রাজশাহীর পবায় ই-কৃষি বিস্তার নিয়ে “উঠান বৈঠক”

মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি:রাজশাহীর পবায় ই-কৃষি বিস্তার নিয়ে “উঠান বৈঠক” অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহীর আয়োজনে উপজেলার আলীমগঞ্জ কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের সদস্য এবং স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে “বিদ্যমান কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র সমুহ শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ই-কৃষি বিস্তার শীর্ষক কর্মসূচী”-এর আওতায় ই-কৃষি কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারণ নিয়ে এ “উঠান বৈঠক”-টি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: মোজদার হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ মো: আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি। এছাড়াও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব মো: আশরাফুল ইসলাম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের এআইসিও জনাব মো: আমিনুল ইসলাম সহ এই ক্লাবের সদস্য এবং স্থানীয় কৃষাণ-কৃষাণী সহ প্রায় ৬০ জন উপস্থিত ছিলেন।

এই বৈঠকে ই-কৃষির বিস্তার বিষয়ক আলোচনার নিমিত্তে¡ কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর বিশদ আলোচনা করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ মো: আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি। তিনি এআইএস টিউব ব্লগ, বিটিভির জনপ্রিয় “বাংলার কৃষি” অনুষ্ঠান, কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের (এআইসিসি) সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কৃষিতে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন আ্যাপস বিশেষ করে কৃষকের জানালা, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, বালাইনাশক সহায়িকা, রাইস নলেজ ব্যাংক, খামারি অ্যাপ, গম ও ভ‚ট্টা তথ্য ভান্ডার, কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েব সাইট, কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩), কৃষক বন্ধু ফোন সেবা (৩৩৩১), ইউডিসি, ফিয়াক সেন্টার, সরকারি ও বেসরকারি রেডিও ও টিভির অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম তাঁর বক্তব্যে বানিজ্যিকভাবে ফল গাছ রোপন পদ্ধতি, নিবিঘ্নে ধানের চাষ ও অন্যান্য পরিচর্যা, আধুনিক মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা ও জৈব সারের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কৃষি আবহাওয়া পাওয়ার সহজ পদ্ধতি এবং পিয়াজ, রসুন, আদা ও মরিচের আধুনিক জাত ও চাষ কৌশল নিয়ে আলোচনা।

২০০৮ সাল হতে পরিচালিত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) হচ্ছে একটি কৃষি সম্প্রসারণ এবং আয় বর্ধন মূলক কৃষক ক্লাব। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, তথ্য বা সেবা যথাসময়ে সাধারণ জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এদেশে প্রায় প্রতি উপজেলায় একটি করে মোট ৪৯৯ টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র বা এআইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এআইসিসি কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়। এ সকল কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য হলো কৃষকের চাহিদা মাফিক সঠিক তথ্য সময়মত কৃষির সাথে সরাসরি জড়িত কৃষকের বাড়ির নিকটে বা পাড়া বা মহল্লায় সরবরাহ করা। এআইসিসি গুলি কৃষি বিষয়ক তথ্য আদান প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। এই ধরণের ক্লাবে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ওয়েব ক্যাম, মোবাইল সেট, স্পাইরাল, মডেম ও ইন্টারনেট সীমসহ আরও অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ সুবিধে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রে আছে। ক্লাবের সদস্যগণ সরবরাহকৃত মোবাইলের সাহায্যে বা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি কর্মকর্তা বা এআইএস-এর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান পেতে পারেন।

অন্যদিকে মোবাইল বা ওয়েব ক্যামের সাহয্যে ছবি তুলে বা ওয়েব ক্যামের সামনে সমস্যা-বস্তুটি নিয়ে এসে সরাসরি ছবি দেখিয়ে ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। এটি শুধু কৃষি তথ্যের আদান প্রদান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে না বরং স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কারণ এখানে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের (ইউডিসি) মতো সেবা প্রদানের ব্যবস্থা আছে।

এই ধরণের ক্লাবে মূল কার্যক্রম পরিচালনা বাদে উদ্বৃত্ত টাকা আরও আয় বর্ধনমূলক যেমন:- মৎস্য চাষ, ভাল বীজ উৎপাদন, হাঁস-মুরগি পালন ইত্যাদি কাজে খাটানো হয় বলে এটি সদস্য বৃন্দের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে সহায়তা করে। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষক তৈরি করতে হবে। আধুনিক এবং স্মার্ট কৃষক তৈরি করতে পারলে আগামী প্রজন্ম হোঁচট খাবেনা। ইতিমধ্যে কৃষককে স্মার্ট কৃষক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করছে বর্তমান সরকার। এই ধরণের ক্লাব গুলি ডিজিটাল বাংলাদেশের উদাহারণ বলে স্থানীয় সুবিধাভোগীরা মনে করেন।