বিশ্ব নারী দিবস নিয়ে কিছু কথা

“এ বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টির চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”

শামিমা নাসরিন: সবাইকে ২০২৪ এর নারী দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের যাত্রা। ৮ই মার্চ, ২০২৪ আজ সাড়া বিশ্বে “নারী দিবস” হিসাবে পালিত হচ্ছে। বহু বছর ধরেই এই দিনটাকে সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়- সেই সব নারী শ্রমিকদের যারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য অমানবিক নিপীড়ন সহ্য করেছিল। আমরা পরিবর্তন আনতে চাই–আসলেই কি তা পারছি?ন্যয্য মুল্যায়ন কি পাচ্ছে নারীরা? ঘরের কথা বাদ দিয়ে যদি বলি অফিসে সমান ৮ ঘন্টা কাজ করার পরেও কি বৈষম্য লক্ষ্য করা যায় না?

সামাজিক গনমাধ্যমের কল্যাণে আমরা অনেক কিছু আজ জানতে ও দেখতে পারি যেমন যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই ২০% ২৫% নারী কর্মী সমান দক্ষতার সাথেই কাজ করে সাড়া বছর , বঞ্চিত হচ্ছেন নারীগন?

আমরা কিন্তু পুরুষ বিদ্বেষী না। আমাদের জীবন চলার পথে উভয়ের প্রয়োজনই অনস্বীকার্য। শুধু সবাইকে সমান ভাবে দেখা, সমান অধিকার দেয়া , ছোট করে না দেখা, অবমূ্ল্যায়ন না করা এটাই প্রত্যাশা। আমরা কেউ কারো শত্রু না। আমার বাবা, আমার ভাই, আমার ছেলে আমার স্বামী আমার বন্ধু তারা সবাই কিন্তু পুরুষ। তারা কি আমাদের প্রতিপক্ষ বা শত্রু? “না” তাহলে:

*হয়তো নারীর প্রথম অক্ষরটি শুরু হয়েছে “না” দিয়ে।এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীকে শুনতে হয় ‘না’। মানব চক্রের যেই মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীতে আসা-তার প্রধান মাধ্যমই একজন এই নারী। এই নারী কখনো আপনার মা, কখনো আপনার বোন, কখনো আপনার স্ত্রী,কখনো আপনার কন্যা,কখনো আপনার প্রেমিকা, আবার কখনো আপনার বন্ধু।

*প্রতিটি ধর্মেই নারীর সম্মান দেয়া হয়েছে সবার উপরে। ইসলাম ধর্মে কন্যা সন্তানকে একটা জান্নাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে- এত সম্মান দেবার পরও কেন আবার এত আয়োজন করে দিবস পালন করা? একটু ভাবুন তো---

হাজার সম্পর্কের মাঝে নারীর সঙ্গে আপনার আমার সম্পর্ক অন্যতম। হাসতে হাসতে অন্যের সুখে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পিছপা হন না যিনি তিনিই এই নারী। একাই সমস্যার ঝুড়িটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সমাধান করে থাকেন। ঘরে বাইরে অফিস আদালতে সব খানেই সমান দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন নারী। বছরের পর বছর প্রতিটা ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেই চলছে নারীর জীবন। যে নারী প্রতিটা দিন আমাদের জন্য উৎসর্গ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করে -যাই করা হোক না কেনো তাঁর করা কাজের কাছে এটা খুব-ই নগণ্য।তাহলে কেন শুরু হলো এই বিশেষ দিবস পালন করার ?

**বিশ্বে নারীদের কাজের সম্মান আর স্বীকৃতি জানাতে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মুলতঃ ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হবার পিছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের এক করুন ইতিহাস।

* ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মুজুরী বৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের আমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই দিন সেই মিছিলে চলে সকারের লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।

*১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী নিউইয়ার্কের সোশাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়।

**১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন।১৭ টি দেশ থেকে ১০০ জন প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব দেন।১৯১১ সাল থেকে নারীরদের সমঅধিকার হিসাবে দিবসটি পালন করার জন্য বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা এগিয়ে আসেন । ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ হয় “বিশ্ব নারী দিবস” বাংলাদেশেও ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিকনারী দিবস” হিসাবে স্বীকৃতি প্রাদান করা হয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাস্ট্রকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সাড়া পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে এক যোগে নারীর অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনঃব্যাক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে।

বিশ্ব জুড়ে নারী দিবস হোক -নারীর মানুষ হিসাবে মুল্যায়ন, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক নারীর কর্মের সম মুল্যায়ন, নারীর মর্যাদা এবং অধিকার এই প্রত্যাশায় আবার ও আন্তরিক শুভেচ্ছা সবাইকে।

লেখিকা:ভাইস প্রেসিডেন্ট
প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড, মতিঝিল ব্রাঞ্চ।