বানিজ্যিক লেয়ার খামারকে লাভজনক করতে যথাযথভাবে টিকা প্রদানের বিকল্প নেই-ডাঃ সরোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক:বানিজ্যিক লেয়ার খামারকে ভাইরাস জনিত রোগের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে হলে যথাযথভাবে টিকা প্রদানের বিকল্প নেই। এজন্য খামারীদেরকে লেয়ার মুরগির টিকা প্রদান সিডিউল ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। খামারীকে লেয়ারের জাত, প্রাপ্ত ইমিউনিটি, এলাকা, আবহাওয়া, মুরগির স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। ভাইরাল ভ্যাকসিন যেমন নিয়মিত দেওয়া হয় তেমনি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাকসিন যেমন কলেরা, সালমোনেলা, করাইজা এমনকি মাইকোপ্লাজমা ভ্যাকসিন দেওয়াও জরুরী।

দেশে ২০১২ সালে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা আসলেও স্বরুপকাঠির খামারীরা এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেনি। একই সাথে কলেরা ও সালমোনেলার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় এই দুটি রোগের চিকিৎসা দেওয়ার চেয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরী। আশা করছি স্বরুপকাঠির খামারীরা আজকের পর থেকে ভাইরাল ভ্যাকসিনের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করবেন।

শনিবার (২৩ জুলাই) পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার নেছারাবাদের চিলতলায় স্টার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড প্রাঙ্গনে "লেয়ার খামার ব্যবস্থাপনা ও ভ্যাকসিনের গুরুত্ব শীর্ষক" এক সেমিনারে মুখ্য আলোচক এসব কথা বলেন ন্যাশনাল পোলট্রি কনসালটেন্ট ও সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ডাঃ মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান।  

বরিশালের লেয়ার মুরগির রাজধানী খ্যাত স্বরূপকাঠিতে স্টার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড এবং সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর যৌথ আয়োজনে প্রায় ১৫০ জনের অধিক লেয়ার খামারীরার এ সেমিনারে অংশগ্রহন করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফজিলা রহমান মহিলা ডিগ্রী কলেজ, নেছারাবাদ এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ জনাব মো. বেলায়েত হোসেন।



সেমিনারে ডাঃ সরোয়ার বলেন,ভ্যাকসিন তাপের প্রতি সংবেদনশীল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, তাই ভ্যাকসিনকে প্রস্তুতকারকের নিদের্শবলী কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং নির্দিষ্ট তাপ মাত্রাতেই সংরক্ষণ করতে হবে। মুরগীকে টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য আমাদের প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় অথচ সব সময়ই ভ্যাকসিন বা টিকার কার্যকারিতা নির্ভর করে সঠিকভাবে সঠিক ভ্যাকসিন প্রয়োগের উপর। মূলত খামারীদের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, সালমোনেলা, কলেরা ভ্যাকসিন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র সালমোনেলা চিকিৎসায় যত ব্যয় হয় তা সমগ্র মেডিসিন ব্যয়ের ৫০% এর অধিক!

এসময় ডা. সরোয়ার বলেন, বাণিজ্যিক লেয়ার মুরগির টিকাদান কর্মসূচী (ভ্যাকসিন সিডিউল), লেয়ার মুরগি পালনের বিভিন্ন ধাপগুলি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। খামারে সর্বোচ্চ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। ভ্যাকসিন অকার্যকর হওয়ার কারণ সমূহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক লেয়ার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল এলাকায় রোগের প্রকোপ এবং মুরগির শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে। সে লক্ষে খামারীদের কি করণীয় তা সবিস্তারে বর্ণনা করেন। খামারীদের ওয়াটার স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, খামার পর্যায়ে জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এ বিষয়ে খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করেন ডা. সরোয়ার।



সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সেইফ বায়ো প্রোডাক্টস লিঃ এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ রহিম সিকদার, পরিচালক জনাব জাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন ডাঃ আব্দুর রাকিব মোড়ল। অন্যান্যদের মধ্যে নিউ হোপ ফিড এর ডা. নুরুজ্জামান শাহনূর, বেঙ্গল ওভারসিজ লিঃ এর বরিশাল জোনের ডা. শহিদুল ইসলাম সহ প্রমূখ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জনাব আব্দুল গাফফার মাহমুদ, প্রোপাইটর, স্টার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড, নেছারাবাদ, স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর।

বাংলাদেশে পোল্ট্রির উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই ঝুকি নিরসনের জন্য একটি ন্যাশনাল প্ল্যান দরকার। পর্যাপ্ত পরিমানে সরকারী সহযোগীতা না থাকায় একটি সম্ভামনাময় শিল্প হওয়া সত্ত্বেও অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে দেশের এই শিল্পটি। টেকসই উন্নয়ন সবার জন্য পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে পোল্ট্রি খামারগুলোকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এমনটাই মনে করেন সেমিনারে আগত প্রান্তিক পর্যায়ের লেয়ার খামারীরা।