শেকৃবিতে বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত¡ সমিতির এর ২য় আর্ন্তজাতিক ও ১২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত¡ সমিতি (পিবিজিএসবি) এর ২য় আর্ন্তজাতিক ও ১২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টিএসসি সম্মেলন কক্ষে ২ দিন ব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত¡ সমিতি এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর যৌথ উদ্যোগে Plant Breeding Transformation in Changing Climate"" মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশ থেকে আগত উদ্ভিদ প্রজননবিদগণ।

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণসহ প্রায় সাত শতাধিক উদ্ভিদ প্রজননবিদ অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সকলকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জলবায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য গবেষণার মাধ্যমে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এফএও এর অ্যাসিষ্ট্যান্ট কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ ড. নুর এ খন্দকার।

পিবিজিএসবি এর সভাপতি ড. মোঃ আজিজ জিলানী চৌধুরী এর সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ও সম্মেলনের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূইয়া।

শেকৃবি উপাচার্য বলেন, আমাদের কৃষি জলবায়ুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন কারণে নানা রকম রোগজীবাণুর আক্রমণ যেমন বৃদ্ধি করতে পারে, তেমনি খরা, শৈত্য, লবণাক্ততার মাধ্যমে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতি লাঘব করার জন্য বিজ্ঞানীরা এখন ফসলের পীড়ন সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের লক্ষে নানা রকম মলিক্যুলার প্ল্যান্ট ব্রিডিং কৌশল আবিষ্কার করে চলেছেন। এই কৌশল প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জিন সম্পদ। দেশের জাতীয় উদ্ভিদ জিন সম্পদ ইনস্টিটিউট গড়ে না ওঠায় একদিকে আমাদের জিন সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবহার যেমন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে বিদেশ থেকে জিন সম্পদ বিনিময় কষ্টকর ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে জন্য দেশের জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা প্রয়োজন।

দুই দিনব্যাপী আয়োজিত আন্তর্জাতিক এ মিলনমেলায় ৫টি টেকনিক্যাল সেশনে দেশী ও বিদেশী প্রথিতযথা প্রজননবিদগণ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ৩৩টি লাগসই গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করবেন। এছাড়া বাছাইকৃত ৬০টি গবেষণালব্ধ ফলাফল পোস্টারের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের নিকট উপস্থাপন করা হবে।

সম্মেলনে উদ্ভিদ প্রজনন এবং কৌলিতত্ত্বে অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃত প্রজননবিদগণ ও প্রতিনিধির মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করেন প্রধান অতিথি। বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও জীবপ্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ-ই-আলমকে উদ্ভিদ প্রজনন এ্যাওয়াডর্স ২০১৯ প্রদান করা হয়। উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) প্রয়াত ড. তমাল লতা আদিত্যকে উদ্ভিদ প্রজনন এ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান করা হয়। কেনাফ ও মেস্তার উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আল-মামুনকে ইয়ং সাইন্টিস্ট এ্যাওয়ার্ড ২০১৯ প্রদান করা হয়। উদ্ভিদের কৌলিসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ জেনেটিক রিসোর্সেস সেন্টারের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ রেজওয়ান মোল্লাকে ইয়ং সাইন্টিস্ট এ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান করা হয়।