বাংলাদেশে সমুদ্র সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

দেলোয়ার জাহিদ: বাংলাদেশের সমুদ্র সাংবাদিকতার উদাহরণগুলি খুব একটা পুরানো নয়। ৯০ এর দশকে ডেইলি স্টার পত্রিকা দেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়ের উপর অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং দূষণের প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে। সেই সময়ে, এই বিষয়গুলি জনসাধারণ বা সরকার দ্বারা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ছিল না এবং সংবাদপত্র সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ২০০০-সালের গোড়ার দিকে, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর.কম, প্রথমআলো এবং টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল আই সহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট সামুদ্রিক সমস্যাগুলির উপর আরও ব্যাপকভাবে কভার করতে শুরু করে। এর কিছু বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মাছের মজুদের ক্ষয়, সমুদ্রের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বাংলাদেশের নিচু উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকি।

অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশে সামুদ্রিক সাংবাদিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সামুদ্রিক সমস্যা কভার করার জন্য বেশ কয়েকটি নতুন মিডিয়া আউটলেট এবং উদ্যোগের আবির্ভাব ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা-ভিত্তিক সংস্থা ব্লু ইকোনমি সেল ব্লু বিডি নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে যার লক্ষ্য মিডিয়া এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে টেকসই সমুদ্র শাসনের প্রচার করা। ইতিমধ্যে, জাতীয় সংবাদপত্র ডেইলি সান দেশের জলপথে শিল্প দূষণের প্রভাবের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে সামুদ্রিক সমস্যাগুলির কভারেজ বাড়িয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে সমুদ্র সাংবাদিকতার ইতিহাস এখনও তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত, তবে এই ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান আগ্রহের লক্ষণ রয়েছে, কারণ দেশটি সমুদ্র সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলো মুখোমুখি হচ্ছে।

সাগর সাংবাদিকতা হল এক ধরনের পরিবেশগত সাংবাদিকতা যা সমুদ্র, তাদের স্বাস্থ্য এবং তাদের উপর মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদন করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সমুদ্র সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি গুলোর মধ্যে রয়েছে:

নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা: অন্য যেকোনো ধরনের সাংবাদিকতার মতো, সমুদ্র সাংবাদিকতা ও সঠিক এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। সাংবাদিকদের জন্য তাদের তথ্যগুলো সঠিক এবং নিরপেক্ষ তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উৎস গুলি নিয়ে গবেষণা করা এবং সত্য-সত্য যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।

সমালোচনামূলক বিষয়গুলিতে ফোকাস করুন: মহাসাগরীয় সাংবাদিকতাকে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা, সামুদ্রিক দূষণ এবং সাগরের অম্ল করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ফোকাস করা উচিত। এই সমস্যাগুলি সমুদ্রের স্বাস্থ্য এবং তাদের উপর নির্ভরশীল প্রজাতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রতিবেদন: মহাসাগর সাংবাদিকতা বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। সাংবাদিকদের উচিত বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা জটিল বিষয় গুলো বোঝার জন্য এবং সেই তথ্যটি একটি অ্যাক্সেসযোগ্য উপায়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

সমাধানগুলি হাইলাইট করা: যদিও সমুদ্রের মুখোমুখি সমস্যাগুলির বিষয়ে রিপোর্ট করা গুরুত্বপূর্ণ, সমুদ্র সাংবাদিকতার সম্ভাব্য সমাধান গুলি তুলে ধরা উচিত। সাংবাদিকরা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, সফল সংরক্ষণ প্রচেষ্টা, এবং নীতিগত সমাধানগুলি হাইলাইট করতে পারে যা মহাসাগরকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

জনসাধারণকে জড়িত করা: মহাসাগর সাংবাদিকতার উচিত জনসাধারণকে জড়িত করা এবং স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সাংবাদিকরা বাধ্যতামূলক গল্প লিখে, ছবি এবং ভিডিওর মতো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া ব্যবহার করে এবং সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় জনগণের অংশগ্রহণ কে উৎসাহিত করে এটি করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, সমুদ্র সাংবাদিকতার লক্ষ্য হল সঠিক, তথ্য পূর্ণ এবং আকর্ষক প্রতিবেদন প্রদান করা যা স্বাস্থ্যকর মহাসাগরের গুরুত্ব এবং তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ায়।

[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটি চেয়ার, স্টেপ টু হিউম্যানিটি এসোসিয়েশন কানাডা নিবাসী]