বেগুনের ভাইরাসজনিত রোগ ও প্রতিকার

ড. কে. এম. খালেকুজ্জামান: বেগুন (বৈজ্ঞানিক নাম Solanum melongena বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। তবে বেগুন চাষে ভাইরাসজনিত রোগ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেয়, যা উৎপাদন ও গুণগত মান দুটোই হ্রাস করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি ভাইরাসজনিত রোগ হলো:

১. বেগুনের মোজাইক রোগ (Tobacco Mosaic Virus - TMV / Brinjal Mosaic Virus)

রোগের লক্ষণ:

* পাতায় হালকা–গাঢ় সবুজ বা হলদে মোজাইক দাগ দেখা যায়।
* পাতা বিকৃত (distorted) ও কুঁচকে যায়, আকারে ছোট হয়।
* পাতার মাঝখানে সাদা ড্যাগ বা রেখা দেখা যায়।
* গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, দুর্বল হয়ে পড়ে।
* ফুল ও ফল কম ধরে, ফলে আকারে ছোট হয়।
* বিকৃত ফল বাজারে বিক্রিযোগ্যতা হারায়।

২. পাতার কুঁচকে যাওয়া রোগ (Leaf Curl Virus)

রোগের লক্ষণ:

* পাতার প্রান্ত ভেতরের দিকে কুঁচকে যায় ও মোড়ানো হয়ে পড়ে।
* পাতার রঙ ফ্যাকাসে বা হলদে ছোপযুক্ত হয়ে যায়।
* পাতাগুলো মাঝে মাঝে খাড়া হয়ে থাকে।
* গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় ও ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
* আক্রান্ত গাছে কখনো কখনো ফুলই ধরে না।
* ফল ধরলেও তা বিকৃত আকার ধারণ করে।

রোগের বাহক
উক্ত ভাইরাস রোগগুলো সাধারণত নিচের কীটপতঙ্গ দ্বারা ছড়ায়:
সাদা মাছি (Whitefly)
এফিড (Aphid)

প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • রোগমুক্ত ও মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করুন
  • রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করুন
  • বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা উচিত
  • পরিচ্ছন্ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় গাছ রোপণ করতে হবে
  • আক্রান্ত গাছ দ্রুত তুলে পুড়িয়ে ফেলুন বা মাটিতে পুঁতে ফেলুন
  • ফসল পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন (Crop rotation) করুন
  • Silver reflective mulch ব্যবহার করুন, যা এফিড প্রবেশ কমায়
  • নিয়মিত জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করুন
  • ইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid) জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করুন।

বেগুনের ভাইরাসজনিত রোগ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে রোগের বিস্তার অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কৃষকদের সচেতনতা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগই টেকসই বেগুন চাষে সহায়ক হবে।

লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অব.), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়া