনীতির কারনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে সহজেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই সকল অর্জন সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা ও দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য।



বক্তারা বলেন, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে ৭ থেকে ১০ দিন, কনটেইনারে ১৫ থেকে ২০ দিন। গণমাধ্যমে “সয়াবিন মিল রপ্তানি রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার” এমন খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বৃদ্ধি করেছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সয়াবিন মিল রপ্তানী বন্ধ ঘোষণা দ্রুত দেয়া দরকার। নইলে দেশের পোল্ট্রি, মৎস্যসহ প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য দাম বেড়ে যাবে। খামারিরা বড় ধরণের লোকসানে সম্মুখীন হবে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস্ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এক মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন।