ধান ক্ষেতে হিট শকের প্রভাব ও চিটা দেখা দিলে করণীয়

মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম: ধানের হিট শক বা হিট ইনজুরি বর্তমানে ধান চিটা হওয়ার অন্যতম কারণ। পূর্বে এ ধরনের সমস্যা কম দেখা গেলেও বর্তমানে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষকগণ প্রায়শই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং তৎসংলগ্ন সময়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহ এর জন্য মূলত দায়ী। এ সময় ধানের যে সকল জাত ফুল ফোটা পর্যায় বা ফুল ফোটা চলমান অবস্থায় অথবা সামনে ফুল ফুটবে এরকম অবস্থায় রয়েছে সেই জাতগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

দেখা যায় যে, এ সময় দিনের তাপমাত্রা প্রায় ৩৫° সেলসিয়াস বা তার বেশি পরিলক্ষিত হয়। ধানের ফুল ফোটার সময় বিশেষ করে (সকাল ৬.৩০ টা হতে ১১.৩০ টা পর্যন্ত) কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টাও যদি উক্ত তাপমাত্রা বিরাজমান থাকে তাহলে ধানের হিট শক বা হিট ইনজুরি বা শিষ সাদা হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ ধান চিটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ধান গাছ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার শস্য উৎপাদন ও জীবনচক্র সম্পন্ন করে থাকে। প্রস্বেদন এর মধ্যে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু উত্তপ্ত বাতাস বা অধিক তাপমাত্রা গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার বেগকে অধিক ত্বরান্বিত করে যার ফলে গাছ থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায় এবং গাছ পানির সংকটে পড়ে। ফলশ্রুতিতে গাছের প্রজনন অঙ্গগুলোর (বিশেষ করে ফুলের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর) গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও উচ্চ গতির বায়ু প্রবাহ ও উষ্ণ বায়ু উদ্ভিদের পরাগায়ন প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্থ করে। শুধু তাই নয়, নিষেক পরবর্তী গর্ভধারণ ও সোর্স সিংক ডিপোজিশনেও (ধানের মধ্যে চাল হিসেবে খাদ্য জমা হওয়া) বিঘ্ন সৃষ্টি করে। যার দরুণ ধানের সবুজ খোসা বা হাস্ক ধূসর অথবা কালো বর্ণ ধারণ করে অর্থাৎ ধান চিটা হয়ে যায়। এছড়াও অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে শাখা শিষের বৃদ্ধি কমে যায় বা স্বাভাবিক হয় না, অনেকসময় আনফিল্ড বা স্টেরাইল গ্রেইন (বন্ধ্যা ধান) তৈরি হয় যার ফলে ধান চিটা হয়ে যায়।

কৃষক ভাইদের করণীয়ঃ এরকম প্রতিকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি হলে ধান রক্ষা করতে ও আশানুরূপ ফলন পেতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জমিতে পানি ধরে রাখতে হবে। সাধারণত ৫-৭ সেন্টিমিটার বা ২-৩ ইঞ্চি পানি কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত জমিতে ধরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এর ফলে গাছ অতিরিক্ত তাপের প্রভাব থেকে রক্ষা পায় এবং দানা তৈরির প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে। এছাড়া কিছু রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহারও এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে গাছকে রক্ষা করতে পারে। এক্ষেত্রে মিউরিয়েট অব পটাশ বা এমওপি সারের প্রভাব বেশ কার্যকরী। সাধারণত প্রতি ১০ (দশ) লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে ৫ (পাঁচ) শতাংশ হিসেবে স্প্রে করলে অথবা প্রতি বিঘার জন্য পাঁচ কেজি করে পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করলে ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

তবে কৃষক ভাইদের খেয়াল রাখতে হবে যে, কোন কারণে ফুল থাকা অবস্থায় বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বালাইনাশক ব্যবহার বিধি অণুসরণ করে নির্ধারিত মাত্রায় দিনের শেষ ভাগে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকেল এ রকম সময় ব্যবহার করতে হবে। কেননা ভোরবেলা বা দুপুরবেলায় বালাইনাশক স্প্রে আকারে ব্যবহার করলে গাছের পরাগায়ন বাধাগ্রস্থ হতে পারে এবং ধান চিটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিকন্তু, সতর্কতার জন্য কৃষক ভাইদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।

লেখক: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগ
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২
ইমেইলঃ This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.