সমীরণ বিশ্বাস:লিচু বাংলাদেশের একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল, যার চাষে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। দেশের উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুর অঞ্চলে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া, তুলনামূলক কম রোগ-পোকা এবং বাজারে ভালো দাম থাকায় লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। লিচু চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি এবং পর্যাপ্ত সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা দরকার।
গ্রীষ্মকালীন মাঝামাঝি সময়ে ফল দেয় বলে জলবায়ুগত দিক থেকেও এটি উপযোগী। একটি লিচু গাছ ২০-৩০ বছর ফল দিতে পারে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং মে-জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কলমের মাধ্যমে গাছ রোপণ করা উত্তম এবং বছরে ২-৩ বার সুষম সার প্রয়োগ দরকার। পরিপক্ব গাছে সেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং পোকামাকড় দমনের মাধ্যমে ফলন বাড়ানো সম্ভব। রপ্তানি সম্ভাবনা, দেশীয় চাহিদা এবং কৃষক আয়ের দিক বিবেচনায় লিচু চাষ কৃষির একটি সম্ভাবনাময় খাত। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় লিচু চাষ দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
লিচু গাছে সার প্রয়োগের সময় ও নিয়ম: ডাল ছাঁটাইয়ের পর (আগস্ট-সেপ্টেম্বর):গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। নভেম্বর মাসে (ফুল আসার আগে): ইউরিয়ার অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। ফল ধরার পর (এপ্রিল-মে): বাকি অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
৪-৬ বছরের গাছে সারের পরিমাণঃ জৈবসার ২৫ কেজি, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ৬০০ গ্রাম , এমওপি ৫০০গ্রাম, জিপসাম ৬০০গ্রাম, জিংক সালফেট ৩৫ গ্রাম।
প্রয়োগ পদ্ধতি: গাছের কান্ড থেকে ১.৫–২ ফুট দূরত্বে রিং আকারে মাটি খুঁড়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের পর মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে। ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার মাটির উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক।
লিচু গাছের সুস্থ বৃদ্ধি, অধিক ফুল ও ফল উৎপাদন এবং দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সঠিক ও সুষম সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছের বয়স, মাটির ধরন ও স্থানীয় পরিবেশ বিবেচনায় নিয়েই সার প্রয়োগ করতে হয়। পর্যাপ্ত গোবর, নাইট্রোজেন (ইউরিয়া), ফসফরাস (টিএসপি) ও পটাশ (এমওপি) নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করলে গাছের পাতা সবুজ, ফুলধরা ভালো এবং ফলের গুণমান বৃদ্ধি পায়। তবে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ বা অনুপযুক্ত সময় বেছে নিলে গাছে রোগ-বালাই ও ফলঝরা হতে পারে। তাই নিয়মিত মাটি পরীক্ষা, সঠিক সময়মতো সার প্রয়োগ এবং জৈব ও অজৈব উপাদানের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারই লিচু চাষে টেকসই সার ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।
লেখক:কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।