কৃষি পণ্যে মূল্য সংযোজন ও আন্তর্জাতিক বাজার প্রাপ্তির সম্ভাবনা

Category: গবেষণা ফিচার Written by agrilife24

ড. জগৎ চাঁদ মালাকার:ভোক্তার সন্তুষ্টি অজর্নের এবং লাভের আশায় কোন কৃষিপণ্য আহরণ/ক্রয়ের পর এর উপর বাড়তি কাজ করা করাকে /পণ্যের খরচের উপর বাড়তি মূল্য যোগ করাকে মূল্য সংযোজন বলে। প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা এবং প্রতিযোগীর উপর বাড়তি সুবিধা অর্জন করে ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জন করাই হলো মূল্য সংযোজন। মোটামুটি ভাবে বলা যায়-ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জন, প্রতিযোগী থেকে এগিয়ে থাকা,পণ্যের বেশী মূল্য পাওয়া। সুতরাং বাজারজাত করার পূর্বে বাজারে (4ps of marketing) মানসম্মত কৃষিপণ্য (products), সুবিধাজনক মূল্য (price), স্থান-আন্তর্জাতিক বাজার(place) and প্রচারেই প্রসার (promotions) বিষযগুলো গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

মূল্য সংযোজন করতে কি কি বিষয়ে করতে হবে-বাংলাদেশে অধিকাংশ ফল ও সবজি গ্রেডিং না করে ছোট ও বড় একসঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়।বিধায় পণ্যের বেশী মূল্যপাওয়ার জন্য গ্রেডিং, প্যাকিং, শুকানো, বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ, আগাম উৎপাদন,পরিষ্কারকরণ, একত্রিকরণ, সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি, ক্লোরিন দ্বারা ধৌতকরণ,গুদামজাতকরণ, দ্রুত পরিবহণ করা প্রয়োজন।

যে যে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন -বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপন্য রপ্তানি করতে হলে উৎপাদনকালিন সময়ে Good Agricultural Practices (GAP) নিশ্চিত করা জরুরি, সেইসাথে ঝুঁকিমুক্ত স্বার্থে রপ্তানীর পূর্বে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা পুর্ব্বক প্রত্যায়ন/সনদ নেয়া প্রয়োজন।উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করা চুক্তিবদ্ধ কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত কৃষি পণ্য  প্যাকিংহাউজে ফল ও সবজি আনার পর প্রথমেই বাছাই করে বাজারজাত করা যাবে না এমন পণ্য বাদ দিতে হয়। বাছাই করার সময় অপরিপক্ক, বেশি পরিপক্ক, বেশি ছোট, বাঁকা, থেঁতলানো ও নষ্ট পণ্য বাদ দিতে হয়। বেশি ছোট পণ্য বাছাই করার জন্য চালনি ব্যবহার করা যায়। উন্নত প্যাকিং হাউজে চওড়া কনভেয়ার বেল্টের উপর দিয়ে পণ্য যেতে থাকে।

পণ্য ধোয়ার কাজটি ট্যাপের পানি দিয়ে করা উচিত। বদ্ধ পানিতে ধুলে আগে ধোয়া পণ্যের ময়লা ও জীবাণু পানিতে থাকে যা পরবর্তীতে ধোয়া পণ্যে লেগে যায় বলে ধোয়ার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো মাঠ পর্যায়ে আমাদের দেশে ফল ও সবজি ধোয়ার কাজটি প্রায় কখনোই ট্যাপের পানি দিয়ে করা হয় না। রাস্তার পাশের নর্দমা, ডোবা, নদী, প্রভৃতি অধিকাংশ সময়ই বিষাক্ত বর্জ্যে পূর্ণ থাকে। এরূপ পানিতে ধোয়া সবজিতে বাজার পূর্ণ থাকে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। প্লাস্টিক ক্রেট ছিদ্রযুক্ত থাকে বলে এতে পণ্য রেখে ট্যাপের পানিতে বা হোস পাইপের পানি দিয়ে ক্রেটের সবজি ও ফল ধোয়া সহজ। আম পাড়ার সময় বোঁটা রাখা হয় না বলে এর গোড়া থেকে কস বেরিয়ে আমের গায়ে লেগে থাকে। এটা পরবর্তী সময় শুকিয়ে গায়ে লেগে থাকে বলে আম খারাপ দেখায় এবং জীবন কাল কমে যায়। সেজন্য আম ভালো করে ব্রাশ বা অনুরূপ কিছু দিয়ে ধোয়া উচিত। তিন মিনিটের বেশি পানিতে রাখলে কোনো কোনো সবজির ভেতরে পানি ঢুকে গুণগত মান কমিয়ে দিতে পারে। সেজন্য দ্রæত এগুলি ধোয়া উচিত। ধোয়ার পর ফ্যানের বাতাস দিয়ে পণ্য শুকাতে হয়।

