সৌর সেচ পাম্প ব্যবহারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আবুল বাশার মিরাজ, ঢাকা : ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর কৃষিকৌশল বিভাগ সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। 'Prospects and Challenges of Solar pump Irrigation in Bangladesh Experiences of BADC' শীর্ষক সেমিনারটি সোমবার (৫ আগস্ট ২০২২) বিকালে ঢাকাস্থ  আইইবির সদর দফতরের শহীদ প্রকৌশলী ভবনের কাউন্সিল হলে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

আইইবির কৃষিকৌশল বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. মোয়াজ্জেম হুসেন ভূঞার সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দনের সঞ্চালনায় সেমিনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল। সেমিনারে সম্মানিত আলোচক হিসাবে হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান  ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব হোসেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএডিসির উপ-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সারওয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইবির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল হুদা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, আইইবির (এইচআরডি) সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান ও বিএডিসির সদস্য পরিচালক  ইঞ্জিনিয়ার ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আইইবির সম্মানী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)। সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইবির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম শেখ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ইঞ্জিনিয়ার মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, সোলার পাম্প ব্যবহার করে বছরে কেবল বিদ্যুৎ ব্যবহারেই ৮৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে সোলার পাম্প ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো ও সেচের ভর্তুর্কিও একটা সময় বন্ধ করা যাবে। কৃষিতে উৎপাদন খরচ কম ও বহুমুখী ফসল উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সোলার পাম্প যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।



বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, সূর্যালোকের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে সৌর চালিত সেচ প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি  খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি লাভজনক ধান চাষকে দ্রুত লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এ প্রযুক্তি  পতিত জমিকে ব্যবহার করে খুব সহজেই ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান  ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব হোসেন বলেন,  সোলার পাম্প নবায়নযোগ্য শক্তির একটি উৎস। নবায়নযোগ্য মানেই এটি পরিবেশ বান্ধব। আমি মনে করি, ডিজেল -বিদ্যুতের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে সোলার পাম্প ব্যবহারে কৃষিতে উজ্জল সম্ভাবনা তৈরি হবে।



আইইবির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, সৌর বিদ্যুৎচালিত সৌর সেচ পাম্প কৃষকদের জ্বালানি নির্ভরতা দূর করেছে, কমিয়েছে ভোগান্তিও । এ প্রযুক্তিতে ডিজেলের জন্য বাড়তি খরচ নেই। নেই ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং চিন্তা। বরং কয়েকগুণ খরচ কমে কৃষকের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় বেড়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দন বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অলাভজনক ধান চাষ, ধান চাষে অধিক পানির ব্যবহার এবং ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি, পরস্পর বিরোধী এই সকল বাস্তবতার আলোকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ হুমকির সম্মুখীন। এছাড়া সূর্যালোকের প্রাচূর্য্য এ দেশের জন্য এক বিরাট আশির্বাদ যা সহায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে যেমন- সৌরশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরে মাধ্যমে (সেচ পাম্প পরিচালনা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি) জাতীয় গ্রীডের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক চাপ হ্রাসকরণ সম্ভব।

প্রধান অতিথির বক্তব্য ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল বলেন, BADC Engineers are the Pioneer of Irrigation of Bangladesh, বিএডিসির প্রকৌশলীরা দেশপ্রেমিক প্রকৌশলী। সোলার পাম্প থেকে উত্তোলনকৃত পানি সেচের পাশাপাশি খাওয়া ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা সুযোগ সৃষ্টি বাংলাদেশের জন্য হবে আর্শীবাদ। এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সেচের ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ শক্তি সাশ্রয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। দেশের ক্রমবর্ধমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা নিরসন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার নির্ভর সেচ সুবিধা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই জরুরী।