কৃষিবিদদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ সমীচীন নয়: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

রাজধানী প্রতিনিধি: কৃষিবিদদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ সমীচীন নয়। যেকোন বিষয়ে ভেদাভেদ ও অনৈক্য সবসময়ই উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে। সবাইকে সব জায়গায় সমানভাবে দেখার প্রয়োজন। কৃষিবিদদের সমান মর্যাদা দিলে এ সেক্টর আরো এগিয়ে যাবে। কৃষিবিদরা যদি এক হয়ে কাজ করে তবে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পের মতো কৃষি পণ্য রপ্তানি করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ভিশনারী নেতা। ৫০ দশকের মাঝামাঝি থেকে আমাদের দেশ ছিল বিশাল খাদ্য ঘাটতির একটি দেশ তখনকার তুলনায় আমাদের জমি বর্তমানে কমে গেছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। জনসংখ্যা হয়ে গেছে সেই তুলনায় প্রায় তিনগুণ তারপরেও শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন এজন্য তিনি কৃষিবিদ ও কৃষকদের স্যালুট জানান।



জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ ১৫ ই আগস্ট সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তথ্য মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমি যারা রচনা করেছিল একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলের মুখোশ উম্মোচন করা প্রয়োজন। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রয়োজন। এ আইনটি যাতে অপপ্রয়োগ না হয় সে লক্ষ্যে সরকার সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে।



কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষিবিদদের গবেষণার কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষিবিদরা নানা জাতের ফল-ফসল-সবজি, উদ্ভাবন করেছেন। জলবায়ু সহিষ্ণ, লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। দানাদার শস্য থেকে শুরু করে সবজি-ফল, মাছ-মাংস দুধ-ডিম নিয়ে কৃষিবিদরা শুধু আমাদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে না তারা সারা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট। এ সময় তিনি কুয়েতে মরুভূমিতে সৃজনকৃত একটি বাগানের উদাহরণ তুলে ধরেন যেখানে কৃষিবিদরা সফলভাবে মরুভূমিতে ফল ফসল ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য এবং অস্ট্রেলিয়াতে বিপুলসংখ্যক কৃষিবিদরা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন যোগ করেন ড. হাছান মাহমুদ। আজ আমরা ধান-পাট-সবজি-আলু-ফল-মাছ-ডিম ও মুরগি উৎপাদনে দেশকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছি এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে।



আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের যে সম্মান, অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছেন সেই ঋণ আমরা কোনদিনও শোধ করতে পারব না। বঙ্গবন্ধু উন্নত সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে চেয়েছিলেন যা তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কৃষি অঙ্গনকে যারা বাঁধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি। কৃষিবিদদের মধ্যে দূরত্ব সকল কৃষিবিদদের জন্যই অমঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।

আধুনিক কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন-এর রূপকার বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কৃষি শিক্ষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিক্ষা গবেষণা সম্প্রসারণ সকল ক্ষেত্রেই মেধাবীরা কৃষিশিক্ষায় সম্পৃক্ত হোক এটি ছিল তার কাম্য। সেখানে ছিল না কোন সংকীর্ণতা। বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা কৃষিবিদদের এক অনন্য মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। আমাদেরকে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে, কৃষিবিজ্ঞানের অনেক প্রসার হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের সাফল্যে দেশবাসী এখন গর্বিত। বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বলেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, আমরা আর অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে চাই না । আমরা চাই উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে। এক্ষেত্রে কৃষিবিদরা পারেন অগ্রণী ভূমিকা রাখতে। এই উন্নয়নের ধারা যদি কেউ প্রতিহত করে তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বারবার এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে এজন্য তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাহাউদ্দিন নাসিম।



মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য একটা ভয়াবহ প্রচেষ্টা দেশের ও দেশের বাইরে চলছে। ১৯৭৫ এর প্রেক্ষাপট রচনা কিছু লোক করেছিল। সে সময় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা, অহেতুক বদনাম সৃষ্টি করাসহ ভয়াবহ নৈরাজ্যের একটি অবস্থা দেশের ভিতরে সৃষ্টি করেছিল কিছু মানুষ। সে মানুষরা নিঃশেষ হয়ে যায়নি।  এ পরিস্থিতিতে মনেপ্রানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন যারা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যারা বিশ্বাস করেন তাদের ঐক্যের ভিত্তি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করা দরকার। মনে রাখতে হবে একজন শেখ হাসিনা থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আবার ফিরে এসেছে।

অলোচনায় অন্যান্য আলোচকরা বলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশকৃত গ্রাজুয়েটদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে কৃষির জাগরণ। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কৃষি শিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কৃষি গবেষণা থেকে উন্নয়ন সম্প্রসারণ সবকিছুতেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ভূমিকা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত। বর্তমান সরকারের যে উন্নয়ন ধারা চলছে তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চায় সে শেকৃবি অ্যালামনাইরা।



শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল আলম প্রিন্স, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ প্রফেসর এ. কে. এম. সাইদুল হক চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মো. সাঈদুর রহমান সেলিম প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।