সুস্থ ও স্টেরয়েড মুক্ত কোরবানির পশু নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

ডাঃ আবদুর রহমান (রাফি):যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এ বছর জুলাই মাসের ১০ তারিখ বাংলাদেশের মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন। ঈদুল আযহার অন্যতম একটি আনুষ্ঠানিকতা হলো পছন্দের পশুকে কোরবানি করা।

মুসলিমদের এই উৎসবে সামর্থ্যবানরা পছন্দমতো পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর কাছে তার তাকওয়া প্রদর্শন করে। সামর্থ্যবানদের কোরবানি গরুর মাংসের একটি অংশ থাকে গরিবদের জন্য। আর এই কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সুস্থ ও সবল পশু নির্বাচন করা।

কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১ কোটিরও বেশি পশু কোরবানিতে জবেহ করা হয়। সবাই ভালো গরুটিই পছন্দ করতে চায়, এজন্যে সবার নজর থাকে গরুর স্বাস্থ্যের প্রতি। এই উৎসবকে পুঁজি করে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজাকরণের দিকে ঝুঁকছে।

কোরবানির গরু সুস্থ ও রোগমুক্ত কিনা তা চেনার উপায়:

১) স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু স্বাস্থ্যবান দেখাবে কিন্তু এরা তেমন চটপটে হবে না। খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে দেখা যাবে না। গরুর শরীরে আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ দিলে ঢেবে যাবে। কিন্তু সুস্থ গরুর শরীরে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে আঙ্গুল সরিয়ে নিলে তাৎক্ষণিকভাবে পূর্বের অবস্থায় ফেরত আসবে।

২) পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হবে। অবসরে জাবর কাটবে (পান চিবানোর মতো), কান নাড়াবে, লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে। বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সহজেই রেগে যাবে।

৩) সুস্থ গরুর নাকের সামনের কালো অংশ (Muzzle) ভেজা থাকবে, অসুস্থ গরুর ক্ষেত্রে শুকনো থাকবে। এছাড়া অসুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।

৪) সুস্থ গরুর গোবর স্বাভাবিক থাকবে, পাতলা পায়খানার মতো হবে না।

৫) সুস্থ গরুর সামনে খাবার এগিয়ে ধরলে জিহ্বা দিয়ে তাড়াতাড়ি টেনে নিতে চাইবে। অপরদিকে অসুস্থ পশু ভালোমতো খেতে চাইবে না।

৬) অসুস্থ গরু ঝিমায়, নিরব থাকে। খুব বেশি আশেপাশের কোলাহলে সাড়া দেয় না।

কোরবানির জন্য দেশে গরু, মহিষ, ছাগল প্রভৃতি পশু বা প্রাণীর চাহিদা ব্যাপক। পূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক পশু আমদানি করা হত। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কোরবানির চাহিদা মোতাবেক দেশে এখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু বা প্রাণী রয়েছে। পশু ক্রয় থেকে শুরু করে মাংস ভক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বক্ষেত্রে। রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি হলে প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

কোরবানির পশু কেনার পর আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই পশুর প্রতি বেশি দরদ দেখাতে গিয়ে জবাইয়ের পূর্বে বেশি করে খাবার খাওয়ায়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে মাংসের গুণগত মান কমে যেতে পারে৷ পশু জবাইয়ের ১২ ঘন্টা পূর্ব থেকে পশুকে কোনো খাবার না দেওয়াই ভালো এবং বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে৷ এতে করে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে৷

লেখকঃরেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তার
বি. এস. সি. ভেট. সায়েন্স এন্ড এ. এইচ, এম. এস. (ডেইরি সায়েন্স), এমসিভিএস (বিসিভিএস)