দুই অনুষদের টানা আন্দোলনে বাকৃবির অচলাবস্থা

বাকৃবি প্রতিনিধি: গত ৩০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক গেজেটে নন ক্যাডার কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার কয়েকটি পদে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর প্রতিবাদসহ সারদেশে সমন্বিত (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সাইন্স ও এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালুর দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে টানা ১১ দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

পাশাপাশি প্রানী উৎপাদন বিষয়ক চাকরিগুলোতে শুধু পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের রাখা ও সমন্বিত ডিগ্রি চালু না করার দাবিতে টানা ৯ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। একই প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে দুই অনুষদের শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান গ্রহণ করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে তালাবদ্ধ করে রাখছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্যান্য অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার (১৯ জুন) ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর ভবন, কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় ও লাইব্রেরিতে তালাবদ্ধ করে ভবনগুলোর সামনে মিছিল করার মাধ্যমে আন্দোলন কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এদিকে অনুষদের ভেতরে এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান গ্রহণ ও মিছিল বের করে আন্দোলন চলমান রেখেছে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। একইভাবে গতকাল সোমবার (১৮ জুন) পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর ভবন, কোষাধ্যক্ষ ভবন এবং কিছু সময়ের জন্য পূবালী ব্যাংকেও তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এতে প্রায় প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে গুনতে হচ্ছে অপক্ষার প্রহর।

ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্র সমিতির সহ সভাপতি শাহরিয়ার খন্দকার বলেন, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে ডিভিএম ডিগ্রিকে অন্তর্ভুক্তি করে সারাদেশে একক ডিগ্রি চালু করতে হবে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমাদের দাবি পূরণ করেই আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই।

পশুপালন অনুষদের ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি রেজউয়ান উল আমিন বলেন , নন ক্যাডার বা ক্যাডার বহিঃভূত পদে এনিমেল হাজবেন্ড্রির বিপরীতে কোন ডিগ্রি রাখা যাবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নকল্পে মলিকুলার তথা জেনোমিক্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা চলছে, সেখানে জগাখিচুড়িভিত্তিক বি.এস.সি. ভেট. সাইন্স এন্ড এ.এইচ. (অনার্স) তথাকথিত কম্বাইন্ড কোর্স কারিকুলামের গ্রাজুয়েটবৃন্দ বর্তমান প্রচলিত যুগোপযোগী ডিগ্রি বি.এস.সি. এনিমেল হাজবেন্ড্রি (অনার্স) এর সমকক্ষ হওয়ার কোন যুক্তিসংগত ও বৈধ কারণ নেই। রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারাই শুধু প্রানী চিকিৎসায় অনুমতিপ্রাপ্ত ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফর্ম আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই জমা দিতে হবে। কিন্তু কোষাধ্যক্ষ ভবন তালাবদ্ধ থাকায় আমাদের কাজ সম্পাদন করতে পারছি না। নির্দিষ্ট সময়ে ফর্ম জমা দিতে না পারলে চরম বিপাকে পড়ে যাবো আমরা। চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট ভবন ব্যতীত অন্যান্য ভবন তালাবদ্ধ করার কোনো যুক্তি দেখছি না।