পুষ্টি নিরাপত্তা ও টেকসই নিরাপদ সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনায় করনীয়

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষৎ
ভালো উৎপাদন, ভালো পুস্টি
একটি ভালো পরিবেশই একটি উন্নত জীবন,
ড. জগৎ চাঁদ মালাকার:"Our actions are our future. Better production, better nutrition, a better environment and a better life" উপরোক্ত প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে।

১৬ অক্টোবর ১৯৮১-৮২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে (এফএও) বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। এই দিবসটির উদ্দেশ্য সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে ক্ষুধা ও অপুষ্টি তথা খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা এবং সমস্যামুক্ত একটি সচেতন সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা। এ অবস্থায় উপনীত হতে হলে দরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা এই পাঁচটি উপাদান একান্তই দরকার। সামগ্রিকভাবে একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে সে দেশের মোট খাদ্যর প্রাপ্যতা, জনগণের খাদ্য ক্রয়- ক্ষমতা এবং খাবার গ্রহণের উপর (সুষম বন্টন)। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ধান ও শাকসবজির উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম স্থান অধিকার করে কৃষি উন্নয়নের উজ্জল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমান উৎপাদন পরিস্থিতিতে ধান বাদে অন্যান্য ফসল গম, তেলবীজ ও ডাল উৎপাদন আমাদের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া প্রাপ্যতা থাকলেও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে জনগণ কিনতে পারবে না। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার ৫৩% আমরা পাই দানাদার খাদ্যশস্য থেকে যা দৈনিক ২১২২ কিলো-ক্যালোরীর ৭৫% ভাগ। বাকি ২৫ ভাগ কিলো-ক্যালোরী আসে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও তেল থেকে। আমাদের প্রতিদিন ৮৫ গ্রাম ফল এবং অন্যান্য শাকসবজি খাওয়া উচিত ২৫০ গ্রামের বেশী। আমরা খেয়ে থাকি পাতা জাতীয় ২৩ গ্রাম, পাতা জাতীয় ছাড়া ৮৯ গ্রাম এবং আলুসহ শাকসবজি ১১০ গ্রামের মত যার মধ্যে প্রায় ৭০ গ্রাম আলু, ফল ১৪ গ্রাম । আমাদের খাদ্য তালিকায় ফল ও শাক সবজি খুবই কম থাকে।

বসতবাড়িতে ফল, শাক সবজি ও মসলা চাষের গুরুত্ব
স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন মাথাপিছিু ২৫০ গ্রামেরও বেশি সবজি খাওয়া প্রয়োজন। সারা বৎসর টাটকা ফল, শাক সবজি ও মসলা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। শাকসবজি থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়। গ্রামীন জনগোষ্ঠির সবচেয়ে বেশি অভাব হচ্ছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, লৌহ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন। বাংলাদেশে শতকরা ৪২ ভাগ শিশু অপুষ্টিতে ভূগছে। অপুষ্টিজানিত কারণে রক্তশূন্যতা, মুখের ঘা, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, বেরিবেরি, গলগন্ড ইত্যাদি রোগ হয়। ভিটামিন এ’র অভাবে শিশুর রাত কানা রোগ হয় এবং শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাজার থেকে সংগৃহিত বেশিরভাগ সবজিতে লুকায়িত কীটনাশকের বিষক্রিয়া মানব স্বাস্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এজন্য আমাদের সকলেরই বাড়ির আশে পাশে পড়ে থাকা পতিত/অব্যবহৃত জমিতে পরিবারের সদস্যদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে পারিবারিক সবজি বাগান করতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে  নিজের পছন্দ মত এবং টাটকা সবজি পাওয়া সম্ভব। আমাদের দেশে বসতবাড়ি আছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ। শাক সবজি,মসলা ও ফলের চাষ করে বসত বাড়িকে পরিনত করতে হবে একটি সুন্দর স্বাবলম্বি বাড়িতে। কারণ উক্ত বাড়ি হতে পারে আমাদের সুষম খাদ্য ভান্ডার।পারিবারিক আয় বিশেষ করে মহিলাদের আয়ের সুযোগ তৈরী হয়।অবসর সময়ে কাজ করার সুযোগ তৈরী হয়।নিজের উৎপাদিত সবজি খেয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। প্রতিবেশিকে সবজি বিতরনের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।

আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, অপরিকল্পিতভাবে নানান গাছ-গাছড়া দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে। এতে করে বাড়িতে তেমন আলোবাতাস পড়েনা আবার কোথায় কোথায় ফাঁকা পতিত পড়ে আছে যেখানটা সহজেই আবাদের আওতায় আনা যায়। এতে করে আমাদের বসতবাড়ির উৎপাদন ভীষণভাবে ব্যাহত হয়। এই অসুবিধা দূর করে বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থানসমূহের সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সহজেই উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বসতবাড়ির ১২ টি স্থানে, কোন স্থানে কোন সবজি,মসলা ও ফল করা যায়
আমাদের দেশের মাটি বিভিন্ন মসলা যেমন আদা, হলুদ, সবজি ও ফল চাষের জন্য উপযোগী। বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থানসমূহের যারা ব্যবহার না করে প্রতি বছর আমাদের বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলা ও ফল আমদানি করতে এতে দেশের অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়,তাই আদা, হলুদ, সবজি ও ফল চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে অথবা দেশ প্রেম থেকে আক্ষেপ করে অনেকে বলে থাকেন ‘আদা কিনে খায় গাধা -হলুদ কিনে খায় বলদ’ প্রচলিত আছে প্রবাদ আছে যে,‘বসতবাড়ির আশে পাশে ভরে দে ভ্ইা সবজি,মসলা ও ফল চাষে’  তাই বলতে ইচ্ছে করে ‘দয়াল বাবা কলা খাবা গাছ লাগাইয়া খাও’।

বসতবাড়ির ১২ টি স্থানে, কোন স্থানে কোন সবজি,মসলা ও ফল করা যায় তার একটি বাস্তব ধারনা

রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান/খোলা জায়গাঃ বিভিন্ন প্রকার পাতা জাতীয় সবজি (পুঁই শাক, লাল শাক, পালং শাক, কলমিশাক, বাটি শাক), বেগুন, টমেটু ইত্যাদির বেড করে আবাদ করা সম্ভব। ছায়াযুক্ত/অর্ধছায়াযুক্ত স্থান/ মাচার নীচেঃ আদা, হলুদ, বিলাতী ধনিয়া। স্যাঁতস্যাতে স্থানঃ বিভিন্ন প্রকার কচু। মাচায়/পুকুর পাড়ে মাচায়:বিভিন্ন প্রকার কুমড়া জাতীয় সবজি, পুঁই শাক, শীম, বরবটি ইত্যাদি। ঘরের চালেঃ চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, দেশী সিম, পুঁইশাক ইত্যাদি। বেড়া/প্রাচীরঃ প্রকার কুমড়া জাতীয় সবজি, পুঁই শাক, শীম, বরবটি ইত্যাদি। ঘরের পীড়ায়ঃ পেয়ারা, ডালিম, সজিনা, পেঁপে, বেগুন, বারমাসী মরিচ, মান কচু, ফেন কচু, দুধ কচু ইত্যাদি। বাড়ির সীমানায়ঃ সজিনা, পেঁপে ইত্যাদি। গর্তে নীচু জায়গায়: পানি কচ, হেলেঞ্চা। অফলা গাছে: মেটে আলু, মৌসীম, চুই,ধন্ধুল, গাছ আলু। পতিত জায়গা: লেবু, কুল। পুকুর পাড়ে: লেবু,পেয়ারা ইত্যাদি।

সবজি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা:
সবজি সবসময় টাটকা খেতে হবে। সবজি কাটার পর ধোয়া যাবে না। কাটার পূর্বে সবজি ধুয়ে নিতে হবে। সবজি কাটার পর ধুয়ে নিলে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-বি ও সি এবং খনিজ লবণ চলে যাবে। সবজিতে অবস্থিত ভিটামিন এ, ডি, ই, কে আমাদের শরীরের জন্য গ্রহণোপযোগী করতে হলে সবজি কে তেল দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। রঙ্গিন সবজিতে উক্ত ভিটামিনগুলো প্রচুর পরিমাণে থাকে।

ভিটামিন গুলোর কিছু উপকারী দিক:

