টাঙ্গাইলে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত

কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলায় চলতি বছর ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে। ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ মানুষের (ইপিআই মাইক্রোপ্লান-১৯) জন্য ৭ লাখ ২ হাজার ৫৯৭ মেট্রিক চালের প্রয়োজন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ জেলা টাঙ্গাইলে এবার চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার অধিক চাল উৎপাদন হওয়ায় অবশিষ্ট চাল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় এ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। অপর দিকে ভাল দাম পেয়েও খুশি কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর রোপা আমনের চাষ করা হয়েছিলো ৮৮ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থ বছরে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ছিলো ৮৮ হাজার ২৬০ হেক্টর। সেখানে অর্জন হযেছে ৮৯ হাজার ৮৬১ হেক্টর। চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে। গত বছর জেলা চাল উৎপাদন হয়েছিলো ৭ লাখ ১ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৬ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৭ লাখ ১ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। সেখানে এক লাখ ৭১ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। গত বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ৪৯০ হেক্টর। কয়েক দফার বন্যায় তলিয়ে ৯২৩ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছিলো। উৎপাদন হয়েছিলো ২ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন চাল। এ বছর ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আউশের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।

জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ‘এ বছর আমি ৯ বিঘা (৩৩ শতাংশে এক বিঘা) জমিতে বোরো চাষ করেছি। উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করায় প্রতি বিঘায় গড়ে আমি ৪০ মন করে ধান পেয়েছি। ৯ বিঘায় প্রায় ৭২ হাজার টাকা আমার খরচ হলেও ৩৬০ মণ ধান পেয়েছি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। আগে এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান হতো।’

অপর কৃষক আমির হামজা বলেন, ‘আবহাওয়া অনক‚লে থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছল ফলন অনেক ভাল হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান ঘরে তুলতে পেরে খুব আনন্দিত।’

উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এম এম মোবারক আলী বলেন, ‘প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সার বীজ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হয়েছে। কৃষকদের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কৃষিমন্ত্রীর সহযোগিতায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৪ টির পরিবর্তে ২০ টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, ‘এ বছর পোকা মাকড়ের আক্রমণ ছিলো না। অপরদিকে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা এ বছর একটু বেশিই লাভবান হবেন। এ ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের ফলন ভাল হওয়ায় এ বছর হাইব্রীডের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে লক্ষ্যমাত্রা ও চাহিদার অধিক ধান টাঙ্গাইলে উৎপাদন হয়েছে। অতিরিক্ত ধান টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা রপ্তানি করা হবে। এছাড়াও জেলায় শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কর্তন করা হয়েছে। এতে কৃষকের খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়েছে।’