আমাদের দেশে গ্রেডিং করা ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও উন্নত দেশসমূহে একে শস্য সংগ্রহোত্তর পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং কাজটি প্যাকিংহাউজের অন্যতম প্রধান কাজ। গ্রেডিং প্রধানত দুই প্রকার - সাইজ গ্রেডিং এবং কোয়ালিটি গ্রেডিং। সাইজ গ্রেডিংকে আবার আকার গ্রেডিং ও ওজন গ্রেডিং এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম মূল্যের আলু গ্রেডার উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর ক্ষমতা প্রতি ঘন্টায় এক টন এবং মূল্য ৩৫,০০০ টাকা (আনুমানিক)। কোয়ালিটি গ্রেডিং কাজটি যন্ত্র দিয়ে করা যায় না। প্যাকিংহাউজের কর্মীগণ এ কাজটি প্রতিটি ফল চোখে দেখে গ্রেডিং করেন। বাংলাদেশে সাধারণত মাঠ পর্যায়ে গ্রেডিং করা না হলেও শহরের সুপারমার্কেট ও অভিজাত এলাকার বিভিন্ন দোকানে খুচরা পর্যায়ে গ্রেডিং করে তুলনামূলকভাবে ভালো ফল ও সবজি একটু বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

মোড়কীকরণ
ফসল বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে নাড়াচাড়া করা, পরিবহণ ও সংরক্ষণের সুবিধার্থে ফসল মোড়কীকরণ করা হয়। মোড়কীকরণের জন্য ব্যবহৃত মোড়কের নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট থাকা বাঞ্চনীয়:
(১) রাসায়নিকমুক্ত, (২) বাজার চাহিদা অনুযায়ী আকার, আকৃতি ও ওজন, (৩) বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, (৪) সহজেখোলা ও বন্ধ করার ব্যবস্থা, এবং (৫) সুবিধাজনক মূল্য

মোড়কের ধরন
(১) নমনীয় বস্তা: পাটের বস্তা, প্লাস্টিকের বস্তা ও নেটের বস্তা এই শ্রেণীভুক্ত। আলু, মিষ্টি আলু,পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, প্রভৃতি মোড়কীকরণে এ জাতীয় মোড়ক ব্যবহৃত হয়।
(২) কাঠের বাক্স: এটি বাংলাদেশে খুব কমই ব্যবহৃত হয়। এর দাম অনেক বেশি এবং পরিবেশ অবক্ষয় রোধে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। এটিতে বাতাস চলাচলের জন্য ভালো ব্যবস্থা থাকে, তবে তক্তা খসখসে এবং তারকাঁটা থাকে বলে খোসা থেঁতলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাক্সে রং করলে পণ্যে রং লেগে যেতে পারে এবং কাঁচা কাঠ থেকে তৈরি বাক্সে ছত্রাক জন্মাতে পারে।
(৩) কার্টুন: করোগেটেড ফাইবার বোর্ডের তৈরি এটি প্রধানত বিদেশে সবজি পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বাতাস চলাচলের জন্য দেয়ালের গায়ে বিপরীত দিকে ছিদ্র করা হয়। এটি হালকা, নাড়াচাড়া করা সহজ, অনেক তথ্যসম্বলিত লেখা ছাপানো যায়, এবং এর ভেতরে পণ্য ভালো থাকলেও দাম বেশি বলে দেশের ভেতর ব্যবহারের জন্য এটি এখনো মূল্য সাশ্রয়ী নয়। তাছাড়া পানি লেগে সহজেই পণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
(৪) ঝুড়ি: বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় বাঁশ পাওয়া যায় বলে এর তৈরি ঝুড়ি প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। পাতা ও প্লাস্টিক দিয়েও ঝুড়ি তৈরি করা যায়। বাঁশের ঝুড়ি শক্ত হয় বলে ফল ও সবজি মোড়কীকরণের কাজে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়
(৫) প্লাস্টিক ক্রেট" সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশে আম, পেঁপে, টমেটো, প্রভৃতি পরিবহণের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে ২০ থেকে ২২ কেজি ফল/ সবজি ধরে বলে নাড়াচাড়া করা বেশ সুবিধাজনক। প্লাস্টিকের ঘর্ষণে খোসা থেঁতলে যায় বলে ভেতরে খবরের কাগজ দেয়া উচিত। আমাদের দেশের কয়েকটি কোম্পানী এটি তৈরি করছে। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে ফল এতে ভরে আমদানী করা হয়। এটিতে যে পণ্য পরিবহণ করা হয় তা প্রায় নষ্ট হয় না বলে শস্য সংগ্রহোত্তর ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়। এর মূল্য বেশি হলেও কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা যায় বলে প্রতি কেজি পরিবহণ খরচ সবচেয়ে কম।

