রাসেল উদ্দীন: চালের ক্রমাগত অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ার কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি অবিলম্বে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, প্রতি সপ্তাহে চালরে দাম ২-৫ টাকা করে বাড়িয়ে সর্বশেষ ভরামৌসুমে ৮-১০ টাকা বাড়ার কারণে সাধারণ মানুয়ের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকরি মুখে পড়েছে।
সরকার নিত্যপণ্যের বাজার তদারকিতে কিছু উদ্যোগ থাকলেও চালে বাজার নিয়ন্ত্রণে সেধরণের দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় চালের অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছা মতো দাম বাড়ায় ও কমায়। আবার খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) ও টিসিবির ফ্যামিলি র্কাড র্কাযক্রমও সক্রিয় নয়। সেকারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে জনজীবনে তীব্র সংকট নেমে এসেছে। ০৩ জুলাই নগরীর জামালখান প্রেসক্লাব চত্ত্বরে "ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও" স্লোগান নিয়ে আয়োজিত প্রতিবাদী মানববন্ধনে বিভিন্ন বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান।
যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসয়িশেন অব বাংলাদশে (ক্যাব) চট্টগ্রাম, প্রাণ ও আইএসডইি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখনে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান, বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেলস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন এর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি ফারহানা আখতার, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফরিদা খানাম, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব পাঁচলাইশের এবিএম হুমায়ুন কবির, সুবজের যাত্রা নির্বাহী পরিচালক সায়রা বেগম, পিআইজি গ্রুপ নেতা আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের নেতা আবদুল মান্নান আসিফ, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, জাতীয় তরুন সংঘের বিভাগীয় পরিচালক আলতাফ হোসেন, হোপ ফাউন্ডেশনের বাবুল চৌধুরী, ক্যাব চকবাজারের মোহাম্মদ আরিফ, চট্টলার কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক কমল চক্রবর্তী, সিএসডিএফ'র প্রকল্প সমন্বয়কারী শম্পা কে নাহার, আইএসডিই বাংলাদেশের ক্যাব কর্মসূচি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, আসফাকুর রহমান, সিরাতুল মুনতাহা, রায়হান উদ্দীন, নাফিসা নবী, রোকেয়া আকতার লতা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের জুন ২০২৫-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত স্বস্তি আসেনি বাজারে। ভোক্তা ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে বাজার নজরদারি না থাকা, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, করপোরটে গ্রুপ ও মিলারদের অবৈধ মজুতদারির কারণে চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এর ফলে কৃষকরা একদিকে তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অন্যদিকে ভোক্তাকে বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, "আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিকর উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল বা সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাত-নির্ভর খাবার খাচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।"
সমাবেশে আরও জানানো হয়, জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের আয় না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ২০২৪ সালের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, এখন প্রতি মাসে ন্যূনতম খাদ্যশক্তিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে একজন মানুষের ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ টাকা, যা খাদ্য দারিদ্র্যসীমার চেয়ে ৬৯.৫ শতাংশ বেশি।
সমাবেশে চালের মূল্য ও সার্বিক মুল্যস্ফীতির নয়িন্ত্রণে সংকটপূর্ণ অবস্থা নিরসনে নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরা হয়:
১। কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২। দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩। বাজার, উৎপাদন, মূল্য নির্ধারণ এবং ভোগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার সহায়তায় টিসিবি এবং ওএমএস কর্মসূচির আওতাবৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৫। মিল, করপোরেট গ্রুপসহ চালের বাজার যথাযথ মনিটরিং এবং সিন্ডিকেট এর অপতৎপরতা রোধ করার মাধ্যমে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চালের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।