আইএসডিই এর উদ্যোগে চট্টগ্রামে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে প্রশিক্ষন কর্মশালা শুরু

সমসাময়িক ডেস্ক:পত্রিকা পাতা বা টিভির পর্দা খুললেই প্রতিনিয়তই জোরপূর্বক ধর্ষন বা খুনের ঘটনা চোখে পড়ে। কিছু বিকারগ্রস্থ মানুষের যৌন হিংসার বলি হয়ে অনেককে অকালে ঝরে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। অথচ প্রতিটি মানুষের জৈবিক যৌন চাহিদার স্বাধীনতা থাকা উচিত। সন্তান গ্রহন, বড় করার মতো স্বাধীনতা থাকা উচিত হলেও কিছু মানুষের অজ্ঞতার কারনে সন্তান প্রসবে শুধুমাত্র নারীকে দায়ী করা হয়। যার পরিনতি হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। তাই প্রতিটি নারী ও পুরুষের যৌন ও প্রজনন অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারে অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সমাজকে সমভাবে এগিয়ে না আসলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ বন্ধ করা যাবে না।

আজ ২৭ মার্চ ২০২২ইং চট্টগ্রামের পর্যটন হোটেল সৈকত কনফারেন্স হলে "রাইজ এসআরএইচআর সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন (মডিউল) ১ এবং মডিউল ২ এর সমন্বয়ে ৬ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।

আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদ। আইএসডিই'র মানব সম্পদ সমন্বয়কারি শম্পা কে নাহারের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে আলোচনায় অংশ নেন আইএসডিই কর্মসূচি সমন্বয়কারি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, রোহিঙ্গা রেসপন্স কর্মসুচির ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দীন, প্রশিক্ষন কর্মকর্তা নিপা দাস প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় কার্যকরী উদ্যোগ না থাকায় নারী ও শিশুরা প্রতিনিয়তই সহিংসতা শিকার। তৃণমূলে সাধারন মানুষের বিবেককে জাগ্রত করা, নির্যাতনের শিকার ও নারীরা যেন যথাযথ আইনী প্রতিকার পান সে বিষয়ে সমাজের সকল স্তরের প্রতিবাদী মানুষগুলোকে সংগঠিত করা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। তৃণমূলে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদ কমে যাবার কারনে নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে।

আইএসডিই বাংলাদেশ'র নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি মানুষের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার ও সুরক্ষা পাবার নিশ্চয়তা পাবার কথা থাকলেও এটি সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন নারীর প্রধান কাজ সন্তান ধারন ও প্রতিপালন করা। যার কারনে অনেকে নারীকে যৌন দাসী হিসাবে বিবেচনা করছেন, যা চরম মানবাধিকার লংঘন। স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে আইএসডিই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আইএসডিই নারীর মর্যদাপূর্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। আর এ জন্য সমাজে পরিবর্তনকামী মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকদের সংগঠিত করে সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারই অংশহিসাবে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষা এবং নারী ও পুরুষের বৈষম্যহীন মর্যাদাপূর্ন সমাজ বির্নিমানে এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে তৃণমূল পর্যায়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে আরও বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনার কথা জানান।

উল্লেখ্য নেদারল্যান্ডের দাতা সংস্থা সিমাভির আর্থিক সহায়তায় রয়েল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট কেআইটির উদ্যোগে রেডঅরেঞ্জ, এফপিএপি ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এসআরএইচআর সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহনশীলতা বৃদ্ধিও ক্ষমতায়ন-রাইজ প্রকল্পের আওতায় আইএসডিই এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রশিক্ষন কোর্সের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই বিষয়ের তথ্যগুলি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের কাছে অবহিত করবেন। কর্মশালায় আইএসডিই বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ২৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মী অংশগ্রহন করছেন।