BLS-এর নবম সাধারণ সভা ও নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির আয়োজনে নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও বি এল এস এর নবম সাধারণ সভা আজ ২২ শে মার্চ ২০২৪ রাজশাহীর একটি রেস্তোরায় বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. তারিকুল হাসান।

সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ সরওয়ার জাহান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ডীন ও সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার এবং সাধারণ ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মোঃ এনামুল হক।

বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিজ্ঞান সেবী সংস্থা জন্য আর্থিক অনুদান ২০২৩-২০২৪ ফান্ড হতে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে সাধারণ সভা ও নিরাপদ আমিষ তৈরিতে করণীয় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সংস্থাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে লাইভস্টক সেক্টরে অবদান রাখার জন্য কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল আলম মিয়াকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

সোসাইটির সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ বিগত আর্থিক বছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সোসাইটির সারা বাংলাদেশ হতে প্রায় দুই শতাধিক সদস্য সুধীজন উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করে।

সাধারণ সম্পাদক ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল নিম্ন আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশের তার প্রান্তে। যখন কোনো দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সে দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে অবস্থান বা জনমিতিক মুনাফায় অবস্থান করছে বলে ধরে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের সংজ্ঞা অনুযায়ী ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হলো, 'অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা, যা জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন। বর্তমানে, এদেশের মোট কর্মক্ষম অর্থাৎ ১৫-৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী সংখ্যা প্রায় সর্বোচ্চ হতে চলেছে যা কিনা ২০৪১ সাল নাগাদ সর্বোচ্চ হবে।

ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ বলেন, "আমরা যদি আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের দিকে দেখি, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ দশমিক ৩৮ গ্রাম মাংস, ২২১ দশমিক ৮৯ মিলি দুধ ও প্রায় ১৩৪টি ডিম গ্রহণ করছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত হাড়ের চেয়ে সামান্য কিছুটা কম। সামগ্রিকভাবে দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সাধারণ জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংস, দুধ ও ডিমের চাহিদা এবং গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে"। সে অনুযায়ী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর শুধু ডিমের এ চাহিদা পুনরায় নির্ধারণ করেছে। এ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নে বছরে মাথাপিছু ২০৮টি ডিমের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে জনপ্রতি সপ্তাহে গড়ে চারটি ডিমের প্রয়োজন হবে।

তিনি আরো বলেন আমরা যদি বর্ধিত জনসংখ্যার কথা চিন্তা অর্থাৎ জনসংখ্যার এ স্বর্ণযুগকে কাজে লাগাতে চাই তবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এই কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি তাই কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি তার সেবামূলক কার্যক্রম সম্প্রসারনের লক্ষ্যে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ বায়ো-ডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশন (BBCF), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখা (WPSA-BB) সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সমাজসেবা এবং ধরিত্রী রক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে।

সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো: রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল এর সঙ্গে প্রাণী সেবার কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএলএস রোটারির তিনটি আরসিসি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা তৈরীর বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রাণীসম্পদ সেবা কর্মীদের জন্য বি এল এস মডেল ভেটেরিনারি ট্রেনিং ও মেডিসিন পয়েন্ট তৈরি করেছে যা পরিচালনার জন্য রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এর রোটারি কমিনিটি ক্রপ মাধ্যমে যৌথ কমিটি কাজ করছে। এছাড়া সোসাইটি নিকট ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে স্বল্প মেয়াদে ট্রেনিং কার্যক্রম করাতে সক্ষম হবে। এই কার্যক্রম একদিকে যেমন দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করে ২০৪১ সালের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। পাশাপাশি ট্রেনিং এর ফলে কিছুটা হলেও সোসাইটির আয়ের নতুন উৎসের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে মনে করেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মো. তারিকুল হাসান বলেন, নিরাপদ আমিষ হচ্ছে কেমিকাল ও অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি আমিষ উৎপাদন। আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দেশের প্রতিটি খামারিকে নিরাপদ আমিষ তৈরির কৌশল সম্পর্কে অবগত করা একান্ত প্রয়োজন।

মুখ্য আলোচক প্রফেসর ড. সৈয়দ সরওয়ার জাহান বলেন, শুধু নিরাপদ আমিষ খামারিরা উৎপাদন করলেই হবে না। চাই সচেতন ভোক্তা ,কেননা সামান্য একটু দাম বাড়লেই ভালো প্রোডাক্ট কেউ কিনতে চায় না। অতএব প্রত্যেকেই আমাদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে ।

সভাপতি প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, প্রাণিসম্পদে উন্নয়ন, প্রচার ও বিকাশে একজন যোদ্ধা হিসেবে আগামী প্রজন্মের জন্য আপনাদের কন্ঠসর ও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং সোসাইটির কাজে সমর্থন দিয়ে যাবেন।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ড. ইসমাইল হক, ডা. রিয়াজুল ইসলাম, মোসা. সেলিনা বেগম, মোঃ হাবিবুর রহমান, মিজানুর রহমান, রোটারিয়ান হাসিবুল হাসান নান্নু, মোঃ জাহিদ হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী ও বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীবৃন্দ।