কৃষির সর্বক্ষেত্রেই বিচরন করতে হবে-ড.আনসারী

রাজধানী প্রতিনিধি:কৃষির সর্বক্ষেত্রেই বিচরন করতে হবে। যুগোপযোগী সঠিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, চাষ ব্যবস্থাপনা, ব্র্যান্ডিং এসব কিছুর সমাবেশ ঘটাতে হবে মৎস্য সেক্টরে। তাহলেই কাংখিত ফল পাওয়া সম্ভব। দেশে ‍উৎপাদিত অতিরিক্ত মাছ বিদেশে রপ্তানির জন্য যেমন প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন মেনে মাছ চাষ করতে হবে তেমনি ব্র্যান্ডিং করতে হবে মৎস্য পণ্যের।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর তোপখানাস্থ বিএমএ মিলনায়তনে সারাদেশের মৎস্যচাষিদের নিয়ে “জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস ও FOAB সম্মাননা ২০২২” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশন-এর প্রেসিডেন্ট ড এফ এইচ আনসারী। ফিস ফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (FOAB) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।



জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন উল্লেখ করে ড এফ এইচ আনসারী বলেন, এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা অনেক নতুন নতুন Technology ও সম্ভাবনার কথা অবহিত হয়েছেন যা উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহ দিবে। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে Culture Fish-এর উৎপাদন বিগত ১০ বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তথা মৎস্য খামারিদের নিবিড় পরিচর্যা, অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তবে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির আরও সুযোগ আছে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এসময় তিনি ভিয়েতনামে পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া এবং চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির উদাহরণ উল্লেখ করেন।



প্রধান অতিথি ড.আনসারী বলেন, বিশ্ববাজারে হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়ার ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রঙ ও গন্ধের কারণে রপ্তানি বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া। এজন্য তিনি, আদর্শ পুকুর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূর্গন্ধ মুক্ত তেলাপিয়া উৎপাদনে ও হোয়াইট ম্যাসল ফিলে পাঙ্গাস উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে বলেন। সেই সাথে এফসিআর উন্নত করার মাধ্যমে আমাদের উৎপাদন খরচ উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তিনি। মৎস্য উৎপাদনে যেহেতু সবচেয়ে বেশী খরচ মূলত হয় খাদ্যে কাজেই ফিড ব্যবস্থাপনায় খামারীদের গুরুত্ব প্রদান করার অনুরোধ জানান ড আনসারী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোয়াব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা শামসুর রহমান শাহীন। বিশিষ্ট মৎস্যবিদ, সীফুড হ্যাচাপ ও গ্যাপ বিশেষজ্ঞ, ডিপ সী ফিসারিজ লিমিটেড (র‌্যাংগস গ্রুপ)-এর পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক -এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। আলোচক হিসেবে ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় কুমার চক্রবর্তী।



প্রধান অতিথি আরো বলেন, আমাদের মৎস্য উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানির দিকে যেমন জোর দিতে হবে তেমনি ভ্যালু এডেড প্রোডাক্ট যেমন ফিশ ফিংঙ্গার, ফিশ চিপস, ফিশ বল, ফিশ সস, ফিশ সুপ, ফিশ নুডলস ইত্যাদি তৈরি এবং ভোক্তাদের নিকট এ প্রোডাক্টগুলোর চাহিদা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্ট্রিট ফুড সপ, রেস্টুরেন্টসহ ভোক্তার প্লেটে পোঁছানোর জন্য এ প্রোডাক্টগুলোর প্রচার ও প্রসার বাড়াতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার সহযোগিতা বিশষভাবে কামনা করেন তিনি।

ড আনসারী বলেন, এসিআই বাংলাদেশে আধুনিক মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ ও মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছে।  “জাতীয় মৎস্য কংগ্রেস ও FOAB সম্মাননা ২০২২” শীর্ষক অনুষ্ঠানে তাদের কার্যক্রম কিছুটা প্রদর্শন করতে পেরে এসিআই অত্যন্ত আনন্দিত। এ ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সংগঠিত হবে এবং এসিআই  মৎস্য চাষীদের সাথে একইভাবে থাকার চেষ্টা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষ ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য গবেষণায় জনাব খন্দকার হাবিবুর রহমান, মৎস্য সম্প্রসারণে মো: তোফাজউদ্দিন আহমেদ ও মোঃ আলমগীর হোসেন, তেলাপিয়া পোনা উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তা ডা. আবুল কাশেম মোহাম্মদ গোলাম করিম, মৎস্য খামারের জীবনের গল্প শামীমা সুলতানা শাওন, মৎস্য সাংবাদিকতায় বুলবুল আহমেদ, রুই মাছের উৎপাদন আবুল বাশার মোহাম্মদ শহিদুল আলম,   সফল উদ্যোক্তা আবু সাঈদ বকাউল, বাংলাদেশে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতির জন্য মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সফল নারী উদ্যোক্তা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, সফল পাবদা চাষি মোঃ খায়রুল কবির চঞ্চল-কে FOAB সম্মাননা ২০২২” পদকে ভূষিত করা হয়।



অনুষ্ঠানে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মৎস্যচাষি, আড়ৎদার, সরকারি-বেসরকারি মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীগণ অংশগ্রহণ করেন। এতে কারিগরি সহযোগিতা করে মৎস্য অধিদপ্তর, ফিসারিজ প্রোডাক্ট ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উন্মুক্ত আলোচনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মৎস্য চাষিগণ তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবী দাওয়ার কথা তুলে ধরেন।