টাঙ্গাইলে কলকারখানার বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে

কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে কলকারখানার বর্জ্য ও অপরিকল্পিতভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে দিনের পর দিন দুষিত করা হচ্ছে পরিবেশ। এ ছাড়াও আবর্জনার দুর্গন্ধে নানা রোগে আক্রান্তসহ চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, শিল্পকারখানার বর্জ্যে থেকে বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশ দুষণসহ মানব দেহের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি এলাকাবাসী।

টাঙ্গাইল শহরের প্রধান প্রবেশ পথ রাবনা বাইপাস ও বেবীস্ট্যান্ডে ময়লা আবর্জনার স্তুপ ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে পৌরসভা। অপরদিকে পৌর এলাকার ময়লা, বিষাক্ত ও দূর্গন্ধযুক্ত পানি সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে লৌহজং নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে করে মাটি, বায়ু ও পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) ব্যবহার ছাড়াই তারটিয়া বিসিক এলাকার ইনিভার্সাল ইয়াং ডাইং, মহেড়া পেপার মিলসসহ বেশ কয়েকটি কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য লৌহজং নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এতে নদীর জলজ উদ্ভিদ, মাছ, ব্যাঙ মারা যাওয়াসহ পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে।

রাবনা বাইপাসের মোটর মেকানিক হাসেম চান বলেন, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ময়লা গুলো গাড়িতে করে এনে রাবনা বাইপাসে রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। এতে আমাদের কাজ করতে খুব সমস্যা হয়। কোন কাস্টমার এসে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে চায় না। অনেক পথচারী নাক মুখ বেধে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে।

পরিচ্ছন্ন কর্মীরা জানিয়েছেন, পৌর কর্মকর্তাদের অনুমতিতেই টাঙ্গাইল শহরের রাবনা বাইপাস এলাকা ও বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় বিভিন্ন এলাকার ময়লা ফেলা হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ হলেও নির্দেশ থাকায় শহরের প্রবেশ পথ গুলোতে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে।

তারটিয়া এলাকার বাসিন্দা জব্বার মিয়া বলেন, লৌহজং নদীতে আগে নিজেরাও গোসল করতাম, বাড়ির গরু বাছুরও গোসল করাতাম। কিন্তু বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্যে দূর্গন্ধের কারণে নদীর পাড়ে দাঁড়ানো যায় না। গোসল করলে শরীর চুলকানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হই। তাই বছর দশেক আগেও নদীর পানি ব্যবহার করলে এখন করি না।  

প্যারাডাইস পাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ শংকর জানান, ড্রেনের মাধ্যমে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি সরাসরি লৌহজং নদীতে ফেলা হচ্ছে। আগে নদীর পাড় দিয়ে স্বস্তিতে চলাচল করতে পারলেও দূর্গন্ধের কারণে এখন চলাচল করা খুব কষ্টসাধ্য। পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কোন সুরাহা পাইনি। নাক চেপে ধরে নদীর পাড় দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আগে নদীর মাছ অনেক সুস্বাদু লাগলেও এখন তেমন মাছই থাকে না, জলজ প্রাণিও চোখে পড়ে না।

ইউনিভার্সাল ইয়াং ডাইং এর জিএম সুলতান আহমেদ খান বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ আমরা কখনই করিনা। সব সময় আমাদের প্রতিষ্ঠানের ইটিপি ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ চন্দ্র বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) ব্যবহার করার কথা থাকলেও বিভিন্ন শিল্প কারখানা গুলো তা করছে না। এতে ওই সব শিল্প কারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে নদীর পানি, বায়ু দূষণসহ গবাদি পশু, হাস মুরগির মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার্থে বিভিন্ন সময় বেলাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদি সংগঠন গুলো একত্র হয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি ও বিভিন্ন সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হলেও আজও কোন সুরাহা পাইনি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, তারটিয়া এলাকার ইনিভার্সাল ইয়াং ডাইংসহ বেশ কয়েকটি কলকারখানার বর্জ্য লৌহজং নদীর পানিতে পড়ে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। এতে মানবদেহের ব্যাপক ক্ষতিও হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, পৌর এলাকার ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত জায়গা ঠিক হলে রাবনা বাইপাসে ময়লা ফেলা হবে না। অপর দিকে ময়লা পানি সরাসরি নদীতে না ফেলার জন্যও পরিকল্পনা আছে। এছাড়াও নদীর দুই পাড় পরিস্কার করে রাস্তা নির্মাণ করে নান্দনিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।

সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাব উদ্দিন খান বলেন, এ সব কারণে মানবদের অনেক ক্ষতি হতে পারে। বিষাক্ত পানিতে ডায়ারিয়া, পানি বাহিত রোগ হতে পারে। দেহের লিভার কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কলকারখানার দূষণটা আমাদের আইনের আওতায় পড়ে। কোন শিল্প কলকারখানা যদি ইটিপি ব্যবহার না করে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।