উপকূলীয় এলাকায় সরিষা চাষের উপযুক্ত একটি জাত “বারি সরিষা-১৮”

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবন করা হয়েছে “বারি সরিষা-১৮” নামে নতুন একটি সরিষার জাত। নতুন উদ্ভাবিত সরিষার জাতটি বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। বিএআরআই’র তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেছেন, অন্য জাতগুলোর চেয়ে এই জাতের ফলন বেশি পাওয়া যাবে দেড় গুন। বিনাচাষেও এর আবাদ করা যাবে। জাতটি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম ‘ক্যানোলা’ বৈশিষ্ট্যের।

তিনি আরও বলেন, এই জাতে “ইরুসিক এসিডের” পরিমান কম থাকায় এটি অন্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এই অঞ্চলে তৈলফসল গবেষণায় দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ মাহমুদুল হাসান খান বলেন, বারি সরিষা-১৮ মধ্যম মাত্রার লবনাক্ত সহনশীল জাত যা ৬-৮ ds/m লবনাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং দেশের দক্ষিনাঞ্চলে চাষ উপযোগী। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৫০ শতাংশের ওপরে এবং ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৯ -এর অনুপাত ১:২:৬ বিদ্যমান, যা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত।

ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা কমাতে দেশে সরিষা চাষের আওতায় জমির পরিমান বাড়ানো, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা অন্তর্ভুক্তিই একমাত্র উপায়। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করা হলে আগামি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ভোজ্য তেলের আমদানী নির্ভরতা ৪০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা সম্ভব হবে। উন্নত মানের বীজ উৎপাদন ও যথা সময়ে সরবরাহ নিশ্চয়তায় দেশের তৈল বীজের উৎপাদন বাড়বে যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। স্থানীয় জাতের সরিষায় ফলন পাওয়া যায় শতাংশে সাড়ে ৩ কেজি। আর বারি সরিষা-১৮ তে ফলন পাওয়া যায় ৫ থেকে ৬ কেজি। সব জেলাতেই কম বেশি সরিষা চাষ হয়।

ড. মোঃ মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, এই জাতটি বিনা চাষেও আবাদ করা যায়। অর্থাৎ আমন ধান কাটার পরপরই একই জমিতে আবাদ করা সম্ভব। এর গড় ফলন হেক্টরের হিসেবে দুই থেকে আড়াই টন। যা অন্য জাতের চেয়ে প্রায় দেড় গুন । আর বীজে তেলের পরিমান ৪০ থেকে ৪২ ভাগ। এর জীবন কাল ৯৫ থেকে ১০০ দিন। ইরুসিক এসিড মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমান মাত্র ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। যা অন্য জাতে থাকে ২০ ভাগের উপরে। বরিশাল বিভাগে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, আর দেশের অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।

ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, এবছরই প্রথমবারের মত কৃষি গবেষনার আঞ্চলিক কার্যলয়, বরিশাল এর সরাসরি তত্বাধানে “বারি সরিষা-১৮” জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে। মাথা পিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হিসেবে ধরে ২০৩০ সালে ভোজ্য তেলের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ২৮ লাখ টন। “তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের” মাধ্যমে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৪০ ভাগ ভোজ্য তেল স্থানীয় ভাবে উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। “বারি সরিষা-১৮” জাতের সরিষার উদ্ভাবন সরকারের এই চেস্টাকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী। নতুন এই জাত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া গেলে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এতে করে আমদানী ব্যয় কমবে, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার।

তাই বিজ্ঞানীরা “বারি সরিষা-১৮” নামে নতুন একটি সরিষার জাত আবিস্কার করেছেন। বারি সরিষা-১৮ জাতের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন প্রযুক্তি শীর্ষক বিষয় নিয়ে শনিবার সকালে বরিশালের রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও বিএআরআই’র আয়োজনে দপদপিয়ার পূর্ব চর এলাকায় মাঠ দিবস পালিত হয়েছে।

মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএআরআই’র তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রর পরিচালক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পিডি’র ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার এবং দপদপিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা।

সভাপতিত্ব করেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু। বক্তব্য রাখেন, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈলবীজ ফসলের গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোঃ মাহমুদুল হাসান খান।