তারুণ্যদীপ্ত মেধাসম্পন্ন জাতি তৈরিতে- প্রতিদিন একটি করে ডিম

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

কৃষিবিদ ডক্টর এস এম রাজিউর রহমান:সারাদেশে গতকাল ৮ই অক্টোবর পালিত হলো বিশ্ব ডিম দিবস। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়। এ বছর এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো "Eat your egg today and every day" অর্থাৎ আজ এবং প্রতিদিন আপনি ডিম খান। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানব স্বাস্থ্যে ডিম খাওয়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা বোঝানো। ১৯৯৬ সালে International Egg Commission (ICC) অস্ট্রিয়ার ভিয়ানায় এক সভায় বিশ্ব ডিম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ব ডিম দিবস পালনের বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে।

"ডিম খেলে ডিম পায়" প্রবাদটি একটি কুসংস্কার নাকি সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে, সে বিতর্কে না গিয়ে ডিম খাওয়ার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখাটি উপস্থাপিত হলো। আগে মা-দাদীরা পরীক্ষায় যাবার আগে সন্তানকে ডিম খেতে দিতেন না, পরীক্ষায় সন্তান যেন ডিম (শূন্য) না পায়। আবার এক সময় বলা হতো বেশি ডিম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এই মতবাদ বিজ্ঞানীরা এখন পাল্টে ফেলেছেন। সম্প্রতি- চীনের প্রায় ৫ লাখ লোকের উপর এক গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন; প্রতিদিন একটা করে ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

মেধা সম্পূর্ণ সুস্থ জাতি গঠনে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া আবশ্যক। আমাদের অনেকেই ভুল ধারণা প্রসূত ডিমের কুসুম না খেয়ে শুধু সাদা অংশ খাই। অথচ ডিমের কুসুমে রয়েছে এন্টিবডি যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন জীবাণু ঘটিত রোগ প্রতিরোধ করে। ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ডিমের কুসুমের কলিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সঠিক রাখে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। কুসুমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটিন এবং জেকসানথিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডিমে প্রাপ্ত ভিটামিন-এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া রোধ করে। ডিমে কোলেস্টেরল থাকলেও তা রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে না। বরং রক্তের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে (এইচডিএল)। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

ডিমের বায়োলজিক্যাল ভেলু ৯৪% বা এর অধিক হওয়ায়, আমাদের অধিক সময় কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে। ডিমের পুষ্টিমান শিশুদের মেধা বিকাশ, গর্ভবতী মহিলার পুষ্টি নিশ্চিত, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখা, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়,সর্বোপরি মানুষকে কর্মক্ষম রাখে। তাই কুসংস্কার ভুলে সম্পূর্ণ কুসুমসহ প্রতিদিন একটি করে ডিম খাই, নিজেকে সুস্থ রাখি, তারুণ্য ধরে রাখি,মেধা সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরি করি।

লেখক:সাবেক অ্যাসোসিয়েট পোল্ট্রি এডভাইজার
ইটালি-সোয়াজিল্যান্ড, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা