জাতীয় পল্লী উন্নয়ন স্বর্ণপদক পেলেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. এ.কে.এম জাকারিয়া

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি পরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. এ.কে.এম জাকারিয়াকে জাতীয় পল্লী উন্নয়ন স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণায় ঈর্ষণীয় সাফল্য, আরডিএ বগুড়ার প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও তথ্য সম্ভারের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ব্যতিক্রমধর্মী উল্লেখযোগ্য ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম কাছ থেকে সম্মাননাসহ স্বর্ণপদক গ্রহন করেন ড. একেএম জাকারিয়া। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান,পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক সুপ্রিয় কুমার প্রমুখ।

সম্প্রতি অবসরে যাওয়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (আরডিএ) পরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. এ.কে.এম জাকারিয়া। অবসরে গিয়েও তিনি তার মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মধ্যেদিয়ে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে মূল প্রবন্ধটি আরডিএ সাবেক মহাপরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম ও পরিচালক (অবঃ) ড. একেএম জাকারিয়া যৌথভাবে সম্পাদনা করেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. একেএম জাকারিয়া তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণামূলক কাজের জন্য দেশ-বিদেশে পল্লী উন্নয়ন একাডেমিকে ব্যাপক পরিচিত ও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আরডিএ বগুড়ার ক্যাম্পাসকে দীর্ঘ ৩০ বছরের সাধনায় প্রকৃতি, প্রযুক্তি ও তথ্য সম্ভারের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ করতে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। আরডিএ ক্যাম্পাস এখন বিলুপ্ত প্রায় খনার বচনের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালার পরিণত হয়েছে। তার প্রচেষ্টায় চর গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র (সিডিআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োগিক গবেষণায় ড. জাকারিয়া ঈর্ষণীয় সাফল্য। খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী উন্নয়ন, বীজ প্রযুক্তি,ই-কৃষি,চর উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে উদ্ভাবিত মডেল এবং দেশ বিদেশের জার্নালে প্রকাশিত শতাধিক গবেষণা প্রকাশনা আরডিএ কে এনে দিয়েছে উচ্চ মর্যাদা। তাঁর  উদ্ভাবিত মারিয়া বীজ প্রযুক্তি মডেল দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে।

১৯৮৬ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) বগুড়ায় কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে কৃষি সেক্টরে সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি ২০০৪ সালে অনান্যদের সাথে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পুরস্কারও অর্জন করেন। এছাড়াও ফুড এন্ড এগ্রিকালচার এ্যাওয়ার্ড (অক্সফাম)-২০১১, সিটিস্কেপ গ্রীন ইনোভিশন এ্যাওয়ার্ড-২০১৩, আইটেব লিভারশীপ এ্যাওয়ার্ড-২০১১, যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ পুরস্কার ২০০৪, ভারত থেকে ফ্লেম এ্যাওয়ার্ড এশিয়া-২০১৬ (গোল্ড মেডেল) এবং ইউএসএআইডি-ঢাকা কর্তৃক ই.এজি এ্যাওয়ার্ড ২০১৪ অর্জন করেন। ভারত থেকে ফ্লেম এশিয়া অ্যাওয়ার্ড ও ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড সহ অনেক। আরডিএ' র স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জনেও তারঁ গবেষণা ফলাফল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল।তাঁর লেখা রিসোর্স বুকের দুটি চ্যাপ্টার ফিলিপাইনের লস্ ব্যানোস বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সট বুকে অন্তভূক্তির মর্যাদা পেয়েছে।

মারিয়া বীজ প্রযুক্তি, গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নে বীজ প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসা প্রবর্তন, ভূট্টা বীজের প্রটোকল উদ্ভাবন কিংবা সিডিআরসি প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও অসংখ্য গবেষণা রয়েছে ড. জাকারিয়ার।জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জৈব প্রযুক্তিতে দেশে কম সেচে ফসল ফলানোর প্রযুক্তি সেটিও তাঁর হাতে তৈরি। জৈব বালাইনাশক তৈরিতে তিনি টাইকোড্রার্মা ছত্রাক নিয়েও কাজ করেছেন।এছাড়াও তিনি পল্লী গ্রামে ঘুরে ঘুরে কোন ফসলের কি চিকিৎসা তা দিয়ে বেড়ান। তাঁর উদ্যোগেই বগুড়ার শাহজাহানপুরে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি গ্রামে ‘পল্লী ফসল ক্লিনিক’ তৈরি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি কৃষকদের কাছে ‘ফসলের ডাক্তার’ নামেই বেশি পরিচিত। ফসলের রোগবালাইয়ের সেবাপ্রাপ্তি আরো সহজ করতে বর্তমানে এগুলোকে ডিজিটাল এনিমেশন ডিজিটাল রূপ দেওয়া হচ্ছে।

১৯৯৭ সাল থেকে তিনি হাইব্রীড ভূট্টা বীজ উৎপাদনের টেকনিক্যাল প্রটোকল উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভূট্টা চাষ সম্প্রসারণ। তার উদ্ভাবনের ফলে প্রতি কেজি আমদানীকৃত ভূট্টা বীজ ৮ শত টাকার স্থলে মাত্র দেড়শ টাকায় নেমে আসে। একারণেই দেশে ভূট্টা চাষ ও পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করে। আর এ কাজটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমিকে স্বাধীনতা পদক-২০০৪ এনে দিতে সহায়তা করে।

কৃষিবিজ্ঞানী ড. জাকারিয়ার  প্রতিষ্ঠিত চর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (সিডিআরসি) । চরাঞ্চলের কৃষির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছিল কৃষিপণ্যের যথাযথ বিপণন ব্যবস্থা না থাকা। চরাঞ্চলের কৃষকরা অনেক কষ্ট করেই কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন। কিন্তু একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে তারা ফসল উৎপাদন করেও সুবিধা করতে পারতেন না। আবার চরে কোন কোন ফসল ফলানো যেতে পারে তা নিয়েও চরাঞ্চলের মানুষের তেমন জ্ঞান ছিল না। সিডিআরসি প্রতিষ্ঠার ফলে বিভিন্নভাবে তাদের পাশে থেকে চরের কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।