মান্দায় দিঘী সংস্কারের নামে অবৈধভারে বালি বিক্রি, অতিরিক্ত গভীর করায় হুমকিতে রাস্তা ও বসতবাড়ি

কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ:নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয় উচ্চ বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ধনী বিবির দিঘীর সংস্কারের নামে স্কেভেটর (ভেঁকু মেশিন) দিয়ে গভীর করে মাটি ও বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে দিঘীর তলদেশ প্রায় ৬০ ফুট গভীর করে অবৈধভাবে বালি উত্তলন করায় হুমকির মুখে রয়েছে দিঘীর উত্তর দিকের পাকা রাস্তাসহ পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষিন পার্শ্বের বসবাসরত বাসিন্দারা। এর ফলে পুকুর সংলগ্ন দক্ষিণ পাশ ঘেঁষা বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তেঁতুলিয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান বাবুর সাথে যোগসাজস করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের ভাতিজা ইমরান হোসেন জীবনের নেতৃত্বে প্রভাবশালীরা দিঘীর তলদেশ খনন করে অপরিকল্পিতভাবে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। স্থানীয়দের দাবী সর্বোচ্চ ৮ফুট গভীর করে তলদেশের মাটি কেটে দিঘীটি সংস্কার করার কথা থাকলেও তারা প্রায় ৬০ফুট গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। প্রভাবশালীরা মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও উত্তর দিকের কোটি টাকা মূল্যের পাকা রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে। তার সঙ্গে দক্ষিন এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকের বসতভিটা, গাছ-পালা,বাঁশঝার দিঘীর মধ্যে ধ্বসে পড়েছে এবং অবশিষ্টাং দিঘীর মধ্যে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আর তাই এখনই মাটি উত্তোলন বন্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

দিঘী পারের বাসিন্দা মামনুর রশিদ, মাজেদুল, পরেশতুল্লাহ, সাইদুর,হারুন, রেহেনা,আনোয়ারাসহ অনেকের অভিযোগ, দিনে-রাতে প্রকাশ্যে এসব মাটি ও বালি স্কেভেটর দিয়ে কেটে নেয়া হচ্ছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০/২৫টি ট্রাকে করে এসব মাটি ও বালি বিক্রি করা হয়। এতে করে রাস্তায় কাদা জমে এলাকার লোকজন চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এবিষয়ে প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না। তাদের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে দিনে-রাতে বালি ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। তারা জানান, ইমরান এবং প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান বাবু মিলে নিজ স্বার্থে দিঘীটি প্রায় ৬০ফুট গভীর করে খননকরে বালি ও মাটি বিক্রি করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মতো করে উঁচু করে রেখেছেন বিক্রির জন্য।

গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দিঘীটির পশ্চিম পাশে পাহারার জন্য রয়েছে একটি টং ঘর। সেখানে সার্বক্ষনিক পাহারায় থাকে লোকজন। দেখা গেলো- দিঘীর বালি এবং মাটি দু’টি স্কেভেটরের সাহায্যে কেটে নেয়া হচ্ছে। ১৫/২০টি ট্রাকটরে করে তা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘আমরা প্রধান শিক্ষকের সাথে চুক্তি করেই এখান থেকে বালি বিক্রি করছি। দিঘীর তলদেশে বালি পাওয়ায় আমরা একটু বেশি গভীর করছি। পরবর্তীতে মাটি দিয়ে আমরা কিছুটা ভরাট করে দেবো তখন এতোটা গভীর থাকবেনা। বোঝেনইতো খরচতো তুলতে হবে।’

৮ফুট গভীর না করে ৫০-৬০ ফুট গভীর কেনো করা হলো এমন প্রশ্নে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান বাবু বলেন, ইএনও স্যার এ বিষয়ে বলার পরে আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি তারা নতুন করে আর মাটি কেটে বাইরে নিয়ে যাবে না।

এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, আমি বিষয়টি জানার পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রধান শিক্ষককে ডেকে এবিষয়ে বলা হয়েছে। দিঘীর তলদেশ থেকে মাটি বা বালি কেটে আর যেনো বাইরে বিক্রি করা না হয় এবং আগামী ১৫দিনের মধ্যে দিঘীটি সংস্কার কাজ শেষ করা হয় এ বিষয়ে তিনি একটি লিখিত মুচলেকা দিয়ে গেছেন।