বর্তমান সময়ের তীব্র গরমে মৎস্য চাষিদের জন্য কিছু টিপস্ দিলেন মৎস্যবিদ মোঃ রাশেদুজ্জামান

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:আমাদের দেশে শরৎকাল শুরু হয় আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আর শেষ হয় অক্টোবরের মাঝামাঝিতে। এই ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আবহাওয়ায় হালকা ঠাণ্ডা থাকে। কিন্তু এ বছর শরতের বৈশিষ্ট্যের ছিটেফোটাও নেই এদেশের আবহাওয়ায়। হালকা ঠাণ্ডার পরিবর্তে দেখা মিলছে তীব্র গরমের। আবহাওয়ার এ পরিবর্তন দেখে এক কথায় বলা চলে শরৎকালে চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। আর দেশ জুড়ে এই অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় মাছ চাষিদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানা সমস্যা। তবে এরকম পরিস্থিতিতে মৎস্য চাষিদের জন্য কিছু টিপস্ দিয়েছেন বিশিষ্ট মৎস্যবিদ মোঃ রাশেদুজ্জামান।

ফার্মা এন্ড ফার্ম-এর ডেপুটি সেলস ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মাঝখানে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টি হলেও তাতে তাপদাহ কমার কোনো লক্ষণ নেই। ঋতু পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলতেই থাকবে সারাদেশে। গত কয়েকদিন যাবৎ দিনেরাতে প্রচণ্ড তাপমাত্রা চলমান যা আরও ৩/৪ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে এসময় মাছ চাষে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে সেগুলো প্রথমে চিহ্নিত করে নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া থাকলে অতি সহজেই এরকম বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ে মৎস্য চাষীদের নিকট অত্যন্ত জনপ্রিয় কৃষিবিদ মোঃ রাশেদুজ্জামান।

আসুন আগে দেখে নেই এরকম পরিস্থিতিতে মাছের খামারে কি কি ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়:
১) তাপমাত্রা বেশি থাকলে পুকুরের পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকার পরিমাণ অনেক কমে আসে, পুকুরে রাতে অক্সিজেনের চরম ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২) পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩) বিক্রয়যোগ্য মাছ স্ট্রেস ও হিটষ্ট্রোক করে মারা যেতে পারে।  
৪) মাছের আইশ আলগা হয়ে উঠে যেতে পারে।
৫) উদরি রোগ বা পেট ফুলা রোগ দেখা যেতে পারে।
৬) কিছু জলজ শ্যাওলা মরে গিয়ে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে যেমনঃ অসিলেটোরিয়া, মাইক্রোসিসটিস প্রভৃতি নীলাভ সবুজ উদ্ভিদকণা যা উপরের স্তরের মাছ খেয়ে মারা যেতে পারে।

এসময় খামারীর করণীয়ঃ
১) খাবার প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে ৫০ % ।
২।পানির গভীরতা কম থাকলে ডুবন্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে অথবা সকালে বা সন্ধ্যার পর যখন পানি ঠাণ্ডা থাকে তখন ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাদ্যের সাথে ৩-৫ মিলি করে ভিগোটনিক সল ব্যবহার করা যায়।
৪) দুপুর বেলায় পুকুরে এয়ারেটর ব্যবহার করা বা বিকল্প অক্সিজেন (এস আই অক্সিট্যাব শতকে ৪-৫ টি করে ট্যাবলেট) প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৫) মাছের ঘনত্ব যাতে অতিরিক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, থাকলে কিছু মাছ অপসারণ করতে হবে।
৬) পুকুরে এমোনিয়া লেভেল, পিএইচ লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখা। এর জন্য প্রতি শতকে ৪-৫ মিলি করে এস আই এমোফ্রী-পি অথবা এমোফ্রী-এল ব্যবহার করা যেদে পারে।
৭) মাটিতে হাইড্রোজেন সালফাইড অথবা জৈব উপাদান, কাদা বেশি থাকলে সয়েল প্রোবাইয়োটিক- (প্রতি শতকে ৬-৮ গ্রাম করে এস আই প্রোক্লিন) ব্যবহার যথেষ্ট ফলপ্রসু।
৮) প্রতি শতকে ১২-১৫ গ্রাম করে পানিতে গ্লূকোজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯) পুকুরে পানি অতিরিক্ত গরম হলে নতুন করে ঠান্ডা পানি দিয়ে একটা ভালো মানের ওয়াটার প্রোবায়োটিক (প্রতি শতকে ৫ গ্রাম এস আই রয়েল প্রো, ১০ গ্রাম করে চিটাগুড় এর সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে অন্যদিকে পুরাতন পানি বের করে দেওয়া।

প্রয়োজনে আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য অফিসে অথবা মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।