বাকৃবিতে প্রথমবারের মতো পালিত হলো বিশ্ব প্রোটিন দিবস

আবুল বাশার মিরাজ: ‘ প্রতিদিন প্রোটিন খাই, শক্তি ও পুষ্টি পাই ’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিশ্ব প্রোটিন দিবস-২০২৪ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগ, ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল।

আজ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০ টার দিকে পশুপালন অনুষদের সামনে থেকে একটি র‍্যালি বের হয়। র‍্যালির উদ্বোধন করেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আখতার। র‍্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ‘ এনার্জাইজ ইওর ডে, দি প্রোটিন ওয়ে  ’ শিরোনামে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আখতার। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম এবং ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, প্রোটিন আমাদের অধিকার। আমাদের উদ্দেশ্য, মানুষের মধ্যে প্রোটিন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রোটিন আমাদের শরীরের গাঠনিক একক। আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও, আমাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকাশে প্রোটিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই আমাদের বিভিন্ন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। মাছের প্রোটিন সবচেয়ে পাচক প্রোটিন। শাকাহারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রোটিন গ্রহণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমাদের  যেকোনো সংক্রামিত রোগের প্রতিষেধকের জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। প্রোটিনের অভাবে পেশি দুর্বলতা, নিম্ন রক্তচাপ, গর্ভধারণজনিত সমস্যা, এনেমিয়াসহ পেশিস্বাস্থ্যের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়। তাই, আমাদের নিত্যদিনের খাবারে কমপক্ষে ২০% প্রোটিন থাকা প্রয়োজন।

এছাড়াও তিনি বলেন, ডিম হলো স্বল্প মূল্যের প্রোটিন। ডিমের উপাদান কোলিন আমাদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য প্রয়োজন। ডিম অন্যতম পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য। আমাদের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া প্রয়োজন । এছাড়াও ডিমে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। সয়াতে শতকরা সমুদয় প্রোটিন অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। সয়াতে প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে।  তাই নারীদের সয়া জাতীয় খাদ্য করা উচিৎ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দেশের অর্থনীতি ধান নির্ভর অর্থনীতি। বাংলাদেশে একজন মানুষ প্রতিবছর গড়ে ১৮২ কেজি চাল গ্রহণ করে। অথচ ডিম ধানের   থেকে অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ খাবার। একজন মানুষ যদি অন্যকিছু না খেয়ে প্রতিদিন ৪-৫ টি ডিম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে তার আর অন্যকিছুর প্রয়োজন পরবে না। আর শুধু ডিম নয়, আমাদের অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্য দুধ, মাছ এবং মাংস গ্রহণ করতে হবে। মেধাবী জাতি গঠনে প্রোটিনের কোনো বিকল্প নেই।