একজন জীবন্ত কিংবদন্তী প্রফেসর আমির হোসেন

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

ড. মাছুমা হাবিব:প্রফেসর মোঃআমির হোসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট(জিটিআই) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কে যারা দেশে বিদেশে পরিচিত করেছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন ভালো শিক্ষক এর যতগুলো গুণাবলী থাকার কথা সবগুলোই তারমধ্যে বিদ্যমান আছে। একটা ক্লাস কে ছাত্রদের সামনে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সবগুলো বিষয় উনি অনুসরণ করেন। যারা স্যারের ক্লাস করেছেন তারাই শুধু বলতে পারবেন স্যার কেমন ক্লাস নিয়ে থাকেন। আমার দেখা একজন আলোকিত শিক্ষক -যিনি নিজে প্রাণবন্ত এবং উজ্জীবিত থাকেন এবং ছাত্রদের মাঝেও তা ছড়িয়ে দেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত সবাই তার ক্লাস শুনতে থাকে। কখন যে সময় চলে যায় কেউ বুঝতেই পারেনা।

বলছি প্রফেসর আমির হোসেন স্যারের কথা। স্যার চাকুরী থেকে অবসরে এ গেছেন দীর্ঘদিন হলো। তিনি এখন সুদূর আমেরিকায় বসবাস করছেন। অল্প ক'দিনের জন্য দেশে এসেছেন। জিটিআই তে ১৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় এর ২৫ জন শিক্ষককে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ২৬ তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং চলছিল (৪-৩০ ডিসেম্বর, ২০২১) । কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ব্যস্ততা বেশ ছিল। কোন দিকে মনোযোগ দেওয়ার কোন ফুসরত পাচ্ছিলাম না।

স্যার, ভাবি এবং তাদের মেয়ের পরিবারকে নিয়ে জিটিআই তে এসেছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে ফোন ও দিয়েছিলেন। কিন্তু  ব্যস্ততার কারণে হোয়াটসঅ্যাপের কলও খেয়াল করতে পারিনি। পরদিন সকাল ৯টার দিকে ট্রেনিং ক্লাস রুমে ছিলাম, আমার রুম খোলা ছিল। স্যার এসে আমার রুমে বসেছেন। আমাদের একজন অফিস সাহায্যকারি ক্লাসরুমে গিয়ে আমাকে বললেন,  মনে হয় একজন বয়স্ক প্রফেসর এসেছেন, আপনাকে খুঁজছেন। আমার কাছে মনে হলো, তাহলে কি আমির হোসেন স্যার এসেছেন? আমি এক দৌড়ে ক্লাস রুম থেকে আমার চেম্বারে চলে আসলাম। এসে দেখি, সত্যি সত্যি স্যার আমার রুমে বসে আছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। স্যারকে আমি কতখানি শ্রদ্ধা করি তা আমি বলে বা লিখে বোঝাতে পারবো না। কত কিছু যে শিখেছি স্যারের কাছ থেকে। স্যারের সান্নিধ্যে কিছুটা সময় থাকলেই অনেক জ্ঞান আরোহন করা যায়।

জিটিআই-এর প্রতিটা প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ প্রফেসর আমির হোসেন স্যারের কথা, বিভিন্ন রিসোর্স পারসন এর মুখে শুনে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় উনার গল্প প্রশিক্ষণার্থীরা প্রথম দিন থেকে শুনে আসছিলেন। বিশেষ করে "টিচিং মেথডস অন্ড টেকনিক্স" এই মডিউলে স্যারের  উদাহরণ সব সময় এসে যায়। এই মডিউলের পথিকৃৎ তিনি।  



যাহোক, স্যারকে নিয়ে গেলাম ক্লাসে। ক্লাসে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলাম। পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। কত কথা কত স্মৃতি মনে পড়ছিল স্যার কে ঘিরে। ভাবলাম শারীরিক কারণে আজ বোধহয় স্যার বসেই ক্লাস নেবেন। কিন্তু ক্লাস শুরু করার পর পরই উনি ওনার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে উঠে দাড়ালেন। সেই পরিচিত হাসিমুখ, অসাধারণ অঙ্গভঙ্গি, হাস্যরস, জীবন থেকে নেয়া সব উদাহরণ, অগাধ পাণ্ডিত্য- মুগ্ধতা ছড়ালেন নবীন শিক্ষকদের মাঝে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো গবেষণা বা প্রকাশনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতিতে কাজে লাগে বা বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু ক্লাস রুমে সুন্দরভাবে পড়ানোর জন্য আলোকিত শিক্ষকদের  মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকলে খুব ভাল হত। প্রফেসর আমির হোসেন স্যার তথা এই জীবন্ত কিংবদন্তির জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।

লেখিকাঃ প্রফেসর ও সাবেক পরিচালক, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