প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জলমহাল ইজারা দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন

মৎস্যজীবী সেজে স্কুল শিক্ষকের জলমহাল ইজারার আবেদন!
জেলা বার্তা পরিবেশক,নওগাঁ:নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিল শিশুগাড়ি জলমহালটি অমৎস্যজীবীদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ইজারা বাতিল ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জলমহাল ইজারা দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বিলের পাড়ে উপজেলার রামনগর এলাকায় মানববন্ধন করে এ দাবি জানায় চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা।

মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, আইন লঙ্ঘন করে জেলা জলমহাল ইজারা কমিটি অমৎস্যজীবী এবং জলমহাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের চেরাগপুর সমবায় সমিতিকে জলমহালটি ইজারা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। চকদেবীরাম গ্রামের বাসিন্দা ও রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রায়হান কবির তথ্য গোপন করে মৎস্যজীবী সেজে চেরাগপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে জলমহালটি ইজারার জন্য আবেদন করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিজেকে মৎস্যজীবী পরিচয় দিয়ে জলমহাল ইজারার জন্য দরপত্র দাখিলের আবেদন করেছেন। যা সরকারি চাকরির বিধিমালা পরিপন্থী।

মানববন্ধনে দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রহিদুল আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মৎস্যজীবী মামুন রশিদ মল্লিক, খলিলুর রহমান মণ্ডল, আব্দুর রশিদ মণ্ডল, আব্দুল জব্বার, সাইদুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, উপজেলার নুুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের চকদেবীরাম ও রামনগর গ্রামে অবস্থিত বিল শিশুগাড়ি জলমহাল। এর আয়তন ২৬ দশমিক ৭৫ একর। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমিতি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। এ বছরও জলমহালটি ইজারা নেওয়ার জন্য জলমহাল ইজারা নীতিমালার সকল শর্ত অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ইজারার আবেদন দাখিল করে চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। প্রায় ২০ বছর ধরে জলমহালটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে চকদেবীরাম ও রামনগর গ্রামের শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে মৎস্যজীবীরা জানতে পারেন, নীতিমালা লঙ্ঘন করে আগামী ছয় বছরের জন্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের চেরাগপুর মৎস্যজীবী সমিতিকে জলমহালটি ইজারা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে জেলা জলমহাল ইজারা কমিটি। অথচ ২০০৯ সালের জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী জলমহাল ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিকটবর্তী মৎস্যজীবী সমিতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার পরেও মৎস্যজীবী সেজে জলমহাল ইজারার আবেদন করায় শিক্ষক রায়হান কবিরের শাস্তি দাবি করেন মৎস্যজীবী। এছাড়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একজন শিক্ষক চেরাগপুর মৎস্যজীবী সমিতির নাম ব্যবহার করে জলমহাল ইজারার আবেদন করায় ওই মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারার সুপারিশ বাতিল করে চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমিতির নামে জলমহালটি ইজারা দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি রহিদুল আলম বলেন, বিল শিশুগাড়ির গা ঘেঁষেই চকদেবীরাম সমবায় সমিতির সদস্য শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবারের বসবাস। বছরের পর বছর ধরে ওই বিলে মাছ শিকার করে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলে যদি তাঁরা মাছ শিকার করতে না পারেন তাহলে তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তাই যাচাই-বাছাই করে নিকটবর্তী মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা দিলে কয়েকশ পরিবার বাঁচবে। শিক্ষক রায়হান কবির মৎস্যজীবী সেজে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের পেটে লাথি মারার চেষ্টা করছেন। তার পরিবারের কেউ কোনো দিন মৎস্যজীবী ছিল না। তার পরিবারের সবাই চাকরি করেন। চকদেবীরাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবদেন করা হয়েছে।  

তবে চেরাগপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও প্রাইমারী শিক্ষক রায়হান কবির নিজের নাম, পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে অনলাইনে জলমহাল ইজারার আবেদন করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দরপত্রে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে বেশি উচ্চ দর দাখিল করা হয়েছে বলেই জেলা জলমহাল ইজারা কমিটি আমাদের নামে জলমহালটি ইজারা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সরকারের যেখানে বেশি রাজস্ব আদায় হবে সেখানেই ইজারা দেবে এটাই নিয়ম।’  

মৎস্যজীবী না হয়েও জলমহাল ইজারার জন্য আবেদন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেরাগপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে জলমহাল ইজারার জন্য আবেদন করেছিলাম। শিক্ষক হলেই কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের উপদেষ্টা হওয়া যাবে না এটা আমার জানা ছিল না। তবে জলমহাল ইজারা নিয়ে অভিযোগ উঠার পর আমি ওই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। জলমহাল ইজারা পেলে এখন ওই সমবায় সমিতির সদস্য মৎস্যজীবীরা জলমহালটি ভোগদখল করবেন।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রায়হান কবিরকে শোকজ করা হয়েছে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মৎস্যজীবী সেজে একজন স্কুল শিক্ষক একটি মৎস্যজীবী সমিতির নাম ব্যবহার করে জলমহাল ইজারার আবেদন করেছেন এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। অভিযোগটি সম্পর্কে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে উচ্চ দর দাখিল করলেও ওই সমিতির দরপত্র বাতিল করা হবে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই যাতে জলমহাল ইজারা পায় প্রশাসন সে বিষয়টি দেখবে।’