বাকৃবির সৌন্দর্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন যারা

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি: নদ, রেললাইন, বাহারী ফুল, ফল, উদ্ভিদ ও ফসলের বাগান সবকিছুরই এক অপরূপ মেলবন্ধন প্রকৃতি কন্যাখ্যত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ময়মনসিংহে অবস্থিত ১২০০ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাসটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও সবচেয়ে সুন্দর ক্যাম্পাস।

আর ঋতুর বদলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য ফুটে উঠে আরো নতুনরূপে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানরতরা ঋতু বদলের এ সৌন্দর্য খুব ভালোভাবেই টের পান। কিন্তু যারা এ ক্যাম্পাসে থাকেন না, তাদের জন্য এ সৌন্দর্যটুকু খানিকটা অধরাই থেকে যায়। সেই তাদের জন্য কিছুটা হলেও সে সৌন্দর্য জানান দেওয়ার কাজটি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী। Aesthetic BAU নামের একটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে বাকৃবির এ সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারাবিশ্বে।

২০২১ সালের ১২ আগস্টে চালু করা এ ফেসবুক পেজে ইতিমধ্যে ফলোয়ার সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি তাদের শেয়ার করা ছবি ও ভিডিওতে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট ও শেয়ার হচ্ছে। যারা এ ফেসবুক পেজটি পরিচালিত করছেন তাদের মধ্যে প্রধান দায়িত্বে আছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী নাহিদ অপু। তিনিই মূলত প্রথমে ফেসবুক পেজটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য ছড়ানোর কাজটি হাতে নেন। আস্তে আস্তে সময়ের পরিক্রমায় ডিজিটাল এ প্লাটফর্মে যুক্ত হন আরো অনেকে। তাঁদের এক এক জন কাজ করে থাকেন আলাদা আলাদা ভাবে। এদের মধ্যে কেউ ভিডিও মেকিং, কেউ ছবি তোলা, কেউ লগো মেকিং, কেউ গ্রাফিক্সের কাজ প্রভৃতি কাজ করে থাকেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন মো. আহসানুল হক (ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট), মোঃ রিফাত আলী (কৃষি অনুষদ), রিদওয়ান হাসান সাব্বির (কৃষি অনুষদ), আশরাফুল ইসলাম সাকিব (কৃষি অনুষদ), সৈয়দ ইনান আহমেদ (পশুপালন অনুষদ), ফাহমিদ হাসান তাওহীদ (কৃষি অনুষদ), সাদিক খান (প্রাক্তন শিক্ষার্থী, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ), শাহরিয়ার জাহান সিয়াম (কেবি কলেজ), নূর জামিল আকন্দ নিবির (কেবি কলেজ) প্রমুখ।

Aesthetic BAU এর সদস্যরা বলছেন, যারা একবার হলেও চিরসবুজের বাকৃবি ক্যাম্পাসে এসেছেন, ঘুরেছেন তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের মায়ায় আটকে গেছেন। বিশেষ করে বর্ষা, শীত, শরৎ, বসন্তে সৌন্দর্যে ভরা থাকে। আর গীষ্মকালে নানা ফলের গন্ধে মুহুমুহু করে। আমবাগান, লিচু বাগান, কাঁঠাল বাগানসহ হলগুলোতে ফলে ফলে ভরা থাকে। ক্যাম্পাসের শরতের রূপটা একেবারে অন্য রকম। বর্ষার টানা বর্ষণের পর এ সময় পুরো ক্যাম্পাস ধুয়েমুছে নতুন রূপে সাজে। শিউলি ফুলের উদাস করা ঘ্রাণ, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাশফুলের শুভ্র সমারোহ। অনুষদ ভবন, হল, খামার ও গবেষণাগারের সামনে ফুটে থাকা শেফালি, মালতী, জুঁই, টগর, কামিনী ফুল শরতের সৌন্দর্য হৃদয় ছুয়ে যায়। বর্ষায় সীমানা ঘেঁষে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রের পাড় পানিতে টই-টম্বুর করে। সেসময় পালতোলা নৌকা চলে। জ্যোৎস্না রাতে বাকৃবি রূপ নেয় মোহনীয় রূপে। শীত ও বসন্তে ফোটে বাহারী রঙের ফুল। শীতের সকালে কুয়াসাচ্ছন্ন বাকৃবির সৌন্দর্য যে কাউকেই বিমোহিত করে। আর এ সৌন্দর্যের সামান্য কিছুটা ডিজিটালি সবার সামনে তুলে ধরার জন্যই কাজ করছেন তারা।

ফেসবুকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য সবার কাছে তুলে ধরার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে Aesthetic BAU পেজের প্রধান অ্যাডমিন নাহিদ অপু বলেন, 'যে কোন কিছু তুলে ধরার জন্য ফেসবুক বিশ্বের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। বাকৃবির সৌন্দর্য শুধু ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো বাংলাদেশ ও বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের পথচলা। বাকৃবির বিভিন্ন ইভেন্ট, প্রতিটি ঋতুর সৌন্দর্য ফটোগ্রাফি কিংবা ভিডিওগ্রাফি দিয়ে ফুটিয়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয জীবন শেষে চাকুরি কিংবা বিদেশে কর্মরত ভাই -আপুটি যেনো ক্যাম্পাস দেখে স্মৃতিচারণ করতে পারে এবং সামনের নতুন প্রজন্মও যেনো বাকৃবির সময়ের সাথে পরিবর্তিত রূপকে দেখতে পারে সেটিই স্মৃতিবন্দী করার কাজটি করছি আমরা। এক কথায় কালের আবর্তনে বাকৃবির সৌন্দর্য যেন হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্য পূরণ করতে "Aesthetic BAU" ফেসবুক পেজটির মাধ্যমে ডিজিটাল কর্মকান্ড পরিচালিত করছি আমরা।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন কার্যক্রমেও বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করার কাজের পরিসর আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাকৃবি যেন শুধু এশিয়া নয়, পুরো পৃথিবীর বুকে নিজের চিরচেনা রহস্যে ঘেরা সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং মান নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তার জন্যই কাজ করছি আমরা।