
রাজধানী প্রতিনিধি:ডিমের উৎপাদনে ৮০ ভাগই দরকার হয় ফিডের, আর বাকি ২০ ভাগ অনান্য জিনিসের। কিন্তু ফিডের দাম বাড়ার কারণে তালমিলিয়ে ডিমের দাম বেড়ে যাচ্ছে। একটি ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৮ টাকা ৭০ পয়সা কেবল ফিডেই চলে যায়, আর অন্যান্য ২ টাকা ৭০ পয়সা দরকার হয় অনান্য বিষয়ে। অর্থাৎ ১ টি ডিমের উৎপাদন ব্যায় ১১ টাকা ৪০ পয়সা, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটি ডিমের দাম খামারী কিংবা উৎপাদনকারীর লাভ মিলিয়ে কমপক্ষে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা হওয়া দরকার। এজন্য ডিমের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য অকশন হাউজ ও পোল্ট্রি বোর্ড থাকা দরকার ।
শুক্রবার বিকালে (১৪ অক্টোবর, ২০২২) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিউশনে বাংলাদেশ এনিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটির (BASS) আয়োজনে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ডিম শিল্প নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন উপস্থিত আলোচকবৃন্দ।
বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিউশনের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে সংগঠনটি। পরে সবার মাঝে সিদ্ধ ডিম বিতরণ, বর্ণিল টি শার্ট বিতরণ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ডিমের পুষ্টি এবং বাংলাদেশের ডিম শিল্প নিয়ে গোলটেবিল আলোচনারও আয়োজন করে তারা।

বাংলাদেশ এনিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটির সভাপতি কৃষিবিদ মো. মোরশেদ আলম-এর সভাপতিত্বে গোল টেবিল আলোচনায় অংশ নেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর প্রানিসম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ জুলিয়াস মুচেমী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়্যারমান প্রফেসর ড. কে. বি. এম সাইফুল ইসলাম, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার লাইভস্টক এক্সপার্ট জুলিয়াস গিথিঞ্জি মুচেমি, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গ্লোবাল টেলিভিশনের সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, দীপ্ত টিভির বার্তা বিভাগের প্রধান এস এম আকাশ, জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহাম্মদ, প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন, ভালুচেইন বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুর রহমান, ল্যাবএইড গুলশান লিমিটেডের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম এনি।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ডিবিসি নিউজ টিভি এর এডিটর প্রনব সাহা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ এনিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটির সভাপতি কৃষিবিদ মো. মোরশেদ আলম বিশ্ব ডিম দিবস এবং বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পের উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, জনপ্রতি বছরে আমরা ১৪০ টি ডিম খাচ্ছি কিন্তু কয়েকবছর আগেও এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০-৪২। ডিম দিবস পালনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করার কারণে এখন ডিম খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, একই সাথে ডিমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্প তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রথম যখন ডিম দিবস পালন শুরু করা হলো, তখন মানুষ হাসি ঠাট্টা করেছে। কিন্তু বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গের প্রশ্ন এবং বিশেষজ্ঞ বক্তাদের উত্তরে অনুষ্ঠানটি প্রানবন্ত হয়ে উঠে। অনুষ্ঠানে বক্তারা ডিমের বর্তমান বাজারমূল্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ শিল্পের সাথে জড়িত বক্তারা বিশ্ববাজারে ডিম উৎপাদনে প্রয়োজনীয় খাদ্যের কাঁচামালের উর্ধ্বগতি, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রাপ্যতা ইত্যাদিকে দায়ী করেন।

বক্তারা উপলব্ধি করেন যে বর্তমানের এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পোল্ট্রি খাদ্যে ভর্তুকি প্রয়োজন। বক্তারা আরও উপলব্ধি করেন যে একটি পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এই শিল্পকে সুসংহত করা সম্ভব। বক্তারা একমত হন, ডিম ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ডিম বিপনণ কেন্দ্রে অকশন হাউজ" স্থাপন করে ন্যায্য মূল্যে ডিম বিপনণ করা প্রয়োজন এবং এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের উদ্যোগে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ২য় শুক্রবারে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় "বিশ্ব ডিম দিবস'। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর এ বিশেষ দিবসটি পালন করে আসছে।এগ্রিকালচার সোসাইটি (BAAS) ।ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন ১৯৯৬ সালে প্রথম দিবসটি পালন করে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। বাংলাদেশে প্রথম দিবসটি পালন করে বাংলাদেশ এনিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটি। এ বছর ১৪ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব ডিম দিবস, যা বাংলাদেশে এ দিবসটি পালনের ১০ম বর্ষ পালিত হলো।



















