উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে হবে-কৃষিমন্ত্রী

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য সুষ্ঠু কৃষিঋণ ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। অনেক তরুণ উদোক্তা বাণিজ্যিক কৃষিতে এগিয়ে আসতেছে, তাদের জন্য ঋণ দরকার। অনেক সময় কৃষকেরা এনজিও বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে। সেজন্য, কৃষকদেরকে সহজ শর্তে, কম সুদে, জামানাত ছাড়া বিনা হয়রানিতে ঋণ দিতে হবে। এ বিষয়টিকে কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

আজ বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকায় খামারবাড়িতে বিএআরসি মিলনায়তনে নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য নিশ্চিতকরণ বিষয়ে আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিসেফ ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বর্তমান সরকার ৫০%-৭০% ভর্তুকি দিচ্ছে। তারপরেও একটা কম্বাইন হারভেস্টার কিনতে কৃষককে স্থানভেদে ১০- ১৪ লাখ টাকা দিতে হয়। ভর্তুকি দেয়ার পরও অনেক কৃষক এত টাকা দিয়ে  হারভেস্টার কিনতে পারে না। এখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, কৃষককে ঋণ দিতে হবে।

ব্যাংক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে একসাথে বসে, সমন্বয় করে মাঠ পর্যায়ে কৃষিঋণ বিতরণের সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন এসময় মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, সকলের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের উৎপাদন ও প্রাপ্যতা অনেক বেড়েছে। তবে অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম, তারা সীমিত আয় দিয়ে এখনো পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। এক্ষেত্রে মানুষের আয় বাড়াতে হবে, এগ্রো প্রসেসিংয়ে বিনিয়োগ করতে হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। সেলক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

খাগড়াছড়ির উদয়ন চাকমা, বগুড়ার আহসানুল কবির ডালিম, মৌচাষী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, যশোরের লেবুতলার মোঃ রফিকুল ইসলাম তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তারা বিনা জামানতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং ব্যাংকের ঋণ সময় মত শোধ করে দিচ্ছেন সে বিষয়টি তুলে ধরেন। এজন্য তারা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক-এর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি জয়নাল আবেদিন,এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব আরিফ কাদরী, ডিএআই পলিসি লিঙ্ক এর কান্ট্রি লিড জনাব ফাহিম খান প্রমুখ।

সম্মেলনের প্রথম দিনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক কৃষি সচিব জনাব আনোয়ার ফারুক। বিগত সম্মেলন পরবর্তী ফাউন্ডেশনের অর্জন সম্পর্কে আলোকপাত করেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।

সম্মেলনে "নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করণ-'ভরসার নতুন জানালা' থেকে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম তাহমিদুজ্জামান। সমগ্র অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের নির্বাহি সদস্য জনাব আতাউর রহমান মিটন।


চা বিরতির পর অনুষ্ঠিত হয় "নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ভ্যালু চেইন জোরদারকরণে সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগ" শীর্ষক বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিড ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক জনাব শহিদ উদ্দিন আকবর। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক ড. জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস।

আলোচক হিসেবে এতে অংশ নেন নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সদস্য ডঃ মোঃ আমজাদ হোসেন, নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার ৫ নং চিরাম ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরী। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ।



বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক এগ্রিলাইফকে বলেন পুষ্টি সম্মত ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার পূরণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলের জন্য পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োজন।

দুই দিনব্যাপী বিসেফ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দ্বিতীয়  জাতীয় সম্মেলনটি সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ায় বিসেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি জয়নাল আবেদিন, সংশ্লিষ্ট প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। আগামীতে একটি শক্তিশালী এলায়েন্স গঠনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে সকলে একসাথে কাজ করবেন বলে উপস্থিত সকল স্টেক হোল্ডার, কৃষিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ সহ সুধীজন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।