কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিশ্বমানের

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

আগামী চার বছরের জন্য কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। নবনিযুক্ত উপাচার্যের সাথে কথা বলে নতুন এ্ই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা পরিকল্পনার কথা জেনেছেন আবুল বাশার মিরাজ

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পাওয়ায় আপনার অনুভূতি ও পরিকল্পনা সর্ম্পকে জানতে চাই?
উপাচার্য: নতুন দায়িত্ব পেয়ে আমি খুবই খুশি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা সঠিক ভাবে পালন করার চেষ্টা করব। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানের করতে যা করা দরকার তা করতে আমি চেষ্টা করবো। উত্তরাঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। উত্তরের কৃষি এবং কৃষক যেন এই বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা উপকৃত হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করবো।

আপনার পড়াশোনা ও একাডেমিক ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম?
উপাচার্য: আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে স্নাতক ও ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। পরে জাপানের গিফু ইউনির্ভাসিটি থেকে প্লান্ট ফিজিওলজি অ্যান্ড বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে পিএইচডি এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল সায়েন্স থেকে পোস্ট ডক্টরাল সম্পন্ন করি। ১৯৯৭ সালে বাকৃবিতে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেই। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০০৫ সালে সহযােগী অধ্যাপক এবং ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাই।

উত্তরবঙ্গ অনেকটাই দারিদ্রপীড়িত এলাকা। কৃষি উন্নয়নের দ্বারা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা বেগবান/তরান্বিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয় কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন আপনি?
উপাচার্য: কৃষি আমাদের দেশের মূল চালিকা শক্তি, উত্তরবঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে হলে সবার প্রথমে কৃষির উন্নয়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষের উন্নতি সাধনে ভূমিকা রাখতে পারবে। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যুগোপযোগী কৃষি শিক্ষা, কৃষি গবেষণা সম্প্রসারণ ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বেগবান করতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান? আপনার স্বপ্ন কী?
উপাচার্য: বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলায় আমার মূল লক্ষ্য। সারা বিশ্ব থেকে এখানে শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসুক আমি এটা আমি চাই। আর এজন্য  আধুনিক কৃষির বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষির সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে গবেষণার মূল বিষয়বস্তু হিসাবে সংযুক্ত  করার চেষ্টা করবো এবং এই অঞ্চলের যুগোপযোগী বিষয়গুলো কোর্স এর ভিতর অন্তভূক্ত করবো। আধুনিক কৃষির যে বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমে যে বিষয়গুলো থাকা উচিত সেটি অন্তভূক্ত করা হবে। এটি নিশ্চিত করা গেলে বিদেশী শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবে বলে আমি মনে করি।  

গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণামুখী শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উপাচার্য: স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো গবেষণায়। স্কুল কলেজে গবেষণা না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হতেই হবে। গবেষণা ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, আর গবেষণা কার্যক্রম সচল না থাকলে সেটিকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায় না। আজকের কৃষির অগ্রযাত্রায় রয়েছে নিত্য নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আধুনিক কৃষি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার ইচ্ছা আছে।  

ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে কি পরিকল্পনা করছেন?
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নেই। আমরা আগামী বছর থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম হাতে নিবো। আগামী বছর সমন্বিত কৃষি গুচ্ছের সাথে যুক্ত হয়ে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চাই।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কিছু ভেবেছেন কি?
উপাচার্য: অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা পরিকল্পনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা গেলে কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যাবে। যারা এটির সাথে সম্পৃর্কযুক্ত তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। সকলের সহযোগিতা পেলে দ্রুতগতিতে সবকিছু তৈরির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন জায়গায় স্থাপিত হতে পারে?
উপাচার্য: কুড়িগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কুড়িগ্রাম বাসীর জন্য হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। আমি দেখেছি, কুড়িগ্রাম বাসী এটি নিয়ে খুবই খুশি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের জন্য জায়গার পছন্দটি আমাদের জানিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে যেটি সবচেয়ে ভালো হবে, সেটিকেই আমরা বেছে নিবো। কুড়িগ্রামের মানুষ খুবই ভালো; অবশ্যই তারা এ বিষয়ে সবাত্নক সহযোগিতা করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ কার্যক্রমে কোন কোন বিষয় যুক্ত থাকবে?
উপাচার্য: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাশ করে বের হন, তাদেরকে বলা হয় কৃষিবিদ। একজন দক্ষ কৃষিবিদ হিসাবে একজন শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে যা যা দরকার তার সবকিছুই পাঠ্য বিষয়ে অন্তভুক্ত থাকবে। তবে চতুর্থ বিপ্লবের সাথে সংগতি রেখে কৃষির প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি যুক্ত করা হবে। এছাড়াও আউটকাম বেসড্ কোর্স কারিকুলাম সংযুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রির সাথে লিংকেজ করে কোর্স কারিকুলাম তৈরি করা হবে।

খরা ও আকস্মিক বন্যা কবলিত এলাকা কুড়িগ্রাম, সেক্ষেত্রে কৃষিকে এগিয়ে নিতে বিশেষায়িত কোন শিক্ষা/ গবেষণার চিন্তা করেছেন কি?
উপাচার্য: জ্বি অবশ্যই। কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ হচ্ছে এখানকার কৃষিকে যেন আরো আধুনিক করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অবশ্যই বিশেষায়িত শিক্ষা/গবেষণা প্রয়োজন, আর আমরা সেটিই করবো। বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি উন্নয়নে যুগোপযোগি গবেষণা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

যতদূর জানি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার সাথে আপনার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক, আপনার অনুপস্থিতে সেগুলোর বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
উপাচার্য: আমি একজন শিক্ষক, শিক্ষক হিসাবে আমার কাজ শিক্ষা ও গবেষণা করা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার শিক্ষা ও গবেষণার যে সম্পর্ক সেটা অবশ্যই অটুট থাকবে। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আগে আমি একজন শিক্ষক, গবেষক এটাই আমি বুকে ধারণ করে কৃষিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবো আজীবন।

বাকৃবিতে স্নাতকোত্তরে আপনার সুপারভিশনে ও পিএইচডিতে অধ্যারণরতদের বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
উপাচার্য: সাময়িক কিছুটা সমস্যা হবে সত্যি তবে আমার বেশির ভাগ গবেষণার কাজই উত্তরবঙ্গের কৃষি বিষয়ক সমস্যার সাথে জড়িত।  এক্ষেত্রে তাদের সুপারভাইজ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না বলে আমি মনে করি।

শিক্ষক, কর্মকর্তানও কর্মচারী নিয়োগের বিষয়গুলো কিভাবে এগিয়ে নিবেন?
উপাচার্য: শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে সাথে দরকার হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সরকারের বিধি বিধান মেনে যোগ্যদেরকেই এখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হলেও সকলে সহযোগিতা করলে এ বিষয়ে কোন সমস্যা হবে না। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজটি করতে চাই।

নতুন স্থাপিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাকৃবিকে অনুসরণ করছে, সেক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কেমন হবে?
উপাচার্য: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি শিক্ষার আইকনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সেরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা অবশ্যই এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করবো। এর পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে স্পেশালাইজইড পাঠ্যসূচি প্রণয়নের পরিকল্পনা করছি যাতে গ্লোবালি এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিত লাভ করতে পারে।

উত্তরবঙ্গের মানুষ হিসাবে আবার উত্তরবঙ্গের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, এই বাড়তি পাওয়াকে কিভাবে কাজে লাগাবেন?
উপাচার্য: প্রথমেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে আমাকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উত্তরবঙ্গের মানুষের সাথে আমার সখ্যতা অনেক। আমি এ অঞ্চলের মোটামুটি সব বিষয়গুলো জানি। আমি মনে করি, এ অঞ্চলের মানুষ হিসেবে, এ মানুষগুলোর সাথে কাজ করাটা অনেক বেশি সহজ হবে। আমি তাদের আরো আপন ও কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবো বলে মনে করছি। তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষি শিক্ষার এ প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভূমিকা রাখতে পারে সবসময় সে চেষ্টা করে যাবো।

প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে কোন অন্য কাজকে আপনি বিশেষভাবে জোর দিতে চান?
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ শিক্ষা ও গবেষণা করা। আর এটি যেন দ্রুতগতিতে শুরু করা যায় সেটিই বিশেষভাবে জোর দিতে চাই। এছাড়াও সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি যাতে একেবারেই পরিকল্পনা মাফিক করা যায় তাহলে এ অঞ্চলের একটি নয়ানিভিরাম ক্যাম্পাস হবে বলে মনে করি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। যথেষ্ট রিমাণ বিদেশী শিক্ষার্থী যাতে এখানে আসতে পারে এবং কিছু কিছু বিষয়ে বিদেশী শিক্ষককে যুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়াও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে অত্যাধুনিক গবেষণাগার, মাঠ গবেষণাগার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, উপযোগী জার্মপ্লাজম সেন্টারসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিসার্চ হাব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন agrilife24.com এর বাকৃবি প্রতিনিধি আবুল বাশার মিরাজ