ভিটামিন বি-২ এর অভাবে ঠোঁটের কিনারায় ঘা হয় এবং বি-এর অভাবে শারিরিক দুর্বলতা হয় এবং মাংস পেশী চাবায়। ভিটামিন-সি’র অভাবে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে। বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে এবং স্কার্ভি রোগ হয়।
ভিটামিন-এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। দীর্ঘদিন রাতকানা থাকলে শিশু অন্ধ হয়ে যায়।
ভিটামিন-ডি’র অভাবে শিশুর হাড়গোড় শক্ত হয় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শিশুর রিকেট রোগ হয়। শিশুকে রোর্দ্রে রাখলে এর অভাব পূরণ হয়।
ভিটামিন-ই’র অভাবে মানুষের যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সন্তান ধারন এবং জন্ম দিতে পারে না। ভিটামিন-ই ত্বক ও চুল সুন্দর করে থাকে।
ভিটামিন-কে - এর অভাবে শরীর কেটে গেলে সহজে রক্ত জমাট বাধবে না।

খাদ্যমান বজায় রাখার কৌশল:
মাছ-মাংস (বড় টুকরা), ডাল অল্প তাপে একটু সময় নিয়ে রান্না করলে এগুলোর আমিষ জমাট বাঁধতে সুবিধা হয় এবং হজমে সুবিধা হয় তাড়াতাড়ি এবং বেশি সিদ্ধ করলে খাদ্যের পুষ্টিমান কমে যায়। মাছ ভাজার সময় তেলে ডুবে ভাজতে হবে তা না পুষ্টিমান কমে যাবে। ডিম ভাজার সময় ঢেকে দিতে হবে তা না হলে ভিটামিন বি-২ নষ্ট হয়ে যাবে। দুধ সহজেই জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয় বিধায় কাঁচা দুধ বা একবার ফুটানো ঠান্ডা দুধ খেতে হলে আবার ১০ মিনিট ফুটিয়ে পান করুন। সূর্যের আলোতে দুধের ভিটামিন বি-২ নষ্ট হয়ে যায় বিধায় দুধ ছায়ায় সরংক্ষন করুন। তাপে দুধের পুষ্টিমান নষ্ট হয় না।

যে সকল সবজি কাঁচা খাওয়া যায় সেগুলো কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করুন পুষ্টিমান বজায় থাকবে। রান্নার ফলে চর্বি-জাতীয় খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় থাকে। তবে ভাজা তেল বার বার ব্যবহার না করাই যুক্তিযুক্ত। কারণ উক্ত তেলে এক ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য তৈরি হয় যা পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। গমের তৈরি আটা/ময়দাতে বেকিং পাউডার মিশিয়ে মচমচে খাবার তৈরীর সময় ভিটামিন বি-নষ্ট হয়ে যায়। বিধায় বেকিং পাউডার ব্যবহার সীমিত করুন।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন:
খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার, সুষম খাদ্য ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তন একান্তই জরুরী, আমরা খেতে পারি চালের বিকল্প হিসেবে গম, ভুট্টা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উক্ত খাবার হিসেবে জনগণ গ্রহণ করে আসছে।

গম: ধানের পরে গমের অবস্থান। গম চাষে ধানের চেয়ে ৩-৪ গুন পানি কম লাগে। খরচ কম এবং রোগ বালাই কম হয়। বর্তমানে শহর ও গ্রামে সকলের মধ্যে গমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
ভুট্টা: ভুট্টা চাষে ধানের তুলনায় পানি কম লাগে। ক্রমবর্ধমান পোল্টি শিল্পে প্রচুর বব্যহার হয়। শতকরা ৪০ ভাগ ভূট্টা+৬০ ভাগ আটা দিয়ে তৈরি রুটি উৎকৃষ্ট মানের হয়। ভুট্টা সহজেই এদেশে চাষ করা যায়। ক্রমবর্ধমান পোল্টি শিল্পে এটি ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
আলু: ৪০টি দেশের প্রধান খাদ্য। আলু পুষ্টি সমৃদ্ধ প্রচুর পুষ্টি, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে। আলু দিয়ে ফ্রেন্সফ্রাই, ম্যাশত, পটেটো, চিপস, আলুর ময়দা, পটেটো ফ্লেক্সা, আলু রুটি, লুচি, পুরি, আলু সবজি, খিচুড়ি, আলুর ডাল, চপ, সিঙ্গারা ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
মিষ্টি আলু: পুষ্টিমান গোল আলুর চেয়ে কম নয়। এটা আমরা সবাই খাবার হিসেবে গ্রহণ করে গরীবের খাদ্য এই অপবাদ ঘুচাতে পারি।
শাকসবজি: আমাদের খাদ্য তালিকায় ভাত ও শাকসবজির অনুপাত ৫ঃ১। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে ২ঃ১। আমরা খাবারে শাকসবজি বেশি করে গ্রহন করে, দানা জাতীয় খাদ্যের চাপ কমাতে পারি এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারি।
দেশীয় ফল: আমরা যদি বেশি করে মৌসুমের ফল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তবে সহজেই সুস্থ থাকতে পারবো এবং এতে অন্যান্য খাদ্যের উপরে চাপ কমে যাবে।

বাংলাদেশে একটি জনবহুল দেশ। এদেশে উৎপাদন বৃদ্ধি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম। এই জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতির আলোকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং তার উন্নয়ন সহযোগিদের নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি ব্যাপক জনগোষ্ঠির ধারণা নিতে হবে খাদ্য পুষ্টি সম্পর্কে এবং পরিবর্তন করতে হবে খাদ্যাভাস, তবেই সম্ভব হবে খাদ্যে নিরাপত্তা।

বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন আমাদের গ্রামগুলোতে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মানুষের জীবযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় অনেকেই বসতবাড়িতে আগের মত সবজি আবাদ করছে না। সবজির ব্যাপক চাহিদার কারনে বাজারে এখন সবজির উচ্চমূল্য যা অনেক সময় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যায় বলে বেশির ভাগ মানুষ সবজি বাজার থেকে কিনে খেতে পারে না। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে গ্রামের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কৃষক/কৃষাণীদেরকে সবজি,ফল ও মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

উপসংহার:
আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এদেশে প্রায় ১৩০ প্রজাতির ফল উৎপাদিত হয়ে থাকে তার মধ্যে প্রায় ০৯টি প্রধান। দেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ২.৫% বর্তমানে ফল আবাদের আওতাধীন। দেশের মোট ফল উৎপাদনের প্রায় ৫২% উৎপাদিত হয় বৈশাখ থেকে শ্রাবন মাসে। বাকী ৪৮% ফল আবাদ হয় বছরের অবশিষ্ট ০৮ মাসে এবং শীত মৌসুমে দেশে ফলের আবাদ সবচেয়ে কম। অথচ আমাদের দেশে এখনো বসতবাড়ীতে পরিকল্পিত ভাবে ফল আবাদ করে বার মাসই আমরা নিজেদের ফলের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি  আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি।

এতে করে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি,মসলা ও ফল পাওয়া সহ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।উত্তম কৃষি পদ্ধতি সামগ্রিক কৃষি কার্যক্রম যা অনুসরণে নিরাপদ এবং মান সম্পন্ন খাদ্য ও খাদ্য বর্হিভূত কৃষিজাত পন্য সহজলভ্য, পরিবেশ সুরক্ষা, অর্থনীতি এবং সমাজ সুসংহত হবে। আহবান জানাচ্ছি সকলকে, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ফুড সিস্টেম কে নিরাপদ করতে হলে আমাদের দেশে এখনো বসতবাড়িতে পরিকল্পিত ভাবে নিরাপদ মসলা, শাক সবজি ও ফল আবাদ করে বার মাসই আমরা নিজেদের মসলা, শাক সবজি ও ফলের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি  আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি।

আমাদের মাটি ও পরিবেশ ফল, শাক সবজি ও মসলা উৎপাদনের সহায়ক। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় হতে পারে সুন্দর সবজি বাগান। সেখানে চাষ করা যায় লালশাক, ঢেড়স, ডাটাশাক ইত্যাদি। ঘরের চালে, বেড়ায়, মাচায় করা যায় লাউ, সিম, বরবটি, কাঁকরোল, করল্লার ইত্যাদি চাষ। প্রতিটি বাড়িতে ২-৩ টি পেঁপে গাছ, লেবু, আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমলকি ইত্যাদি লাগানো যেতে পারবে। ফল ও সবজি চাষ করলে নিশ্চিত হবে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিয়ামক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার।

আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষৎ, ভালো উৎপাদন, ভালো পুস্টি,একটি ভালো পরিবেশই একটি উন্নত জীবন দিতে পারে বিধায় সকলকে এব্যাপারে সজাগ হবার আহবান জানাচ্ছি। আহবান জানাচ্ছি সকলকে, আসুন ক্ষুধা-দরিদ্র্যের হাত থেকে বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে নিরাপদ সুষম খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমাদের মেধা, শ্রম, সততা, সচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়িত্ববোধ ও বিনিয়োগকে (অর্থ) কাজে লাগিয়ে এই পৃথিবীকে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করি।

লেখক: ড. জগৎ চাঁদ মালাকার
উপপরিচালক (এল.আর),সংযুক্ত-উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং,
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।
ইমেইল: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.