সংরক্ষণ
বিভিন্ন ফল ও সবজির জীবন কাল খুব কম যা সংগ্রহের পর পরই উপযুক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখলে কয়েক দিন, সপ্তাহ বা মাস ভালো থাকে। বাংলাদেশে প্রধানত কোল্ড স্টোরেজে আলু আট মাস পর্যন্ত রাখা হয়। সীমিত পরিসরে কয়েক মাসের জন্য গাজর রাখা হয়। বিভিন্ন ফসলের জন্য তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বাতাস প্রবাহ ভিন্ন হয়ে থাকে। স্বল্প সময় সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ ব্যতীত বিভিন্নভাবে জীবন কাল বাড়ানোর জন্য গবেষণা করা হয়েছে। বালির মধ্যে, মাটির নিচে, রাতে বাতাস প্রবাহ করে, ইভাপোরেটিভ কুলিং, ইন সিটু সংরক্ষণ, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ ((evaporate cooling)), প্রভৃতির সাহায্যে জীবন কাল কিছুটা বাড়ানো গেলেও তা সব আবহাওয়ায় সব পরিবেশে কার্যকর নয়, ব্যবহার করা সহজ নয় এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উপযুক্ত নয় বলে এগুলি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

পরিবহণ
বাংলাদেশে শস্য সংগ্রহোত্তর ক্ষতি বেশি হয় প্রধানত পরিবহণের সময়। এবড়ো-থেবড়ো ও ভাঙা রাস্তায় ট্রাক চলার সময় অনবরত ঝাঁকুনিতে নরম ফল ও সবজি নষ্ট হয় বেশি। মোড়ক ভালো না থাকলে এবং উপরে খালি থাকলে ঝাঁকুনি বেশি লাগে। সে জন্য কোনো অবস্থাতেই মোড়কের উপরিভাগ খালি রাখা যাবে না। অন্তত কাগজ বা খড় বা অন্য কিছু দিয়ে উপরের অংশ পূর্ণ করতে হবে। বস্তা, বাঁশের ঝুড়ি প্রভৃতিতে পণ্য ভর্তি করে একটার উপর একটি চাপানো হয় বলে নিচের দিকে থাকা পণ্য বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়ে। উপরন্তু পণ্য ভর্তি ট্রাকের উপর লোকজন বসে বলে পণ্য আরো বেশি নষ্ট হয়। প্লাস্টিক ক্রেট ব্যবহার করলে এর নিচের ফল বা সবজির শুধু ঐ ক্রেটের উপরের অংশের দ্রব্যের ভার বহন করতে হয় বলে নষ্ট হয় না।

শস্য সংগ্রহোত্তর সংক্রমন হ্রাস এবং গুনগত মান বৃদ্ধি করা

অনুজীব সংক্রমন হ্রাস পদ্ধতি:
কৃষিপন্য খামার থেকে ভোক্তার টেবিলে আসার পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় রোগজীবানু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। মানুষ এবং অন্যান্য প্রানীর মলমূত্রের সাহায্যে বেশির ভাগ অনুজীব কৃষিপন্যকে আক্রান্ত করে থাকে। যখনই কৃষিজাত পন্য পানির সংস্পর্শে আসে তখনই অনুজীব দ্বারা আক্রান্ত হওয়া না হওয়া পন্যের গুনগত মান এর উপর নির্ভর করে। অর্থ্যাৎ পন্য তরতাজা হলে এই আক্রমনের প্রবনতা কম এবং পন্য যদি তরতাজা কম থাকে তাহলে এই আক্রমনের প্রবনতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এইজন্য পরিস্কার স্বচ্ছ পানিতে পণ্য ধোয়ার কাজটি করা উচিত। বদ্ধ পানিতে ধুলে আগে ধোয়া পণ্যের ময়লা ও জীবাণু পানিতে থাকে যা পরবর্তীতে ধোয়া পণ্যে লেগে যায় বলে ধোয়ার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো মাঠ পর্যায়ে আমাদের দেশে ফল ও সবজি ধোয়ার কাজটি প্রায় কখনোই ট্যাপের পানি দিয়ে করা হয় না। রাস্তার পাশের নর্দমা, ডোবা, নদী, প্রভৃতি অধিকাংশ সময়ই বিষাক্ত বর্জ্যে পূর্ণ থাকে। এরূপ পানিতে ধোয়া সবজিতে বাজার পূর্ণ থাকে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়।

প্লাস্টিক ক্রেট ছিদ্রযুক্ত থাকে বলে এতে পণ্য রেখে ট্যাপের পানিতে বা হোস পাইপের পানি দিয়ে ক্রেটের সবজি ও ফল ধোয়া সহজ। এভাবে পন্য ধোয়া হলে অনুজীব দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুলাংশে হ্রাস পায়। সাধারণতঃ পানিবাহিত রোগজীবানু বিশেষ করে শস্য সংগ্রহোত্তরকালে ফসলের সঙ্গের রোগজীবানু মানুষের শরীরের বিভিন্ন রোগজীবানু প্রভৃতি দ্রুত শাকসব্জিসহ অন্যান্য ফলমূল এবং গাছপালায় সংক্রমিত হয়। প্রাকৃতিকভাবে গাছপালার উপরিভাগে যেসব ফাটল, ছিদ্র, ফসল সংগ্রহকালের জখম প্রভৃতির মাধ্যমে রোগজীবানু দ্রুত সংক্রমিত হয়ে থাকে। এজন্য গরম পানির প্রবাহের মাধ্যমে গুপ্ত আশ্রয়ে থাকা রোগজীবানু দুর করা যায়।

আদ্রশুন্যতা দূরীকরণের পদ্ধতি:
(১) কন্দাল ও কন্দ জাতীয় ফসল ছায়ায় শুকিয়ে আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করা যায় যেমন, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
(২) গায়ে মোম লাগিয়ে পানিশুন্যতা রোধ করা যায়। যেমন, আপেল, লেবুজাতীয় ফল, ডালিম, টমেটো প্রভৃতি।
(৩) পলিথিন প্যাকেজিং এর মাধ্যমে পানিশুন্যতা রোধ করা যায়।
(৪) সাবধানতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করে পন্যকে ক্ষত হওয়া থেকে বাচিয়ে রেখে পানিশুন্যতা অনেকাংশে রোধ করা যায়।
(৫) আলাদাভাবে পাতাজাতীয় শাক-সব্জিতে পানি প্রয়োগের ফলে পানি শুন্যতা রোধ করা যায়।

নিম্নলিখিত উপায়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে:
(১) পিচকারীর মাধ্যমে সব্জিতে পানি ছিটানো (২) সব্জি সংগ্রহের পর অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় রাখা (৩) সব্জি স্থুপীকৃত স্থানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে। (৪) ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যবহার করে সব্জিকে বাঁশের ঝুড়ি অথবা প্লাস্টিকের ক্রেটে সাজিয়ে বাজারে নিতে হবে।


উপসংহার: বাংলাদেশের কৃষি ক্রমেই স্বনির্ভর কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য তথা খাদ্য শস্যের ফলন বৃদ্ধির জন্য উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি অধিক মাত্রায রাসাযনিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এসবেরও ব্যবহার হয। মানব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায নিরাপদ খাদ্য ক্রমাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয উঠেছে। জনগণকে খাদ্যজনিত অসুস্থ্যতা থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিশ্ব রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন জরুরি। উৎপাদনের প্রাথমিক পর্যায থেকে খাদ্য শৃঙ্খলের বিভিন্ন পর্যায়ে বাছ-বিচারহীন বালাইনাশক ও রাসাযনিকের ব্যবহার, ভারী ধাতব পদার্র্থের উপস্থিতি,অণুজীবের সংক্রমণ ইত্যাদি খাদ্যকে অনিরাপদ করে। । উত্তম কৃষি চর্চা নিরাপদ ওমানসম্মত খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ এবং সামাজিক উন্নযনে ভূমিকা রাখে। বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপন্য রপ্তানি করতে হলে উৎপাদনকালিন সময়ে Good Agricultural Practices (GAP)) নিশ্চিত করা জরুরি, সেইসাথে ঝুঁকিমুক্ত স্বার্থে রপ্তানীর পূর্বে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা পুর্ব্বক প্রত্যায়ন/সনদ নেয়া প্রয়োজন।এসব কারণে নিরাপদ খাদ্যপণ্য প্রাপ্যতার বিষযটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায নিয়ে উৎপাদনের শুরু থেকে সংগ্রহ, সংগ্রহোত্তর ও প্রক্রিযাকরণ যেমন-মাঠ হতে সংগ্রহ, প্যাকেজিং, পরিবহন ইত্যাদি পর্যাযয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করা একান্তই প্রয়োজন

প্রবাদ বা কথায় আছে: ব্র্যান্ডিং বা প্রচারেই প্রসার অথবা আসুন মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পৃথিবীর যেখানেই আবস্থান করি না কেন-দেশি কৃষি পন্য কিনে হই ধন্য.
লেখক: ড. জগৎ চাঁদ মালাকার
উপপরিচালক (এল.আর),সংযুক্ত-উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং,
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।
ইমেইল: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.