এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই) “মাঠ পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালা বাস্তবায়ন” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউট, নরসিংদী প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (SALO), FAAI ও AI টেকনিশিয়ানগণসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এটি ছিল কেবল একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান নয়; বরং মাঠ পর্যায়ের কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের বাস্তব অভিজ্ঞতা, অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় বিষয়ে একটি মুক্ত আলোচনা ও মূল্যায়নের প্ল্যাটফর্ম। কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্য ও উপস্থাপনাগুলো নরসিংদী জেলার কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের বাস্তব সফলতা ও সক্ষমতাকে তুলে ধরে।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহজামান খান। তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “উন্নত জাতের প্রাণি উৎপাদন ও স্থানীয় জাতের জিনগত উন্নয়নে মাঠ পর্যায়ের AI টেকনিশিয়ানরা হচ্ছেন এই বিপ্লবের প্রকৃত নায়ক।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, ঢাকা বিভাগের পরিচালক জনাবা ফরিদা ইয়াছমিন। তিনি কৃত্রিম প্রজনন সেবাকে একবিংশ শতাব্দীর প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।
সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “নরসিংদীতে AI সেবার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ, মনিটরিং, প্রণোদনা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।”
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের উপপরিচালক (পরিসংখ্যান) ড. মোঃ সফিকুর রহমান, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, ঢাকার উপপরিচালক ডাঃ মেহেদী হাসান ভূঁইয়া, “প্রুভেন বুল উৎপাদন প্রকল্প”-এর প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা ট্রেনিং অফিসার ডাঃ মারুফ হাসান তালুকদার এবং থেরিওজেনোলজিস্ট ডাঃ সাবিহা পারভীন।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডা. মোঃ মাহবুবুল ইসলাম (টুকু), উপপরিচালক, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, নরসিংদী। কর্মশালায় নরসিংদীর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের পরিসংখ্যান, উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি চমৎকার উপস্থাপনা দেন থেরিওজেনোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল শামীম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মোঃ সফিকুর রহমান (শশী)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলার কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭,০২৩টি, যার মধ্যে ৫৭,৬৩০টি অর্জিত হয়েছে (লক্ষ্যমাত্রার ৮৬%)। গর্ভধারণের সংখ্যা ২৮,৪৯১টি, বাচ্চা উৎপাদন ২৬,১৩৪টি এবং AI ইনডেক্স ২.০২—যা মাঠপর্যায়ে এআই কার্যক্রমের সফলতা ও কার্যকারিতার বাস্তব প্রতিফলন।
এই অর্জনের মূল কারিগর হলেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এআই টেকনিশিয়ানগণ, যারা প্রতিনিয়ত গবাদিপশু মালিকদের দোরগোড়ায় গিয়ে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের হিট নির্ণয়, ম্যানুয়াল রেকর্ডিং ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় প্রজনন পরিচালনা যেন হয়ে উঠেছে এক নীরব বিপ্লব।
কর্মশালায় ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে গুরুত্বারোপ করা হয় সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ, সার্ভিস রেকর্ডের ডিজিটাইজেশন, প্রমাণিত বুলের সিমেন সরবরাহ, প্রণোদনার সঠিক মূল্যায়ন ও রিপিট ব্রিডিং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর।
অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নরসিংদীর কৃত্রিম প্রজনন সেবার এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, এটি একটি জাতীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সারা দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নের অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠবে।