শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি: বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর:আমরা জানি এখন মুজিব শতবর্ষ চলমান। ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে পুরো ২০২০ সালটি সরকারের তরফ থেকে মুজিব শতবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাকালে মুজিববর্ষটি পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি। সীমিত আকারে পালন করতে হয়েছে পুরো বছরজুড়ে মুজিববর্ষের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি। সেজন্য সরকার মুজিববর্ষটি ২০২১ সালের বিজয় দিবস অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। অপরদিকে ২০২১ সালটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অর্থাৎ সুবর্ণ জয়ন্তী। এসব দিবস ও বর্ষকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেসব কর্মকান্ডে কৃষিখাত এবং কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষিবিদগণও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।  

কৃষিবিদগণের পক্ষে গবেষণায় যারা জড়িত তাঁদের তরফ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মুজিব শতবর্ষের স্মারক হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে একশটি নতুন কৃষি গবেষণা প্রযুক্তি সম্বলিত একটি প্রকাশনা ‘এটলাস’ প্রকাশিত হয়েছে যা সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা অনলাইনে যুক্ত থেকে বইটির মোড়ক উম্মোচন করেছেন। এটি কৃষি ক্ষেত্রে মুজিববর্ষে কৃষি বিজ্ঞানীদের একটি বড় অর্জন ও দেশের মানুষের জন্য একটি বড় উপহার। এভাবে কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রত্যেকে তাঁদের নিজ সংগঠনের ক্যাপাসিটি মোতাবেক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে।  

এমনি বিশেষ ধরনের কয়েকটি উদ্যোগের বিষয়ে আমরা সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখেছি। তারমধ্যে একটি হলো ময়নসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকায়। যা কিনা শীতকালীন সবজি ও ফসলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় আব্দুল কাদের নামের একজন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত-অনুরক্ত তাঁর নিজের জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন শাকসবজি ও ফসল রোপন/বপন করে সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি শস্য আবৃত প্রতিকৃতি আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে। এবং দিন বাড়ার সাথে সাথে শাকসবজির চারা বৃদ্ধি পাচ্ছিল আর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে দৃশ্যমান হচ্ছিল। সেখানে লালশাক, মূলা, সরিষা ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের সবজি ফসল ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে প্রকৃতকভাবেই বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিটি রঙিন হয়ে ফুটে উঠেছে। আসলে হয়েছিলোও তাই। সেটি এমন দৃষ্টি নন্দন ছবি ফুঁটে উঠেছিল তাতে পাখির দৃষ্টিতে ছবি তুলে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন সবাই। পাশাপাশি এমন একটি বিচিত্র ও অন্যরকম সুন্দর শিল্পকর্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের ভিড় হতে দেখা গেছে যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত।

সেই প্রযুক্তি ও থিমটি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আরো বড় পরিসরে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবারের কাজটি হলো শস্যচিত্রের মাধ্যমে এমন একটি বিরল কর্মকান্ড করা যা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডস-এ স্থান করে নেওয়া। কারণ এর আগে বিশ্বের কোন নেতা নেত্রীকে নিয়ে শস্যের মাধ্যমে চিত্রে তুলে ধরার এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর নেই। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সুজনশীল ও বরেণ্য কৃষিবিদ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমন একটি বিরল কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তিনি কৃষিবিদদের প্রাণের সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিট্উিশনের দুইবারের মহাসচিব এবং দুইবারের সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সাথে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবলীগসহ আওয়ামীলীগের অন্যান্য সহযোগি সংগঠন। এ চিত্রকর্মটি বগুড়া জেলার একটি এলাকায় বোরো মৌসুমে শুধু ধান ফসলের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ শস্যচিত্রে দেশি, উচ্চফলনশীল, স্থানীয় ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ধান রোপন করা হয়েছে। সেসব ধানের রঙ বিভিন্ন রকম হবে। এসব ধান রোপনের পর যতই দিন যাচ্ছে ততই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি নতুন নতুন আকার ধারণ করছে। একেক সময় একেক রকম সুন্দর হয়ে ফুঁটে উঠছে। সেখানে বিভিন্ন উচ্চতা ও বর্ণের ধানের জাত রোপন করা হয়েছে। ড্রোন প্রযুক্তিতে বা স্যাটেলাইট এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তোলা ছবিতে চিত্রকর্মটি ক্ষণে ক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিনন্দন মাত্রা পাচ্ছে। এটি যখন ধান পাকার সময় হবে তখন তা চূড়ান্ত আকার ও আকৃতি লাভ করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এটিকে নষ্ট না করে তবে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র হবে। যা একক ও বিরল হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডস-এ নিশিতভাবে স্থান করে নেবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
   
কৃষিবিদদের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় অনেক কিছু করেছিলেন। কৃষিকে গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে তিনি প্রথমে কৃষিবিদদেরকে সরকারি চাকুরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। কৃষিকে তিনি সর্বদাই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে  এসেছেন। বর্তমানে তাঁর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো করে চলেছেন। এ করোনাকালেও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষির ধারাবাহিক উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। এখন সময় এসেছে এসব ঋণ শোধ করার। সেজন্য কৃষিবিদদের তরফ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র অংকন করে বঙ্গবন্ধুর কৃষিপ্রীতির প্রতি কিছুটা সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করা। আশাকরি তা অবশ্যই সফল হবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল:This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.