বাংলাদেশ এখন আর বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল নয়-কৃষিমন্ত্রী

রাজধানী প্রতিবেদক:বাংলাদেশ এখন আর বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল নয়। দানাজাতীয় খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে সত্য কিন্তু উৎপাদনও বেড়েছে, এতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। প্রতিবছর দেশে ২০ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে, তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা দিয়েছি আমরা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলানায়তনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্যোগে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় 'বিদ্যমান শস্যবিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি' শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।



কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই মুহুর্তে খাদ্য নিয়ে বাংলাদেশে কোন হাহাকার নেই। খাদ্যভাবে মারা গেছে এমন একটি খবরও এখন পত্রিকায় দেখা যায় না। ভোজ্যতেলে আমাদের ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা চলে যায়, এটি কমাতে আমরা কাজ করছি। ভোজ্যতেলে কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায় তার জন্য কৃষিবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সবাই কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তৈল ফসলের উৎপাদনে ৩ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করতে পেরেছি, খুব দ্রুতই আমরা ভোজ্যতেলের আমদানি শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারবো।'



কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. মো. সামছুল আলম  এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'বিশ্বের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বোরো মৌসুমকে গুরত্ব দিতে হবে। ২০২৩ সাল সংকটের বছরকে মাথায় রেখে চলমান আমন, বোরো ও তৈল ফসলের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদনকে কিভাবে এগোনো নিয়ে যাওয়া যায় তা কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষক সবাই মিলেই কাজ করতে হবে। নতুন জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরো ৭ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করতে পারবো। পতিত জমিকে ব্যবহার করতে পারলেও আরো অতিরিক্ত ২ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন সম্ভব। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।'



কর্মশালায় অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব আব্দুল গাফফার খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মো. বেনজির আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।



বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে সারাবিশ্বে খাদ্য সংকটের কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের খাদ্য সংকটের কথা বলেননি। আসলে এ ধরণের সংকট হওয়ার সুযোগ নেই কারণ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের কৃষি এখন বিশ্বের কাছে মডেল কৃষিতে পরিণত হয়েছে। কৃষিজ পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষকরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে। কৃষি এখনো সর্বোচ্চ বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে, আর এই কৃষিই শিল্পের কাঁচামাল দেয়। কৃষি গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা আজ কৃষিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে তা আজ দৃশ্যমান।'



বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. মো. সামছুল আলম বলেন, 'যোগাযোগে সার্বিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। আমদানিকারক হয়েও আমরা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশের চেয়ে কৃষিতে ভালো অবস্থানে। সরকার কৃষিতে গুরুত্বারোপ করার কারণে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সম্ভব হয়েছে। শুধু কৃষিই নয় শিল্পের ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সমন্বিত কৃষি গবেষণার মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব।'



কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি'র আরএফএসের পিএসও এবং বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইব্রাহিম। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) জনাব হাবিবুর রহমান চেধুরী শস্যবিন্যাসে তৈল ফসলের উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উপস্থিতকৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের সকল উপ পরিচালকগণ, জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাবৃন্দ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ, হর্টিকালচার সেন্টার ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রসমূহের উপপরিচালকবৃন্দ, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন অফিসারবৃন্দ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষগণ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর অত্র অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।