বাংলাদেশের পাঙ্গাস উৎপাদনে খরচ প্রায় দ্বিগুণ; প্রতি হেক্টরে উৎপাদন মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টন

রাজধানী প্রতিনিধি:বাংলাদেশের পাঙ্গাস উৎপাদনে খরচ প্রায় দ্বিগুণ এবং ভিয়েতনামে যেখানে প্রতি হেক্টরে ১৫০ টন পাঙ্গাস উৎপাদিত হয় সেখানে বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টন পাঙ্গাস উৎপাদন হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে মাছের প্রাপ্যতা ছিলো বছরে মাথাপিছু ৭ কেজি যেটি ২০২১ সালে দাঁড়ায় বছরে মাথাপিছু ২৩ কেজি। ১৯৮৪-৮৫ সালে দেশে মোট উৎপাদিত চিংড়ির ৭৮ ভাগ বিদেশে রপ্তানি করা হতো যেটি ২০২১-২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।

ফিড দ্য ফিউচার আয়োজিত আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত "পলিসি ওয়ার্কশপ অন এ্যাকুয়াকালচার ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজিস ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক সেমিনারে গবেষকদের আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে।

দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও বরেণ্য কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ফিড দ্য ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর ফিশ, মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ান রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম হুসাইন।

সূচনা বক্তব্য রাখেন টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক ড. মদন মোহন। তিনি গবেষণার সার্বিক বিষয়গুলি তুলে ধরেন।

গবেষণায় দেখা যায়, বিগত দশবছরে মৎস্য খাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি অথচ মাছের দাম সেভাবে বাড়েনি। একারণে মাছ চাষীরা সেভাবে লাভবান হতে পারছেন না। বক্তারা বলেন দেশে উৎপাদিত চিংড়ির গুনগত মান নিশ্চিত করতে না পারায় বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। সাপ্লাই চেইনের সেফটি স্ট্যান্ডার্ডে সমস্যার কারণে ইউরোপ আমেরিকায় চিংড়ি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ আক্তারুজ্জামান খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, বিগত বছরগুলোতে মাছের উৎপাদন বাড়ায় আমরা দেশের ধনী গরীব সকল শ্রেণির মানুষকে মাছ খাওয়াতে পেরেছি। মাছের দাম বাড়লেও মানুষ মাছ খাচ্ছে। সমসাময়িক বছরগুলোতে বিদেশে চিংড়ি রপ্তানি কমে গেছে। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য টেকনোলজির অগ্রগতির মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন চিংড়ি উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেন তিনি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, দেশের চিংড়ি চাষীরা দুর্দশার মধ্যে আছেন। তাদের দুর্দশা দূর করে সুসময় ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ না আসলে এ শিল্প আশানুরূপভাবে এগোতে পারবে না। তাই মৎস্য শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ আনতে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, উৎপাদিত মাছের গুণগত মানও বাড়াতে হবে। বিদেশের রপ্তানির বাজার যেন অন্য দেশের হাতে না চলে যায় এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত সেফ ফুড তৈরিতে জোর দিতে তিনি আহ্বান জানান। এছাড়াও মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে আরও বেশি গবেষণার জন্য তিনি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে হলে গবেষণা বাড়াতে হবে। ফিড দ্য ফিউচার তাদের গবেষণায় ভোক্তা, ব্যবসায়ী এবং মৎস্যজীবী সবার বিষয় সামনে তুলে ধরেছেন যেন প্রত্যেকে এ গবেষণা থেকে উপকৃত হতে পারেন। এই গবেষণা ভবিষ্যতে জাতীয় নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ ছাত্তার মন্ডল এর নেতৃত্বে প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গবেষক ও মৎসচাষীরা মাছের খাদ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি ও মৎস্য খাদ্য ও গুণগত মাছের পোনা নিয়ে খামারীরা তাদের অভিমত প্রকাশ করেন।। এছাড়াও মৎস্য খাদ্যে প্রচলিত প্রোটিন উৎসের বিকল্প প্রোটিন উৎস তৈরিতে সরকারকে গুরুত্বারোপ করার অনুরোধ করেন৷

প্যানেল ডিসকাশন পর্বে প্যানেল মেম্বার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক (এডমিন এন্ড ফিন্যান্স) ড. মোঃ জুলফিকার আলী, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও জরিপ) জনাব সৈয়দ মোঃ আলমগীর এবং স্পেক্ট্রা হেক্সা ফিডস লিমিটেড এর পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ আহসানুজ্জামান লিন্টু। টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক ড. মদন মোহন দে তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সেমিনারে মৎস্য বিজ্ঞানী-গবেষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা, হ্যাচারী মালিক, সাধারণ খামারীরা অংশগ্রহন করেন।