বাংলাদেশে এ মূহুর্তে কোন খাদ্য সংকট নেই: কৃষিমন্ত্রী

আবুল বাশার মিরাজ, বিশেষ প্রতিনিধি:বাংলাদেশে এই মুহুর্তে কোন খাদ্য সংকট নেই বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি ও গণমাধ্যম শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  তিনি বলেন, খাদ্য সংকটের কারণে যুদ্ধ হয়, রাজনৈতিক অস্থিশীলতা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনে এই ধরণের কোন সমস্যা হবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

আজ রবিবার (১৯ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটি্উশন কনভেনশন হল-১ এ কৃষি তথ্য সার্ভিসের আয়োজনে এ সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বে সারের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও আমাদের দেশের কৃষকরা নামমাত্রমূল্য কিংবা বিনামূল্যে সার পাচ্ছেন। আওয়ামীলীগ সরকারের ১৩ বছরে কোন খাদ্য নিয়ে সংকট হয়নি, আজ দেশ খাদ্যস্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছেন। কেবলমাত্র সারের জন্য ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে যা পৃথিবীর কোন দেশে দেওয়া হয়না।

দূর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে৷ কোভিড, ইউক্রেন- সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন কমেছে, কিন্তু বাংলাদেশে যেন এর প্রভাব না পড়ে সেজন্য আমরা সতর্ক আছি। সিলেটের বন্যায় আমাদের কৃষির ক্ষতি হবে। বীজতলা তৈরি করা কঠিন হবে। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সতর্ক আছে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকরণ মজুদ রয়েছে। গণমাধ্যমে এখন আর মঙ্গার বিষয়টি আসে না,  এর কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতা।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের 'সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ"-এ প্রতিশ্রুত অন্যতম লক্ষ্য ও অঙ্গীকার 'সকলের জন্য পুষ্টিসন্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪২) প্রণয়ন করেছে। কৃষি, কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) কৌশল অনুসরণের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে উন্নীত হতে চাই । এ লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকায়ন, যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিক কৃষির বিকাশ সাধন, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, সাপ্লাই চেইন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা, গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন, বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ এবং কৃষিজ ও অকৃষিজ পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত ও গতিময় করা হবে।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আলোকবর্তিকা তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতে। তাঁর নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও শান্তির 'সোনার বাংলা' গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছি।



কৃষি মন্ত্রালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. সুরজিত  সাহা রায়। অনান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, গণমাধ্যম কৃষিবিপ্লবে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আমি একজন পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে কৃষি ও কৃষি বিষয়ক খবরগুলো একটু বেশিই আগ্রহ ভরে দেখি ও পড়ি। এটিই সত্য গণমাধ্যমের কল্যাণে ছাদ কৃষি, নগর কৃষি সবার কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পরিবেশের প্রাণ বৃক্ষ, অপ্রয়োজনীয়ভাবে বৃক্ষ নিধন রোধে গণমাধ্যম অনন্য ভূমিকা ও জনসচেতনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে।  



তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণার কারণে আজকে বাংলাদেশের কৃষি অনেক দূর এগিয়েছে। আয়তনে ছোট ও ঘনবসতি দেশ হওয়ার পরও কৃষিতে আমাদের সাফল্য অনেক। প্রতিবছর আমাদের কৃষিজ উৎপাদন বাড়ছে। স্বাধীনতার পরে আমাদের মোট কৃষিজ উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ মেট্রিক টন,  সেখানে বর্তমান উৎপাদন বেড়েছে ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন অথ্যাৎ ৪ গুণের বেশি বেড়েছে। প্রতিবছর ঘড়বাড়ি,  কলকারখানা, রাস্তা নির্মাণের কারণে কৃষি জমি কমলেও কৃষিতে আমাদের উৎপাদনের ধারা কমেনি। এটি আমাদের মত উন্নয়শীল দেশের জন্য বহিঃবিশ্বের কাছে একটি অবাক করা বিষয়। আর এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারনে।

শাইখ সিরাজ বলেন, প্রযুক্তিকে দূরে রেখে কৃষির উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। বৈশ্বিক কৃষি সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর এ পরিবর্তনের সাথেই আমাদের কৃষিকে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করে বাংলাদেশের কৃষিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।



সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যামেরিটাস অধ্যাপক ও বাকৃবির সাবেক উপাচার্য এম. এ. সাত্তার মন্ডল। এসময় তিনি বলেন, গ্রামে এখন একটা নতুন অভিজাত ক্লাস গড়ে উঠছে। যাদের নিজের জমি আছে কি নাই সেটা মুখ্য নয়, কিন্তু তাদের আছে মেধা, দক্ষ কৃষি উদ্যোগ, পুঁজি ও বিদ্যা-বুদ্ধি। তারা তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ এবং  আধুনিক কৃষির প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত। এ শ্রেণিটির প্রধান শক্তি হচ্ছে, আধুনিক কৃষি এবং ব্যবসায়িক কৃষি সম্পর্কে জ্ঞান। এদের প্রত্যেকেই লাভজনক কৃষি পণ্যের বাজারের দিকে একটা ঝোঁক সৃষ্টি হয়ে গেছে। তারা লাভের জন্য কৃষি করছেন, কৃষি ব্যবসা করছেন। দেশ বিদেশে কৃষি যেখান থেকে সম্ভব নতুন নতুন কৃষির ধারণা লাভ করছেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দরকার প্রয়োজনমত ঋণ, কারিগরি সহায়তা ও আধুনিক কৃষি বিপণনব্যবস্থা। তবে কৃষি আরো এগিয়ে নিতে আমদানি কমাতে হবে। লবণ সহিঞ্চু জাত উদ্ভাবনে মনোযোগ আরো বাড়াতে হবে, স্মার্ট এগ্রিকালচার টেকনোলজি ব্যবহার করার তাগিদও দেন তিনি৷

সেমিনারে মুক্ত উপস্থিত গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়৷ এটি পরিচালনা করেন কৃষি মন্ত্রালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম। এখানে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জা সিদ্দিক সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন।