ভবিষ্যত কৃষি প্রকৌশলীদের ভাবনা

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষিতে আধুনিক প্রকৌশল প্রযুক্তি একান্ত অপরিহার্য। এটি উপলব্ধি করেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৯৬৪ সালে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। এ অনুষদে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভাবনা জেনেছেন আবুল বাশার মিরাজ

সাকিবা আক্তার লাবন্য:নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবান মনে হয় কারণ আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে ভর্তি হতে পেরেছি। ক্যারিয়ার নিয়ে প্রথমে সন্ধিহান থাকলেও এই অনুণদে ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারলাম তার প্রশস্ততার গল্প। অপার সম্ভাবনার দুয়ার এই অনুষদ। দেশের অর্থব্যবস্থার অন্যতম উৎস কৃষি এবং এই কৃষিকে যখন আধুনিকায়ন করা হবে মেশিনারির সাহায্যে তখন সম্ভাবনা ত অফুরন্ত হবেই। অনুষদের শিক্ষক শিক্ষিকাও অনেক শিক্ষার্থীবান্ধব। হাতে কলমে সকল প্র‍্যাক্টিকাল শিক্ষার ব্যবস্থা, ফিল্ডে থেকে অগ্রগতি অনুধাবন সহ আরো বিভিন্ন কারণে এই বিষয়ের পড়াশোনা হয়ে উঠেছে দারুণ উপভোগ্য। শিক্ষার্থীরা মজার ছলেই ওয়েল্ডিং করা, কামারশালার কাজ, সিভিল ড্রয়িং, ধান চাষের প্রয়োজনীয় কাজ শিখে নিচ্ছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের বাড়তি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষির মেকানাইজেশন খুবই প্রয়োজন। এবং এর বাস্তবিক রুপ দিতে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

ইসরাত জাহান: ভর্তিযুদ্ধ পরীক্ষার শুরু থেকেই বাকৃবির অনেক সুখ্যাতি শুনেছি।বাংলাদেশের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাকৃবি বরাবরই অর্জন করে এসেছে  শীর্ষস্থান।তাই এখানে (বাকৃবি) পড়ার ইচ্ছাও ছিলো প্রবল। চান্স পেলাম কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে। ব্যাস ভর্তি হয়ে গেলাম। কিন্তু ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারী ওরিয়েন্টেশনের দিন থেকেই শুনতে হচ্ছিলো এই অনুষদে বিসিএস কোটা নাই। সরকারি চাকরির সুযোগ অন্যান্য অনুষদের তুলনায় অনেক কম। শুরু হয়ে গেলো চিন্তা। কিন্তু একে একে  যখন ক্লাসগুলো করতে শুরু করলাম তখন বুঝতে পারলাম যে দেশের মূল চালিকাশক্তি কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরনের আওতায় আনা খুবই জরুরি এবং এ কাজের গুরু দায়িত্ব আমাদের  কৃষি প্রকৌশলীদের ওপরেই। এ অনুষদের সকল শিক্ষকগন আমাদেরকে সবসময় হাতে কলমে সকল বিষয় শিখিয়ে যাচ্ছেন যাতে আমরা প্রকৃত কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। তারা যেভাবে বর্তমানে তাদের শিক্ষা,জ্ঞান ও গবেষনা দিয়ে দেশকে এগিয় নিয়ে যাচ্ছেন ঠিক একইভাবে আমরাও যেন দেশের জন্য কাজ করতে পারি সে প্রচেষ্টাই করেন তারা নিত্যদিন। তাই এখন আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একজন ক্ষুদ্র কান্ডারি হিসেবে এবং কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ আমাকে এ মহান কাজের সুযোগটি করে দিয়েছে।

শিলমুন নাহার মুন: ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো প্রকৌশলী হওয়ার। সেই ইচ্ছা পূরণ হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে ভর্তি হয়ে। অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতোই পড়াশুনা। শিক্ষকরাও অনেক হেল্পফুল। এখানে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হবে । কিন্তু সরকারী চাকরির সুযোগ থাকলেও খুব সামান্য। বিসিএস এ কৃষি প্রকৌশল বিষয়ে টেকনিক্যাল ক্যাডার থাকলে বাংলাদেশের মত কৃষি প্রধান দেশে কৃষির আরও আধুনিকায়ন করা সম্ভব হবে।

মো আমান উল্লাহ: কৃষিখাতে আধুনিকায়ন করতে হলে প্রয়োজন পড়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এজন্য দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অংশ কৃষি প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর  বড় ভাইদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হয়। রেজাল্ট খারাপ হবে এই ধারনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়। পড়ালেখার চাপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, ওয়ার্কশপ, অ্যাসাইনমেন্ট প্রাক্টিক্যাল নিয়ে সারাদিন শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আধুনিক ল্যাবরেটরি ও ওয়ার্কশপে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে থাকেন। ডিগ্রি শেষ করার পর নামের শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার যুক্ত হবে বলে এই অনুষদের শিক্ষার্থীদের দিন শেষে কিছুটা হলেও মানসিক প্রশান্তি বিরাজ করে।